বলাইচাঁদ মুখোপাধ্যায় এর জীবনী ও সাহিত্যকর্ম

বলাইচাঁদ-মুখোপাধ্যায়

তিনি ছিলেন বাঙালি কবি, কথাশিল্পী, নাট্যকার এবং প্রবন্ধকার। শৈশব থেকেই তাঁর সাহিত্যের প্রতি অনুরাগ লক্ষ করা যায়। তাঁর কবিতার মূল বিষয় নিসর্গ চেতনা, প্রেম ও আত্ম-উপলব্ধি। নতুন ধারা ও বিচিত্র ধরণের কাহিনী রচনায় তিনি অভিনবত্বের পরিচয় দিয়েছেন। তাঁর উপন্যাসগুলিতে লক্ষ করা যায় মানব জীবনের নানা সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম অনুভূতির প্রকাশ। যথার্থ শিল্পীর বেদনাবোধ তাঁর সৃজনী প্রতিভায় বিদ্যমান। অবহেলিত মানুষের সেবা করা ছিল তাঁর জীবনের ব্রত। এক্ষেত্রে ডাক্তারি ছিল তাঁর অন্যতম মাধ্যম। কিন্তু এ সেবাতেই তিনি তুষ্ট ছিলেন না।

তিনি সাধারণ, অনাহার, অবহেলিত, শ্রমজীবী মানুষের জীবন আঁকতে চেয়েছেন শিল্পে। তাঁর কাছে এর এক অসাধারণ মাধ্যম ছিল ছোটগল্প। তাঁর ছোটগল্পে মানবজীবনের নানা স্ববিরোধিতা, দুর্জ্ঞেয় রহস্য, আত্মানুসন্ধানের প্রয়াস লক্ষ করা যায়। তাঁর রচনায় আছে সুস্থ জীবনের আকাঙ্ক্ষা, মূল্যবোধের চেতনা, অন্ধ সংস্কারের বিরুদ্ধে ধিক্কার। 

  • বিশিষ্ট এই কবির জন্ম – ১৯ জুলাই, ১৮৯৯ সালে।
  • বিশিষ্ট এই প্রবন্ধকার জন্মগ্রহণ করেন – অবিভক্ত ভারতবর্ষের বিহার রাজ্যের পূর্ণিয়া জেলার মনিহারী গ্রামে।
  • অনত্যম এই কবির পূর্বপুরুষদের আদি নিবাস – হুগলি জেলার শিয়ালখালায়।
  • বিশিষ্ট এই কবির পিতার নাম – সত্যচরন মুখোপাধ্যায় এবং মাতার নাম – মৃণালিনী দেবী।
  • তাঁর পিতা সত্যচরণ মুখোপাধ্যায় ছিলেন – পূর্ণিয়া জেলার মণিহারী ডিস্ট্রিক্ট বোর্ড হাসপাতালের ডাক্তার।
  • বিশিষ্ট এই কবির শিক্ষাজীবন – তিনি প্রথমে মণিহারী স্কুলে এবং পরে সাহেবগঞ্জ জেলার সাহেবগঞ্জ উচ্চ ইংরেজি বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করেন। সাহেবঞ্জ স্কুল থেকে (১৯১৮) সালে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ১৯২০ সালে আই.এস.সি. পরিক্ষায় পাশ করেন হাজারীবাগ সেন্ট কলম্বাস কলেজ থেকে। কলকাতা মেডিকেল কলেজে চিকিৎসা শাস্ত্র ভর্তি হন। তবে যখন তিন ষষ্ঠ বার্ষিক শ্রেণিতে পড়েন, তখন বিহারের পাটনায় মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়। বিহার থেকে আসা ছাত্র হিসেবে তিনি এ নব প্রতিষ্ঠিত কলেজে স্থানান্তরিত হন এবং ১৯২৮ সালে পাটনা মেডিক্যাল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাশ করেন।
  • তিনি পাটনা মেডিকেল কলেজে জুনিয়র হাউস সার্জনের চাকরি গ্রহণের মধ্য দিয়ে কর্মজীবন শুরু করেন – ১৯২৭ সালে।
  • তিনি আজিমগঞ্জ মিউনিসিপ্যাল হাসপাতালে মেডিকেল অফিসারের চাকরি গ্রহণ করেন – ১৯২৮ সালে।

