বিহারীলাল চক্রবর্তী এর জীবনী ও সাহিত্যকর্ম

বিহারীলাল চক্রবর্তী

বিহারীলাল চক্রবর্তী ছিলেন আধুনিক  গীতিকাবিতার স্রষ্টা। মনোবীণার নিভূত ঝংকারে তাঁর কাব্যের সৃষ্টি। বাঙালি কবি মানসের বহির্মুখী দৃষ্টিকে অন্তর্মুখী করার ক্ষেত্রে তাঁর অবদান অনস্বীকার্য। বাংলা কবিতায় তিনিই প্রথম কবির অন্তর্জগতের সুর ধ্বনিত করে তোলেন। অতি অল্পকালের ভিতরে তিনি বাংলা কবিতার প্রচলিত ধারার পরিবর্তন ঘটিয়ে নিবিড় অনুভূতি প্রকাশের মাধ্যমে গীতিকবিতার ধারার চালু করেন।

 

এ বিষয়ে তিনি সংস্কৃত ও ইংরেজি সাহিত্যের মাধ্যমে গভীরভাবে প্রভাবিত হন। তাঁর রচনায় প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য কবিদের প্রভাব থাকলেও নিজস্ব রীতিই ফুটে উঠেছে। তিনি তাঁর কবিতায় ভাবের আধিক্যকে খুব বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন। প্রকৃতি ও প্রেম, সংগীতের উপস্থিতি, সহজ-সরল ভাষা এবং তৎসম ও তদ্ভব শব্দের যুগপৎ ব্যবহার তাঁর কাব্যকে করেছে বৈশিষ্ট্যমন্ডিত। তাঁর কবিতার বিষয়-ভাবনা, প্রকাশভঙ্গির অভিনবত্ব, অনুভূতির সূক্ষ্মতা, সৌন্দর্য প্রকাশের চমৎকারিত্ব, ছন্দ-অলঙ্কারের অভূতপূর্ব ব্যবহার অন্যদের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। 

জীবনী ও সাহিত্যকর্ম

  • বাংলা ভাষার বিশিষ্ট এই কবি জন্মগ্রহণ করেন – ২১ মে, ১৮৩৫ সালে।
  • বিশিষ্ট এই কবির পৈত্রিক নিবাস – কলকাতার নিমতলা।
  • তাঁর পূর্বপুরুষেদের আদি নিবাস ছিল – ফরাসডাঙ্গায়।
  • তাঁদের পারিবারিক পদবি ছিল – ‘চট্টোপাধ্যায়’।
  • বিশিষ্ট এই কবির পিতার নাম – দীননাথ চক্রবর্তী।
  • অন্যতম এই কবির শিক্ষাজীবন – তিনি শৈশবে নিজ গৃহে সংস্কৃত, ইংরেজি ও বাংলা সাহিত্যে জ্ঞান অর্জন করেন। তিনি কলকাতার সংস্কৃত কলেজে তিন বছর অধ্যয়ন করেন।

 

  • তাঁর সম্পাদিত পত্রিকার নাম – পূর্ণিমা, সাহিত্য-সংক্রন্তি, অবোধবন্ধু প্রভৃতি। 
  • বাংলা গীতি কবিতার উদ্ভাবক ও জনক – বিহারীলাল চক্রবর্তী।
  • বাংলা সাহিত্যের ‘ভোরের পাখি’ বলা হয় – বিহারীলাল চক্রবর্তী।
  • তাঁকে ‘ভোরের পাখি’ উপাধি দেন – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
  • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সর্বাধিক প্রভাবিত হয়েছেন –  বিহারীলাল চক্রবর্তী দ্বারা।
  • সারদামঙ্গলের সারদা হলেন – কবির মানসী প্রিয়া।
  • ’সাধের আসন’ তাঁর – ’তত্ত্বাশ্রয়ী কাব্য’ শ্রেণীর রচনা।
  • তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ – সংগীত শতক।
  • ’সংগীত শতক’ কাব্যগ্রন্থটি প্রকাশিত হয় – ১৮৬০ সালে।
  • তাঁর শ্রেষ্ঠ কাব্যগ্রন্থ – ‘সারদামঙ্গল’।
  • ’বন্ধুবিয়োগ’ ও ‘প্রেম প্রাবহিনী’ কাব্য উপজীব্য হয়েছে – নিজের ও বন্ধুদের জীবনের সাধারণ ঘটনা।

বিহারীলাল চক্রবর্তী এর জীবনী ও সাহিত্যকর্ম

  • ’তাঁর প্রথম স্বার্থক গীতিকাব্য – ‘বঙ্গসুন্দরী’।
  • তিনি নারীকে দেখেছে ’মাতা-জায়া-কন্যাসহ বিচিত্র রূপে – ‘বঙ্গসুন্দরী’ কাব্যে।
  • ’বঙ্গসুন্দরী’ কাব্যগ্রন্থটি প্রকাশিত হয় – ১৮৭০ সালে।
  • তাঁর লেখা খুবেই বিখ্যাত চারটি চরণ – সর্বদাই হু হু করে মন, বিশ্ব যেন মরুর মতন। চারি দিকে ঝালাফালা। উঃ কী জ্বলন্ত জ্বালা, অগ্নিকুন্ডে পতঙ্গপতন।
  • আধুনিক বাংলা সাহিত্যের একটি স্তম্ভস্বরূপ – ‘সারদামঙ্গল’ কাব্য।
  • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ‘সারদামঙ্গল’ কাব্য সম্পর্কে লিখেছেন – “সূর্যস্ত কালের সুবর্ণমন্ডিত মেঘমালার মত সারদামঙ্গলের সোনার শ্লোকগুলি বিবিধরূপের আভাস দেয়। কিন্তু কোন রূপকে স্থায়ীভাবে ধারণ করিয়া রাখে না। অথচ সুদূর সৌন্দর্য স্বর্গ হইতে আকটি অপূর্ণ পূরবী রাগিণী প্রবাহিত হইয়া অন্তরাত্মাকে ব্যাকুল করিয়া তুলিতে থাকে।”
  • ’সারদামঙ্গল’ কাব্যগ্রন্থটি প্রকাশিত হয় – ১৮৭৯ সালে।
  • ’বন্ধুবিয়োগ’ কোন জাতীয় রচনা – কাব্যগ্রন্থ।
  • তাঁর ’বন্ধুবিয়োগ’ কাব্যগ্রন্থটি প্রকাশিত হয় – ১৮৭০ সালে।

 

  • আত্মজৈবনিক কাব্য – ‘সাধের আসন’ (যেখানে ১০টি সর্গ ও একটি উপসংহার রয়েছে।
  • ’সাধের আসন’ কাব্যগ্রন্থের রচয়িতা – বিহারীলাল চক্রবর্তী।
  • ’১৮৮৯ সালে-সাধের আসন’ কাব্যগ্রন্থটি প্রকাশিত হয় ।
  • ’সাধের আসন’ কব্যে উপসংহারে সংযোজিত – লোক সংগীত। 
  • ’সারদামঙ্গল’ কাব্যের রচয়িতা – বিহারীলাল চক্রবর্তী।
  • ’দেবরাণী’ কোন জাতীয় রচনা – কাব্যগ্রন্থ।
  • ’দেবরাণী’ কাব্যগ্রন্থের রচয়িতা – বিহারীলাল চক্রবর্তী
  • ১৮৮২ সালে-’দেবরাণী’ কাব্যগ্রন্থটি প্রকাশিত হয় ।
  • ’ধূমকেতু’ কোন জাতীয় রচনা – কাব্যগ্রন্থ।
  • তাঁর রচিত ’ধূমকেতু’ কাব্যগ্রন্থটি প্রকাশিত হয় – ১৮৯৯ সালে।
  • তাঁর রচনাবলির মধ্যে রয়েছে – ‘স্বপ্নদর্শন’(১৮৭০), ’প্রেমপ্রবাহিণী’ (১৮৭০), ‘নিসর্গসন্দর্শন’ (১৮৭০) ‘কবিতা ও সংগীত, (১৮৭০), ‘নিসর্গসঙ্গীত’ (১৮৮১), ‘মায়াদেবী’ (১৮৮২), ‘বাউলবিংশতি’ (১৮৮৭), ’গোধূলি’ (১৮৯৯) প্রভৃতি।
  • তিনি বঙ্গপ্রকৃতির শোভা অপূর্ব ভাব-ভাষা ও ছন্দ-অলঙ্কার প্রয়োগের মাধ্যমে বর্ণনা করেছেন – ‘নিসর্গসন্দর্শন’ কাব্যগ্রন্থে।
  • বিশিষ্ট এই গীতিকবি মৃত্যুবরণ করেন – ২৪ মে ১৮৯৪ সালে (বয়স ৫৯)।

 

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *