বন্দু বলল, প্রতিরাতেই যে ঘুমতে হবে তার কি কোনাে মানে আছে? একটা রাত না ঘুমিয়ে দেখুন কেমন লাগে। খারাপ লাগবে না। | কথাবার্তার এই পর্যায়ে রানা উঠে বলল, নাে মিউজিক।
গান বন্ধ। অন্য যাত্রীদের সুবিধা–অসুবিধাও আমাদের দেখতে হবে। | সে চশমাপরা লােকের কাছে এগিয়ে গিয়ে বলল, ওল্ড ব্রাদার, নাে অফেন্স। যান, শুয়ে পড়ুন।
মােতালেবের গা জ্বলে গেল। ট্রেন ছাড়ার পর থেকেই রানা এই আলগা। মাতব্বরিটা করছে। সহ্যের সীমা অতিক্রম করে যাচ্ছে। কষে এর পাছায় একটা লাথি বসিয়ে দেয়া দরকার। লােকজনের সামনেই দেয়া দরকার, যাতে গাধাটার একটা শিক্ষা হয়। মাতব্বর!| মুনা জানালা দিয়ে বাইরের অন্ধকার দেখছিল।
অন্ধকারে দেখার কিছু নেই, তবু ভাল লাগছিল। ভাল বৃষ্টি হচ্ছে। বৃষ্টিও দেখা যাচ্ছে না। তবে বৃষ্টির শব্দ শুনতে খুব সুন্দর লাগছে। চলন্ত ট্রেন থেকে বৃষ্টির শব্দ যে এত সুন্দর লাগে কে জানত? . রানা এসে খট করে মুনার জানালা বন্ধ করে বলল, নাে বৃষ্টিতে ভিজাভিজি। ঘুমা। ঘুমিয়ে পড়।।
রানা এসে বসল সঞ্জুর পাশে। সঞ্জুকে খুব মনমরা লাগছে। দলের কেউ কোনো কারণে বিষন্ন হলে সেটা দেখার দায়িত্বও তার।
রূপালী দ্বীপ-পর্ব-১১
“কী হয়েছে রে সঞ্জু ? ‘কই, কিছু হয়নি তাে। ‘মন খারাপ করে বসে আছিস কেন? কী হয়েছে বল। ‘কিছু হয়নি।
‘মুনা লাফ দিয়ে ট্রেনে উঠে পড়েছে এইজন্যে মন খারাপ ? বাদ দে, বাচ্চা মেয়ে মিসটেক করে ফেলেছে। হেভি বকা দিয়ে দিয়েছি। তুই যদি মুখ ভেঁতা করে রাখিস তহলে মুনা ভাববে তার জন্যে তাের মন–খারাপ। এই কাজটা সে করল কী করে তাই আমি এখনাে বুঝতে পারছি না। এমন তাে না যে বেকুব মেয়ে ... নে
সঞ্জু, সিগারেট নে।
সঞ্জু সিগারেট নিল। মুনা কী জন্যে লাফ দিয়ে ট্রেনে উঠেছে তা সে না জানলেও অনুমান করতে পারছে। মুনার জন্যে তার খুব মায়া লাগছে।
‘বি হ্যাপি সঞ্জু, বি হ্যাপি। মন–খারাপ করে থাকবি না। আমি যাই, টিটির সঙ্গে ম্যানেজ করে আসি। টাকা খাইয়ে আসি।
‘টাকা খাওয়াবি কেন?” | ‘আমাদের মধ্যে দু‘জন আছে না – টিকেট ছাড়া? টাকা না খাওয়ালে হবে কী ভাবে? আমি অবশ্যি প্রিলিমিনারি আলাপ করে রেখেছি। চোখ–টিপি দিয়ে দিয়েছি। এইসব লক্ষ রাখতে হবে না? নয়তো চিটাগাং নামতেই ঝামেলায় পড়ে যেতাম। আমি ম্যানেজ না করলে এতসব ঝামেলা তােরা মেটাবি কী করে? তাের তাে আবার সব ভদ্রলােক। এই দেখ না, বৃষ্টি হচ্ছে অথচ সবার জানালা খােলা। ঠাণ্ডা। লেগে বুকে কফ বসে গেলে অবস্থাটা কী হবে? কোথায় পাব ডাক্তার ? কোথায় পাব অষুধ?