বলাইচাঁদ মুখোপাধ্যায় এর জীবনী ও সাহিত্যকর্ম

  • ভাগলপুরে বসবাসকালে অনেক কীর্তিমান কবি-সাহিত্যিকের সাথে তাঁর প্রত্যক্ষ পরিচয় ঘটে তাঁদের মধ্যে রয়েছেন – সজনীকান্ত দাস (১৯৯০-১৯৬২), তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় (১৮৯৮-১৯৫২), বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় (১৮৯৪-১৯৫০), মোহিতলাল মজুমদার (১৮৮৮-১৯৫২) প্রমুখ।
  • তিনি স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য কলকাতায় চলে আসেন – ১৯৬৮ সালে।
  • স্কুলে পড়ার সময় মালঞ্চ পত্রিকায় একটি কবিতা প্রকাশের মধ্য দিয়ে তাঁর সাহিত্যিক জীবনের সূত্রপাত ঘটে – ১৯১৫ সালে।
  • নিয়মিত তাঁর ছোটগল্প প্রকাশ করেন – প্রবাসী, ভারতী এবং সমসাময়িক অন্যান্য পত্রিকায়।
  • স্কুলে পড়ার সময়ে তিনি কবিতা রচনা করেন – ‘বনফুল’ ছদ্মনামে।
  • তিনি সাহিত্য জগৎতে নিজের আসন স্থায়ী করেন – শনিবারের চিঠি তে ব্যাঙ্গ কবিতা ও প্যারডি কবিতা লিখে।
  • তাঁর কবিতার সংখ্যা – হাজারেরও বেশি।
  • তাঁর ছোটগল্পের সংখ্যা – ৫৮৬টি।
  • বিশিষ্ট এই লেখকের উপন্যাসের সংখ্যা – ৬০টি।
  • তাঁর কয়েকটি উপন্যাস চলচ্চিত্রায়িত হয় যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে – ভূবনসোম।
  • বিশিষ্ট এই নাট্যকারের নাটকের সংখ্যা – ১৩টি।
  • তাঁর রচনাবলীসমগ্র প্রকাশিত হয় – ২২ খন্ডে।
  • বলাইচাঁদ মুখোপাধ্যায়ের ছদ্মনাম – বনফুল।
  • তাঁর উপন্যাসের বিষয়বস্তু ছিল – ইতিহাস, নৃতত্ত্ব, চিকিৎসাবিদ্যা, মনস্তত্ত্ব, প্রেম প্রভৃতি।
  • ’চতুর্দশী’ কোন জাতীয় রচনা – কাব্যগ্রন্থ।
  • ’চতুর্দশী’ কাব্যগ্রন্থটি রচনা করেন – বলাইচাঁদ মুখোপাধ্যায়
  • তাঁর রচিত ‘চতুর্দশী’ কাব্যগ্রন্থাটি প্রকাশিত হয় – ১৯৪০ সালে।
  • তিনি ‘বিকাশ’ নামে হাতে-লেখা একটি সাহিত্যপত্রিকা সম্পাদনা করেন – ১৯১৫ সালে।
  • তাঁর রচিত কাব্যগ্রন্থের মধ্যে রয়েছে – ’বনুফুলের কবিতা’ (১৯২৯), ‘অঙ্গারপর্ণী’ (১৯৪০), ‘আহবনীয়’ (১৯৪৩), ‘করকমলেষু’ (১৯৪৯), ‘বনফুলের ব্যঙ্গ কবিতা’ (১৯৫৮), ‘নূতন বাঁকে’ (১৯৫৯) এবং ’সুর সপ্তক’ (১৯৭০) প্রভৃতি।
  • ’বিন্দু বিসর্গ’ কোন জাতীয় রচনা – ছোটগল্প।
  • ’বিন্দু বিসর্গ’ ছোটগল্পটি রচনা করেন – বলাইচাঁদ মুখোপাধ্যায়
  • তাঁর রচিত ‘বিন্দু বিসর্গ’ ছোটগল্পটি প্রকাশিত হয় – ১৯৪৪ সালে।
  • ’মণিহারী’ কোন জাতীয় রচনা – ছোটগল্প।
  • ’মণিহারী’ ছোটগল্পের রচয়িতা – বলাইচাঁদ মুখোপাধ্যায়

 জীবনী ও সাহিত্যকর্ম

  • বনফুল রচিত ’মণিহারী’ ছোটগল্পটি প্রকাশিত হয় – ১৯৬৩ সালে।
  • তাঁর উল্লেখযোগ্য গল্পগ্রন্থের মধ্যে রয়েছে – ‘বনফুলের গল্প’ (১৯৩৬), ‘বনফুলের আরও গল্প’ (১৯৩৮), ‘বাহুল্য’ (১৯৪৩),  ‘অদৃশ্যলোকে’ (১৯৪৬), ‘আরও কয়েকটি’ (১৯৪৭), ‘তন্বী’ (১৯৪৯), ‘নবমঞ্জরী’ (১৯৫৪), ‘উর্মিমালা’ (১৯৫৫), ‘রঙ্গনা’ (১৯৫৬),  ‘অনুগামিনী’ (১৯৫৮), ‘করবী’ (১৯৫৮), ‘সপ্তমী’ (১৯৬০), ‘দূরবীণ’ (১৯৬১), ‘ছিট মহল’ (১৯৬৫), ‘এক ঝাক খঞ্জন’ (১৯৬৭), ‘অদ্বিতীয়া’ (১৯৭৫), ‘বহুবর্ণ’ (১৯৭৬), ‘বনফুলের নতুন গল্প’ (১৯৭৬), ‘বনফুলের শেষলেখা’ (১৯৭৯) প্রভৃতি।
  • মাইকেল মধুসূদন দত্ত ও ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরকে নিয়ে লেখা তাঁর নাটক – ‘শ্রীমধুসূদন’ (১৯৪০) ও ‘বিদ্যাসাগর’ (১৯৪১)।
  • তাঁর লেখা উল্লেখযোগ্য নাটকের মধ্যে রয়েছে – ‘মন্ত্রমুগ্ধ’ (১৯৩৮), ‘রূপান্তর’ (১৯৩৮), ‘মধ্যবিত্ত’ (১৯৪৩), ‘দশভাণ’ (১৯৪৪) একাঙ্কিকা সংকলন), ‘কঞ্চি’ (১৯৫৪), ‘বন্ধন মোচনা’ (১৯৪৮), ‘উজ্জলা’ (১৯৫৭), ‘দশভাণ ও আরও কয়েকটি’ (১৯৬২) (একাঙ্কিকা সংকলন), ‘শৃম্বন্ত’ (১৯৬৩), ‘আসন্ন’ (১৯৭৩), ‘ত্রিনয়ন’ (১৯৭৬) প্রভৃতি।
  • তাঁর প্রবন্ধগ্রন্থের মধ্যে রয়েছে – ‘উত্তর’ (১৯৫৩), ‘মনন’ (১৯৬২), ‘ভাষণ’ (১৯৭৮), ’দ্বিজেন্দ্রদর্পণ’ (১৯৮৭) প্রভৃতি।
  • তিনি ছোটদের জন্য দুটি বই লেখেন – ‘মায়াকানন’ (১৯৭৭) ও ‘রাজা’ (১৯৭৭)।
  • ’রবীন্দ্রস্মৃতি’ (১৯৬৮) ও ‘মর্জিমহল’ (১৯৭৭) গ্রন্থ দুটি তাঁর – ডায়েরি জাতীয় রচনা।
  • ’নিরঞ্জনা’ কোন জাতীয় রচনা – উপন্যাস।
  • ’নিরঞ্জনা’ উপন্যাসের রচয়িতা – বলাইচাঁদ মুখোপাধ্যায়
  • বনফুল রচিত ’নিরঞ্জনা’ উপন্যাসটি প্রকাশিত হয় – ১৯৫৫ সালে।
  • তাঁর স্ত্রীর মৃত্যুতে তিনি রচনা করেন শোকোচ্ছ্বাসমূলক উপন্যাস – ‘লী’।
  • বনফুল রচিত ’লী’ উপন্যাসটি প্রকাশিত হয় – ১৯৭৮ সালে।
  • ’সীমারেখা’ কোন জাতীয় রচনা – উপন্যাস।
  • ’সীমারেখা’ উপন্যাসের রচয়িতা – বলাইচাঁদ মুখোপাধ্যায়
  • তাঁর রচিত ’সীমারেখা’ উপন্যাসটি প্রকাশিত হয় – ১৯৬২ সালে।
  • ’জলতরঙ্গ’ কোন জাতীয় রচনা – উপন্যাস।

বলাইচাঁদ মুখোপাধ্যায় এর জীবনী ও সাহিত্যকর্ম

  • ’জলতরঙ্গ’ উপন্যাসটি রচনা করেছেন – বলাইচাঁদ মুখোপাধ্যায়
  • বনফুল রচিত ‘জলতরঙ্গ’ উপন্যাসটি প্রকাশিত হয় – ১৯৫৯ সালে।
  • তাঁর রচিত উল্লেখযোগ্য উপন্যাসের মধ্যে রয়েছে – ‘তৃণখন্ড’ (১৯৩৫), ‘বৈতরণীর তীরে’ (১৯৩৬), ‘দ্বৈরথ’ (১৯৩৭), ‘কিছুক্ষণ’ (১৯৩৭), ‘মৃগয়া’ (১৯৪০), ‘নির্মোক’ (১৯৪০), ‘রাত্রি’ (১৯৪১), ’সে ও আমি’ (১৯৪৩), ‘জঙ্গম’, ‘সপ্তর্ষী’ (১৯৪৫), ’অগ্নি’ (১৯৪৫), ‘নঞ্চ তৎপুরুষ’ (১৯৪৬), ‘স্বপ্ন বাস্তব’ (১৯৪৬), ’ডানা’ (প্রথম খণ্ড ১৯৪৮), ’মানদণ্ড’ (১৯৪৮), ‘ভীমপলশ্রী’ (১৯৪৯), ‘নবদিগন্ত’ (১৯৪৯), ‘কষ্টিপাথর’ (১৯৫১), ‘লক্ষীর আগমন’ (১৯৫৪), ‘পিতামহ’ (১৯৫৪), ‘বিষমজ্বর’ (১৯৫৪), ‘ভুবন সোম’ (১৯৫৭), ‘উজ্জ্বল’ (১৯৫৭), ‘মহারাণী’ (১৯৫৮), ’অগ্নিশ্বর’ (১৯৫৯), ‘দুই পথিক’ (১৯৬০), ‘ওরা সব পারে’ (১৯৬০), ‘হাটে বাজোরে’ (১৯৬১), ‘কন্যাসু’ (১৯৬২), ‘পীতাম্বরের পুনর্জন্ম’ (১৯৬৩), ‘ত্রিবর্ণ’ (১৯৬৩), ‘বর্ণচোরা’ (১৯৬৪), ‘পক্ষীমিথুন’ (১৯৬৪), ‘গন্ধরাজ’ (১৯৬৬), ‘মানসপুর’ (১৯৬৬), ‘তীর্থের কাক’ (১৯৬৬), ‘প্রচ্ছন্ন মহিমা’ (১৯৬৭), ‘গোপালদেবের স্বপ্ন’ (১৯৬৯), ‘অধিকলাল’ (১৯৬৯), ‘অসংগলগ্ন’ (১৯৬৯), ‘রূপকথা ও তারপর’ (১৯৭০), ‘রৌরব’ (১৯৭০), ‘রঙ্গ-তুরঙ্গ’ (১৯৭০), ‘তুমি’ (১৯৭১), ‘সন্ধিপূজা’ (১৯৭২),  ’এরাও আছে’ (১৯৭২), ‘কৃষ্ণপক্ষ’ (১৯৭৩), ‘প্রথম গরল’ (১৯৭৪), ‘নবীন দত্ত’ (১৯৭৪) ‘উদয় অস্ত’ (১৯৭৪), ‘আশাবরী’ (১৯৭৪), ‘সাত সমুদ্র তেরো নদী’ (১৯৭৬), ‘অলংকারপুরী’ (১৯৭৮), ‘হরিশচন্দ্র’ (১৯৭৯) প্রভৃতি।
  • সাহিত্য সাধনার স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি লাভ করেন শরৎস্মৃতি পুরস্কার – ১৯৫১ সালে।
  • ভারত সরকারের কাছ থেকে তিনি পদ্মভূষণ উপাধি পান – ১৯৭৫ সালে।
  • তিনি ‘রবীন্দ্র পুরস্কার’ লাভ করেন – ১৯৬২ সালে।
  • তিনি বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের জগত্তারিণী পদক লাভ করেন – ১৯৬৭ সালে।
  • যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে ডিলিট উপাধি প্রদান করে – ১৯৭৩ সালে।
  • বিশিষ্ট এই কথাসাহিত্যিক মৃত্যুবরণ করেন – ৯ ফেব্রুয়ারি, ১৯৭৯ সালে কলকাতায়।

Read More

আশরাফ সিদ্দিকী এর জীবনী ও সাহিত্যকর্ম

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *