ভুলে গিয়েছিলাম।তাই দেখছি। জগৎ-সংসার ভুলে যেতে বসেছ। কয়েক দিন পর দেখা যাবে আমার কথাও তোমার মনে নেই।নিশাত কিছু বলল না। গোলাপগাছগুলির অবস্থা সত্যিই কাহিল। পানিও দেওয়া হয় না। টব শুকিয়ে খটখট করছে। সত্যি খুব অন্যায় হয়েছে। তৃষ্ণায় এদের বুকের ছাতি ফেটে যাচ্ছিল, অথচ পানির কথা কাউকে বলতে পারে না। নিশাত গাছগুলিতে পানি দিল। ওষুধ স্প্রে করে দিল। এই ওষুধটা দেওয়ার সময় কেন জানি তার গা কাঁপে। কঠিন বিষ। অথচ কী সুন্দর সোনালি রঙ। ইচ্ছা করে পরিষ্কার ঝকঝকে একটা গ্লাসে ঢেলে এক চুমুকে শেষ করে দিতে।
নিশাত।বল।চল রওনা হওয়া যাক।ডিনারের দাওয়াত, এত তাড়া কিসের।একটু সকাল-সকালই যাওয়া যাক। গল্পগুজব করে ধীরেসুস্থে আবার রওনা হব।সিঁড়ি দিয়ে নামবার সময় নিশাত শুনল পুষ্প কাঁদছে। বেশ শব্দ করেই কাঁদছে। নিশাতের ব্যাপারটা ভালো লাগল না। কান্না হচ্ছে একটি খুবই ব্যক্তিগত ব্যাপার। এমনভাবে কাঁদা উচিত নয় যে অন্য কেউ তা টের পেয়ে ফেলে। কে যেন বলেছিল কথাটি-তুমি যখন হাস তখন দেখবে অনেকেই তোমার সঙ্গে হাসছে, কিন্তু তুমি যখন কাঁদ তখন দেখবে কেউ তোমার সঙ্গে কাঁদছে না। এটা কার কথা? রামকৃষ্ণ পরমহংস, নাকি কবিরের দোঁহা?
সব বিখ্যাত লোকদেরই কি চেহারা খারাপ থাকে? সরদার এ. করিমকে দেখে নিশাতের মনটাই খারাপ হয়ে গেল। একজন নিতান্তই বেঁটে মানুষ, কুঁজো হয়ে চেয়ারে বসে আছে। চোখ দুটি ব্যাঙের চোখের মতো অনেকখানি বের হয়ে এসেছে। চোখের মণি কটা। সবচেয়ে কুৎসিত দৃশ্য হচ্ছে নাকের ভেতরে বড়-বড় লোম বের হয়ে আছে।উকিলদের গলার স্বর ভরাট হবার কথা। কথা বললেই কোর্ট-রুমের সবাই যেন শুনতে পারে। এঁর গলা মোটেই সেরকম নয়। মেয়েদের মতো চিকন গলা। তবে উচ্চারণ অত্যন্ত স্পষ্ট।আপনি ফরহাদ সাহেবের মেয়ে?
জ্বি।আপনার বাবা আমাকে টেলিফোন করেছিলেন।আপনি আমাকে তুমি করে বলবেন। আপনি আমার বাবার বয়সী।বাবার বয়সী সবলোকই কি আপনাকে তুমি করে বলে? জ্বি-না।তা হলে আমি বলব কেন? আচ্ছা শুনুন, কাজের কথায় আসি। আমি তো রেপ কেইস করি না। তবু কাগজপত্র উল্টেপাল্টে দেখেছি নিতান্তই ভদ্রতার কারণে। শুধু শুধু সময় নষ্ট। রেপ কেইস কেন করেন না জানতে পারি? সত্যি-সত্যি জানতে চান? চাই।
রেপ কেইসে জেতা যায় না। ভরাড়ুবি হয়। আর আপনার এই কেইসের কোনো আশা দেখছি না। মেডিকেল রিপোর্টে কিছু নেই। কোনো প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী নেই। আসামী হচ্ছে মেয়ের স্বামীর ঘনিষ্ঠ বন্ধু।মেয়ের স্বামীর ঘনিষ্ঠ বন্ধুরা কি রেপ করে না? করবে না কেন, করে। তবে অধিকাংশ সময়েই ব্যাপারটা হয় আপোসে।আপনি কী বলতে চাচ্ছেন? কোর্টে গেলেই আপনি বুঝবেন আমি কী বলছি। এই মামলা তৃতীয় দিনের হিয়ারিং-এর পরই ডিসমিস হয়ে যাবে। একজন সার্জন যখন জানেন অপারেশন টেবিলেই রুগী মারা যাবে, তখন তাঁরা অপারেশন করেন না।
এমন সার্জনও আছেন যাঁরা রুগী মারা যাবে জেনেও অপারেশন করেন। সাধ্যমত চেষ্টা করেন রুগীকে বাঁচাতে।আমি সেরকম কেউ না। আমার মধ্যে বড়-বড় আদর্শ নেই। তা ছাড়া আমি রেপ ব্যাপারটাকে খুব বড় করে দেখি না।তার মানে।এটা বেশ ক্ষুদ্র ব্যাপার মনে করি। একটা লোককে মারধর করে আপনি তার একটা হাত ভেঙে ফেললেন, এতে আপনার শাস্তি হবে ছয় মাসের কারাবাস, অথচ রেপ-এর ক্ষেত্রে একটি মহিলা তার চেয়েও কম শারীরিক যন্ত্রণা বোধ করবে, কিন্তু সেখানে শাস্তি হবে যাবজ্জীবন। এটা আনফেয়ার।শারীরিক যন্ত্রণাটাই দেখবেন, মানসিক যন্ত্রণা দেখবেন না?
না। মন ধরা-ছোঁয়ার বাইরের একটা বস্তু। ঐ বস্তুকে আইনের ভেতরে আনা ঠিক নয়।আপনার কাছে আসাই আমার ভুল হয়েছে।আচ্ছা, এক মিনিট। এক মিনিটের জন্য আপনি বসুন।নিশাত বসল। তার চোখে পানি এসে গিয়েছিল। সে খুব সাবধানে রুমালে সেই পানি মুছল, যাতে দৃশ্যটি সামনে বসা এই নিম্নমানের মানুষটি না দেখে ফেলে। দেখে ফেললে খুব লজ্জার ব্যাপার হবে। এই রোগা, কুদর্শন নিম্ন মানসিকতার একটা মানুষ ক্রিমিনাল কেইসের প্রবাদতুল্য পুরুষ, বিশ্বাস করতে ইচ্ছা করে না। মন খারাপ হয়ে যায়।নিশাত আপনার নাম, তাই না?
হ্যাঁ।আপনার বান্ধবীকে নিয়ে আসুন। আই উইল ফাইট ফর হার।মত বদলালেন কেন? আমি কেইস নেব না বলায় চোখে পানি এসে গেল, তাই দেখেই মত বদলালাম।আপনি কেইস নেবেন না এটা শুনে আমার চোখে পানি আসে নি। রেপ সম্পর্কে আপনার ধারণা জেনে চোখে পানি এসেছে।এটা নিতান্তই একটা ব্যক্তিগত মতামত। আমি তো এই মতামত প্রচার করছি না। যৌনতা ব্যাপারটাকে অন্য সবাই যেভাবে দেখেছে, সেভাবে আমি দেখছি না। এটা নিতান্তই তুচ্ছ ব্যাপার। আর দশটা শারীরিক ব্যাপারের চেয়ে আলাদা কিছু না। এর সঙ্গে আপনারা মন যুক্ত করে একে মহিমান্বিত করছেন। আমার কাছে তা আনফেয়ার মনে হয়েছে। আজ এটাকে বিরাট অপরাধ মনে করা হচ্ছে।
একদিন হয়তো হবে না। মূল্যবোধ বদলায়। এর সঙ্গে-সঙ্গে বদলায় আইন। একসময় শিশুকন্যা জন্মাবার সঙ্গে সঙ্গে তাকে মেরে ফেলা হত। এটাকে কেউ অপরাধ মনে করত না। তারপর অপরাধ মনে করতে শুরু করলাম। এখন আবার করছি না।এখন করছি না মানে।ভ্রূণহত্যা করছি। ঢাকা শহরে অসংখ্য ক্লিনিক আছে যারা এম. আর.-এর নামে হত্যাকাণ্ড চালাচ্ছে। যেহেতু পপুলেশন আমাদের বড় সমস্যা, সেহেতু আমরা দেখেও না-দেখার ভান করছি। কোনো কোনো দেশে ভ্রুণহত্যাকে আইনের স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। সব দেশ নিজের সুবিধামতো আইন প্রণয়ন করে। আমেরিকার কথা ধরুন। আমেরিকায় ফোর্জারি বা জালিয়াতির শাস্তি হচ্ছে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড।
