বৃক্ষকথা-পর্ব-২-হুমায়ুন আহমেদ

বৃক্ষকথা-পর্ব-২

আমি নিক্সে আদা-চিকিৎসার ভেতর দিয়ে কখনাে যাই নিসিগারেট ছুড়ির কৌশল হিসেবে কিছুদিন শুকনা আদা চিবিয়েছি লাস্ত্রে মধ্যে লাড় এই হয়েছে, সিগারেট খাওয়ার পরিমাণ বেড়েছে। 

 

নুহাশ পল্লীতে প্রতিবছর আদার চাষ হয়। বর্ষার পরপর আদা কেটে কেটে লাগানাে হয়পাঁচ থেকে ছয় মাসে গাছ বড় হয়। যখন পাতা হলুদ হয়ে যায়, তখন মাটি খুঁড়ে আদা বের করা হয়একেকটা আদা একেক রকম। দেখতে এত ভালাে লাগে! 

আদা গাছের পাতার স্বাদও যে অবিকল আদার মতাে— এই তথ্য কি সবাই জানেন। আদার বদলে আদার পাতা দিয়ে গরুর মাংস অতি সুস্বাদুপরীক্ষা এশীয়। 

আদায় কাঁচকলায় বাপারটা কি জানেন ? অদিা এবং কাঁচকলা বিপরীতধর্মীএকটি রেচক অপরটি বিরেচক। দুই বিপরীধৰ্মীকে একসঙ্গে করা যাবে নাশুনেছি কাঁচকলার তরকারিতে অদিা দিলে কাঁচকল সিদ্ধ হয় না। বিষয়টি পরীক্ষা করে দেখার প্রমোজন বােধ করি নি বলেই পরীক্ষা করা হয় নি। 

বৃক্ষকথা-পর্ব-(২)-হুমায়ুন আহমেদ

কদম্ব 

এসাে করাে স্নান 

নবধারা জলে এসাে নীপবনে 

ছায়াবীথি তলেনীপবন হলাে কদম্ব বনকদম্ব নিয়ে রবীন্দ্রনাথের আত্নাদের সীমা ছিল না। বাদল দিনের প্রথম কদম ফুল তার কাছে অন্য ব্যাপার। কদম ফুল বর্ষার আগমন বার্তার ফুল । প্রিয় তো হবেই। 

কালিদাসের মেঘদূত কাব্যের একটি শ্লোক (পূর্বমেঘ) 

নিচে নামে গিরি সেখানে আছে 

ভার শিখরে বিশ্রামে নামবে তােমার স্পর্শের পুলকে। 

ফোটাবে যে নব কদম্বের প্রচ্ছ” 

(অনুবাদ : বুদ্ধদেব বসু) শ্রী রাধিকার কৃষ্ণকে নিয়ে লীলাখেলার সবই কদম্ব গাছের নিচেবলা হয় থাকে, কদম ফুলের হালকা সুবাস অদ্ভুত এক নেশা চৈরি করে। পুরুষ ও রমণী এই নেশায় একে অন্যের প্রতি অনেক বেশি আকর্ষণ বােধ করে। 

আজকালকার তরুণতরুণীরা ফাস্টফুডের দোকানে সময় কাটাতে বেশি পছন্দ করে। তারা বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে কদম্ব তুলে যেতে পারে। 

বাংলাদেশের একজন ঔপন্যাসিকেরও কদম গাছ অতি প্রিয়তিনি তাঁর নিভৃত নিবাসে একশ’ কলমের চারা লাগিয়েছিলেন। তার স্বপ্ন, ভরাবর্ষায় তিনি কদম্বনে হাঁটবেন। দুঃখের ব্যাপার, অনেক চেষ্টা করেও তিনি কম্বন তৈরি করতে পারেন নিচারটি গাছ শুধু শেষপর্যন্ত রক্ষা পেয়েছে। এরা বর্ষায় প্রচুর ফুল ফোটায়। 

বৃক্ষকথা-পর্ব-(২)-হুমায়ুন আহমেদ

কদমের নামকরণে আসা যাককত শব্দের সঙ্গে অম্ব প্রত্যয় যোগ হয়েছে কদম্ব (ক+অস্বচ)কত্ শব্দের অর্থ বিবশতা যা বিবশতা আনে। 

কদম ফুল চিবিয়ে নৈশী করার প্রচলন আদিবাসীদের মধ্যে আছে। কদমের ছাল ঘেঁচে খেলেও নাকি নেশা হয় আমি এক বর্ষায় দুটা কদম ফুল চিবিয়ে খু করে ফেলেছিনেশা হয় নি, বমি হয়েছে। 