রানা ব্যস্ত পায়ে উঠে চলে গেল। রানা চলে যেতেই মুনা আবার তার জানালা খুলে দিল। জানালা খােলার সময় ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে লাজুক ভঙ্গিতে হাসল। সঞ্জুও হাসল।
ঝুম বৃষ্টি হচ্ছে।
রূপালী দ্বীপ-পর্ব-১১
জরীর পাশের জানালা খােলা। বৃষ্টির ছাট আসছে। আনুশকা বলল, জরী, তুই ভিজে যাচ্ছিস। জানালা বন্ধ করে দে।
জরী বলল, আমার ভিজতে ভাল লাগছে। ‘অসুখ বাধাবি। নিউমােনিয়া হবে। আমাদের সব প্রােগ্রাম বানচাল হবে।
‘সেটাও মন্দ না। মানুষের জীবনে প্রােগ্রাম ছাড়া কিছু কিছু অংশ থাকা দরকার। যে অংশে আগেভাগে কিছু ভাবা হবে না – যা হবার হবে।
আনুশকা হাসিমুখে বলল, এটা কি কোনো দার্শনিক তত্ত্ব? ‘খুবই সাধারণ তত্ত্ব। দার্শনিক–ফার্শনিক না। ‘জরী, তুই কিন্তু ভিজে ন্যাতা–ন্যাতা হয়ে গেছিস।।
জরী হালকা গলায় বলল, তুই একটা প্রসঙ্গ নিয়ে এত কথা বলিস যে, রাগ লাগে। কথা বলার তাে আরাে বিষয় আছে।
‘আচ্ছা যা, এই প্রসঙ্গে আর কথা বলব না। শুভ্রকে দেখছি না কেন রে জরী? শুভ্র কোথায় গেল?
‘যাবে আবার কোথায়? ট্রেনেই আছে। মনে হয় এক কামরা থেকে আরেক কামরায় সিগারেট হাতে ঘুরে বেড়াচ্ছে।‘
‘ওর এমন একা ঘুরে বেড়ানাে ঠিক না। চোখে কম দেখে।
জরী হেসে ফেলল। আনুশকা বলল, হাসছিস কেন? ‘তাের মাতৃভাব দেখে হাসছি। তাের মধ্যে একটা দলপতি–দলপতি ব্যাপার আছে। সব সময় লক্ষ করেছি, আমরা কোথাও গেলেই তুই দলপতি সেজে
রূপালী দ্বীপ-পর্ব-১১
ফেলিস। সব চিন্তা–ভাবনা নিজের মাথায়। আমাকে নিয়ে ভাবছিস, আবার শুভ্রকে নিয়ে ভাবছিস। এত কিসের ভাবাভাবি? আমরা সবাই রাজা।
‘আচ্ছা যা, আর ভাবব না। ‘না ভেবে তুই পারবি না। ব্যাপারটা রক্তের মধ্যে ঢুকে আছে।
আনুশকা বলল, জানালা পুরােটা খােলা না রেখে হাফ খুলে রাখ। তুই একেবারে গােসল করে ফেলেছিস।
জরী জানালা বন্ধ করে উঠে দাঁড়াল। আনুশকা বলল, যাচ্ছিস কোথায় ? ‘অন্য কোথাও গিয়ে বসব। যেখানে আমার মাতৃসম কেউ থাকবে না। কেউ আমাকে ক্রমাগত উপদেশ দেবে না।
‘স্যরি। এখানেই বােস। জানালা পুরােপুরি খুলে দে। আমি আর কিছু বলব না। ওয়ার্ড অব অনার।
‘না, তাের পাশে বসব না। | জারী হাঁটতে শুরু করল। দলের পুরুষদের মধ্যে শুধু মােতালেবকে দেখা যাচ্ছে। সে ইতিমধ্যে শােবার ব্যবস্থা করে ফেলেছে।
Read more