অথচ পৃথিবীর অন্য সব দেশে এটাকে চতুর্থ শ্রেণীর অপরাধের পর্যায়ে ফেলা হয়। শাস্তি বড় জোর পাঁচ বছর।আপনার বক্তৃতা শুনতে ভালো লাগছে না।চা খান। চা দিতে বলি। চা খেয়ে আপনার বান্ধবীকে নিয়ে আসুন। মহিলা কীরকম শক্ত দেখতে চাই। ক্রস একজামিনেশন সহ্য করতে পারবেন কি না কে জানে। কেউ পারে না।ও পারবে।না, উনিও পারবেন না। পারার কথা নয়। যাক, সেটা কোনো ব্যাপার না। ট্রায়াল সহ্য করতে না পারাটাই ভালো। জেরার মুখে যদি অজ্ঞান হয়ে পড়ে যায় তা হলে বেশ ভালো হয়।আপনার কথা বুঝলাম না।ব্যাপারটা সবাইকে এফেক্ট করে। সহানুভূতির অনেকটাই মেয়েটা নিজের দিকে টেনে নিয়ে যায়। আসলে কোর্টগুলি চালানো উচিত রোবটদের দিয়ে, যাদের কোনো ইমোশন নেই।
পুরোপুরি ন্যায়বিচার মানুষের পক্ষে করা মুশকিল। আচ্ছা, আপনি এখন উঠুন। আমি অন্য কাজ করব।পুষ্প হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছে। এই ব্যাপারটা কি সত্যি-সত্যি ঘটছে না এটা তার অন্যান্য দুঃস্বপ্নের মতো দুঃস্বপ্ন? মিজান বসার ঘরে বসে আছে। চোখে সানগ্লাস। পরনে। চকলেট রঙের একটা শার্ট। মাথার চুলগুলি ছোট্ট-ছোট্ট করে কাটা। মুখ হাসি-হাসি।ভাবি চিনতে পারছেন? অধমের নাম মিজান। দরজা খোলা ছিল, বিনা অনুমতিতে ঢুকে পড়েছি। নিজ গুণে ক্ষমা করে দেবেন। রকিব বাসায় নেই? ওর সঙ্গে দরকার ছিল।পুষ্প কী বলবে ভেবে পেল না। তার বুক ধকধক করছে। নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। আবার ঐ দিনকার মতো হবে নাকি? সে প্ৰাণপণে নিজেকে সামলাবার চেষ্টা করছে। পারছে না। সে খুব ঘামতে শুরু করেছে।আপনি কী চান?
কিছুই চাই না ভাবি। নাথিং। পুলিশ যা যন্ত্ৰণা করেছে বলার না! কোর্টে হাজির করেই আবার পুলিশ রিমান্ডে। ঐ ইন্সপেক্টার বিরাট হারামজাদা। এখন অবশ্যি ঠাণ্ডা।পুষ্প মনে-মনে লোকটির সাহসের তারিফ করল। কী সহজ-স্বাভাবিক ভঙ্গিতে বসে আছে যেন কিছুই হয় নি। অনেক দিন পর বন্ধুর বাড়িতে বেড়াতে এসেছে। চা-টা খেয়ে বিদায় নেবে।রকিবকে খুঁজছিলাম যন্ত্রণা মিটিয়ে ফেলবার জন্যে। এই জিনিস কোর্টে গেলে তারই অসুবিধা, আমার কিছু না। আমি আজও যেমন ফ্রী ম্যান, দশ দিন পরেও ফ্রী ম্যান।মিজান সিগারেট ধরাল। সানগ্লাস খুলে রুমাল দিয়ে পরিষ্কার করে আবার চোখে পরল। হাসিমুখে বলল, ঐ দিন তেমন কিছু হয় নি। ঠাট্টা-তামাশা করেছি।
ভয় পেয়ে আপনি হয়ে গেলেন অজ্ঞান। জাস্ট বিছানায় নিয়ে শুইয়ে দিলাম। এর বেশি কিছু না। আপনি ভাবলেন কি না কি।আপনি এখন দয়া করে যান।যাব তো বটেই। এটা তো ভাবি আমার বাড়িঘর না। তবে এই কথাগুলি রকিবকে বলা দরকার, যাতে তার মনে আবার আমার সম্পর্কে কোনো খারাপ ধারণা না থাকে। বহুদিনের পুরনো দোস্ত।আপনাকে যেতে বলছি যান। আমি চিৎকার করে তোক জড়ো করব।বেশ তো, করুন।মিজান কয়েক সেকেণ্ড চুপ করে রইল, যেন সত্যি-সত্যি চিৎকারটার জন্যে অপেক্ষা করছে।ভাবি, ঠাণ্ডা মাথায় একটা কথা শুনুন। কোনো বাপের ব্যাটার সাধ্য নেই এই কেইস প্রমাণ করে। কেন তা হলে শুধু-শুধু ঝামেলা করছেন? লজ্জা অপমান যা সবই তো আপনার।আমার অপমান নিয়ে আপনি এত ব্যস্ত কেন?
বন্ধুর স্ত্রী, আমি ব্যস্ত হব না? কী বলেন আপনি। অবশ্যি এটা আমার জন্যেও বড় পাবলিসিটি। ব্যবসা করি তো! নানান লোকজনদের সঙ্গে মিশতে হয়। আপনি ভাবি রকিবকে বলবেন আমার সঙ্গে যোগাযোগ করতে। আমি এখন মালিবাগের বাসায় আছি। ও ঠিকানা জানে।মিজান উঠে পড়ল। পুষ্প ছুটে গেল পাশের ফ্ল্যাটে। নিশাত নেই। নিশাতের বোনদুলাভাই আজ চলে যাচ্ছেন। তাঁদের ফ্লাইট রাত দেড়টায়। আজ আর তার দেখা পাওয়া যাবে না। পুষ্প একবার ভাবল বাবুকে সঙ্গে নিয়ে কল্যাণপুর চলে যায়। ভয়ে তার গা কাঁপছে। তার কেন জানি মনে হচ্ছে মিজান কিছুক্ষণ পরে আবার ফিরে আসবে।
দরজা বন্ধ থাকলেও কোনোনা-কোনোভাবে ঢুকে পড়বে ভেতরে। হাসি-হাসি গলায় বলবে, ভাবি চিনতে পারছেন? অধমের নাম মিজান।পুষ্প অবশ্য নিশাতের বাসার ঠিকানা জানে। রিকশা নিয়ে চলে যেতে পারে। যাওয়াটা কি ঠিক হবে? আপা নিশ্চয়ই খুব ব্যস্ত। এই ব্যস্ততার মধ্যে নতুন ঝামেলা। এমনিতেই আপা যা করছেন, তার নিজের ভাই বা বোন তা করবে না। উকিল সাহেবের ফিসের টাকা পুরোটা উনি দিয়েছেন। অবশ্যি তাকে প্রথম বলেছিলেন, উকিল সাহেব প্রথম দফায় ন হাজার টাকা চেয়েছেন। দিতে পারবে পুষ্প?
পুষ্প বলেছে, আমার কাছে চার হাজার টাকা আছে। আমি ওকে বলব। ও জোগাড় করবে।রকিব সব শুনে রাগী গলায় বলেছে, প্রথম বারেই নয় হাজার টাকা! এইটা কীরকম উকিল? একজন ব্যারিস্টারও তত পাঁচ শ টাকার বেশি নেয় না। ঐ উকিল বাদ দিতে বল, আমি দেখব।তুমি চেন কাউকে? চিনব না কেন? ভালেই চিনি।পুষ্প নিশাতকে বলল, ও নিজে একজন উকিল দিতে চায় আপা। ওর চেনা কে নাকি আছে। টাকা নেবে না।নিশাত বলেছে, আচ্ছা ঠিক আছে। দু-তিন দিন পর জিজ্ঞেস করল, রকিব। সাহেব কি কিছু করেছেন? না আপা।জিজ্ঞেস করেছিলে কিছু করেছেন কি না?
জিজ্ঞেস করেছিলাম। বলল করবে। কেইসটার নাকি অনেক দেরি।খুব দেরি কিন্তু নেই পুষ্প।ও গা করছে না আপা। শুধু বলছে দেখি। ওর বোধহয় টাকাও নেই। আমার গলার একটা হার দিই আপা, দু ভরি সোনা আছে।নিশাত বলেছে, আমি পরে তোমার কাছ থেকে হার নিয়ে যাব। এখন আমি চালিয়ে নিই। তুমি চল, তোমার সঙ্গে উকিল সাহেবের পরিচয় করিয়ে দিই। ওঁকে দেখে প্রথমে ভক্তি হবে না, কিন্তু উনি খুবই নামকরা। উনি যা বলবেন মন দিয়ে শুনবে।
উকিল সাহেব প্রথমে সমস্ত ব্যাপারটা খুটিয়ে-খুটিয়ে শুনলেন। প্রথম মিজান কবে। এ-বাসায় এল, কখন এল, তার পরনে কী ছিল থেকে শুরু। তারপর কত রকম যে। প্রশ্ন। যেমন, মিজান সাহেবের ড্রাইভার কি কখনো বাসায় এসেছিল? মিজান সাহেব কি কখনো চিঠিপত্র লিখেছিলেন?বেশির ভাগ প্রশ্নেরই পুষ্প জবাব দিতে পারল না। এর মধ্যে একটি হচ্ছেআপনার স্বামী কি কখনো মিজান সাহেবের কাছ থেকে টাকা ধার নিয়েছিলেন? আমার কেন জানি মনে হচ্ছে নিয়েছেন। আপনি কিছু জানেন না?
জ্বি-না।আপনার স্বামীকে জিজ্ঞেস করবেন।জ্বি আচ্ছা।আপনার স্বামীকে বলবেন তিনি যেন অবশ্যই আমার সঙ্গে দেখা করেন।জ্বি আচ্ছা।তাঁকে কিছু শিখিয়েপড়িয়ে দেওয়ার ব্যাপার আছে। কারণ মিজান সাহেবের উকিল তাঁকে কোর্টে তুলবে। আপনি আগামী পরশু আপনার স্বামীকে আসতে বলবেন। বিকেল পাঁচটায় আমি ফ্রী থাকব। অ্যাপয়েন্টমেন্ট বুকে লিখে রাখছি।জ্বি আচ্ছা।আপনাকে ফাঁদে ফেলবার চেষ্টা করবে। আপনি ফাঁদ থেকে বের হয়ে আসবার জন্য উল্টোপাল্টা কথা বলবেন না। যা জানেন তাই বলবেন। উকিল আপনাকে প্রশ্ন করলে জবাব নিয়ে আপনি ধাঁধায় পড়ে গেছেন, তখন তাকাবেন আমার দিকে।
যদি দেখেন আমি ডান হাত মুঠি করে আছি তা হলে বলবেন, আমার মনে নেই। আর যদি দেখেন আমি দুটি হাতই মুঠি পাকিয়েছি তা হলে বলবেন, এই বিষয়ে আমি কিছু জানি না।আমার এসব মনে থাকবে না।বাজে কথা বলবেন না। অবশ্যই মনে থাকবে।পুষ্প রকিবকে টাকার কথাটা জিজ্ঞেস করল। রাতে ভাত খেতেখেতে বলল, তোমার বন্ধু কি তোমাকে কোনো টাকা ধার দিয়েছিল? রকিব চোখ কুঁচকে বলেছে, কেন? উকিল সাহেব জানতে চাচ্ছিলেন। দিয়েছিল? এর সাথে মামলার কী সম্পর্ক?
জানি না কি সম্পর্ক। উকিল সাহেব জিজ্ঞেস করলেন বলেই বললাম। তোমাকে যেতে বলেছেন।কী মুশকিল, আমি কেন যাব? যেতে বলেছেন, যাও।রকিব গেল না। কেন গেল না কে জানে। নিশাত বলল, ঠিক আছে, যেতে না চাইলে কি আর করা। জোর করে তো আর নেওয়া যাবে না। আমি তোমার ল ইয়ারকে বলব। তিনি কিছু বুদ্ধি নিশ্চয়ই বের করবেন। উনি বোধহয় চান না তোমার কেইস কোর্টে উঠুক, তাই না পুষ্প?
আমি জানি না আপা। মাঝে-মাঝে মনে হয় চায়। আবার মাঝে-মাঝে মনে হয় চায় না। কী যে মুশকিলে পড়েছি আপা।কোনো মুশকিল নেই। আমি আছি তোমার পাশে।নিশাত আপার কথায় পুরোপুরি ভরসা করা যায় না। যার কথায় ভরসা পাওয়া যেত সে আছে চুপ করে। মিজান আজ এসেছিল এই খবর শুনলে সে কী করবে কে জানে। হয়তো সঙ্গে-সঙ্গে ছুটে যাবে। তাকে এই খবর কিছুতেই বলা যাবে না। বরং একতলার বাড়িওয়ালার বাসা থেকে নিশাত আপাকে টেলিফোন করে বলা যায়।পুষ্প তাই করল।
Read more