কদম্বের বােটানিক্যাল নাম AnthocePbauls indicus A. Rich, এই গাছ Rubiaceae ফ্যামিলিজুক্ত বিখ্যাত সিনকোনা (কুইনাইন} গাছও একই পরিবারভুক্তসিনকোনার ছাল যেমন জ্বরের উপশম করে, কদম্বের দুলিও করেনওয়াজেশ আহমেদের বইয়ে পড়লাম, মালয়েশিয়াতে জ্বরের উপশমে এখনাে ব্যবহার করা হয়। 

ভারতবর্ষে দুপ্রজাতির কদম্ব দেখা যায়। ধারা কদম্ব (Anthocephauls indicus) o (Adina cordifolia)

আয়ুর্বেদাচার্য শিবকালী ভট্টাচার্য কদমের রসায়নে লিখেছেনকদম্বে আছে দু’ধরনের অ্যাসিড় Quinonic acid এবং Cinchotanic acid. এই সঙ্গে আছে Taoins, এরা কোথায় আছে ফলে না গাছেতিনি বলেন নিআমিও তথা সংগ্রহ করতে পারি নি । 

বৃক্ষকথা-পর্ব-(২)-হুমায়ুন আহমেদ

কদম ফল যে রান্না করে খাওয়া হয়— এই তথ্য কি জানেন ? আমি জানতাম নলিনীকান্ত চক্রবর্তী ত্রিপুরার গাছপালায় লিখেছেন, কদমের ফুল রান্না করে খাওয়া হয়, তবে সহজে হজম হয় নাযারা বিচিত্র রান্নায় উৎসাহী, তারা রান্না করে দেখতে পারেন। হজমের দায়দায়িত্ব আপনাদের। 

এখন আসি ভেষজ ব্যবহারেবিন্নি ধরনের বইয়ে নানান ভেষজ ব্যবহারের উল্লেখ আছে। আমি শিবকালীর বইয়ের ভেষ ব্যবহার প্রামাণ্য ধরে উল্লেখ করছিতার প্রতি ঋণ স্বীকার করেই এগুচ্ছিহাইড্রসিলি (অণ্ডকোষ বৃদ্ধি)গাছের ছাল বেটে অণ্ডকোষে লাগিয়ে কদমপাতা দিয়ে বেঁধে রাখলে ব্যথা ফোলা দুইই কমবেটিউমার বা অৰ্বদে

কচি ছাল চন্দনের মতাে বেটে লাগাতে হবেলাগানাের আগে গরম করে নেয়া ভালাে। ক্রিমিতে কদমপাতার রস খাওয়ালে শিশুদের ক্রিমি বের হয়ে যায়। গ্রামবাংলায় এটি বহুল প্রচলিত চিকিৎসাশিবকালি বলছেন, তিনি নিজে দেখেছেন এই চিকিৎসায় Round Wormএর সঙ্গে সুতা ক্রিমি (Thread worm}-ও বের হতে স্টোমাটাইটিসে শিৱদের মুখের ঘায়ে কদম পাতা সেদ্ধ পানি দিয়ে কুলকুচা করতে হবে। .

বৃক্ষকথা-পর্ব-(২)-হুমায়ুন আহমেদ

আশার শতে, কদম্বের সবচেয়ে বড় ভেষজ গুণ মন ভালাে করে দেয়ার অদূত ক্ষমতা। পূর্ণ বর্ষায় এই গাছের নিচে দাড়ালে মনে হয়আহারে! বেঁচে থাকাই আনন্দেরএই গাছের রােগ সারাবার কোনাে প্রয়ােজন নেইসে তার সৌন্দর্য নিয়েই ঝলমল করুক। 

একটা কথা বলতে ভুলে গেছিবর্ষা ছাড়াও কিন্তু কদম ফুল ফোটেশরতে ফোটেএমনকি শীতকালেও ফোটেএক শীতে আমার সাংবাদিক বন্ধু সালেহ চৌধুরী অাশাকে একগুচ্ছ কদম উপহার দিয়ে চমকে দিয়েছিলেন। 

পশ্চিমবঙ্গের এক বিখ্যাত ঔপন্যাসিক নুহাশ পল্লীতে বেড়াতে এসেছিলেনতিনি নুহাশ পল্লীর ওষধি বাগান দেখে এক পর্যায়ে জানতে চাইলেন, গাঁজার গাছ আছেকিনা ? আমার মন খারাপ হলাে এই ভেবে যে এত গাছ জোগাড় করেছি, গাজার গাছ জোগাড় করতে পারি নিএর পর যাকেই পাই তাকেই বলি, একটা গাঁজার গছি জোগাড় করে দিতে পারেন ? যাকে বলা হয় তিনি কেমন করে যেন তাকানতাঁকে দোষ দিতে পারি নাকেমন কেমন করে তাকাবারই কথাগাঁজা নিয়ে রয়েছে বিখ্যাত লােকজ গান— 

গাজার নৌকা শূন্যের ভরে যায়অর্থ গঞ্জিকাসেবীর নৌকা পানিতে চলে না, শূন্যে উড়াল দিয়ে চলে। 

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *