রূপালী দ্বীপ-হুমায়ূন আহমেদ-(পর্ব-১১)

বন্দু বলল, প্রতিরাতেই যে ঘুমতে হবে তার কি কোনাে মানে আছে? একটা রাত না ঘুমিয়ে দেখুন কেমন লাগেখারাপ লাগবে না| কথাবার্তার এই পর্যায়ে রানা উঠে বলল, নাে মিউজিক

রূপালী দ্বীপগান বন্ধঅন্য যাত্রীদের সুবিধাঅসুবিধাও আমাদের দেখতে হবে| সে চশমাপরা লােকের কাছে এগিয়ে গিয়ে বলল, ওল্ড ব্রাদার, নাে অফেন্সযান, শুয়ে পড়ুন। 

মােতালেবের গা জ্বলে গেল। ট্রেন ছাড়ার পর থেকেই রানা এই আলগামাতব্বরিটা করছেসহ্যের সীমা অতিক্রম করে যাচ্ছেকষে এর পাছায় একটা লাথি বসিয়ে দেয়া দরকারলােকজনের সামনেই দেয়া দরকার, যাতে গাধাটার একটা শিক্ষা হয়মাতব্বর!| মুনা জানালা দিয়ে বাইরের অন্ধকার দেখছিল

অন্ধকারে দেখার কিছু নেই, তবু ভাল লাগছিলভাল বৃষ্টি হচ্ছেবৃষ্টিও দেখা যাচ্ছে নাতবে বৃষ্টির শব্দ শুনতে খুব সুন্দর লাগছেচলন্ত ট্রেন থেকে বৃষ্টির শব্দ যে এত সুন্দর লাগে কে জানত? . রানা এসে খট করে মুনার জানালা বন্ধ করে বলল, নাে বৃষ্টিতে ভিজাভিজিঘুমাঘুমিয়ে পড়। 

রানা এসে বসল সঞ্জুর পাশেসঞ্জুকে খুব মনমরা লাগছেদলের কেউ কোনো কারণে বিষন্ন হলে সেটা দেখার দায়িত্বও তার। 

রূপালী দ্বীপ-পর্ব-১১

কী হয়েছে রে সঞ্জু ? কই, কিছু হয়নি তােমন খারাপ করে বসে আছিস কেন? কী হয়েছে বলকিছু হয়নি। 

মুনা লাফ দিয়ে ট্রেনে উঠে পড়েছে এইজন্যে মন খারাপ ? বাদ দে, বাচ্চা মেয়ে মিসটেক করে ফেলেছেহেভি বকা দিয়ে দিয়েছিতুই যদি মুখ ভেঁতা করে রাখিস তহলে মুনা ভাববে তার জন্যে তাের মনখারাপএই কাজটা সে করল কী করে তাই আমি এখনাে বুঝতে পারছি নাএমন তাে না যে বেকুব মেয়ে ... নে 

সঞ্জু, সিগারেট নে। 

সঞ্জু সিগারেট নিলমুনা কী জন্যে লাফ দিয়ে ট্রেনে উঠেছে তা সে না জানলেও অনুমান করতে পারছেমুনার জন্যে তার খুব মায়া লাগছে। 

বি হ্যাপি সঞ্জু, বি হ্যাপিমনখারাপ করে থাকবি নাআমি যাই, টিটির সঙ্গে ম্যানেজ করে আসিটাকা খাইয়ে আসি। 

টাকা খাওয়াবি কেন?| আমাদের মধ্যে দুজন আছে না টিকেট ছাড়া? টাকা না খাওয়ালে হবে কী ভাবে? আমি অবশ্যি প্রিলিমিনারি আলাপ করে রেখেছিচোখটিপি দিয়ে দিয়েছিএইসব লক্ষ রাখতে হবে না? নয়তো চিটাগাং নামতেই ঝামেলায় পড়ে যেতামআমি ম্যানেজ না করলে এতসব ঝামেলা তােরা মেটাবি কী করে? তাের তাে আবার সব ভদ্রলােকএই দেখ না, বৃষ্টি হচ্ছে অথচ সবার জানালা খােলাঠাণ্ডালেগে বুকে কফ বসে গেলে অবস্থাটা কী হবে? কোথায় পাব ডাক্তার ? কোথায় পাব অষুধ

রানা ব্যস্ত পায়ে উঠে চলে গেলরানা চলে যেতেই মুনা আবার তার জানালা খুলে দিলজানালা খােলার সময় ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে লাজুক ভঙ্গিতে হাসলসঞ্জুও হাসল। 

ঝুম বৃষ্টি হচ্ছে। 

রূপালী দ্বীপ-পর্ব-১১

জরীর পাশের জানালা খােলাবৃষ্টির ছাট আসছেআনুশকা বলল, জরী, তুই ভিজে যাচ্ছিসজানালা বন্ধ করে দে। 

জরী বলল, আমার ভিজতে ভাল লাগছে। অসুখ বাধাবিনিউমােনিয়া হবেআমাদের সব প্রােগ্রাম বানচাল হবে। 

সেটাও মন্দ নামানুষের জীবনে প্রােগ্রাম ছাড়া কিছু কিছু অংশ থাকা দরকারযে অংশে আগেভাগে কিছু ভাবা হবে না যা হবার হবে। 

আনুশকা হাসিমুখে বলল, এটা কি কোনো দার্শনিক তত্ত্ব? খুবই সাধারণ তত্ত্বদার্শনিকফার্শনিক নাজরী, তুই কিন্তু ভিজে ন্যাতান্যাতা হয়ে গেছিস। 

জরী হালকা গলায় বলল, তুই একটা প্রসঙ্গ নিয়ে এত কথা বলিস যে, রাগ লাগেকথা বলার তাে আরাে বিষয় আছে। 

আচ্ছা যা, এই প্রসঙ্গে আর কথা বলব নাশুভ্রকে দেখছি না কেন রে জরী? শুভ্র কোথায় গেল

যাবে আবার কোথায়? ট্রেনেই আছেমনে হয় এক কামরা থেকে আরেক কামরায় সিগারেট হাতে ঘুরে বেড়াচ্ছে‘ 

ওর এমন একা ঘুরে বেড়ানাে ঠিক নাচোখে কম দেখে। 

জরী হেসে ফেললআনুশকা বলল, হাসছিস কেন? তাের মাতৃভাব দেখে হাসছিতাের মধ্যে একটা দলপতিদলপতি ব্যাপার আছেসব সময় লক্ষ করেছি, আমরা কোথাও গেলেই তুই দলপতি সেজে 

রূপালী দ্বীপ-পর্ব-১১

ফেলিসসব চিন্তাভাবনা নিজের মাথায়আমাকে নিয়ে ভাবছিস, আবার শুভ্রকে নিয়ে ভাবছিসএত কিসের ভাবাভাবি? আমরা সবাই রাজা। 

আচ্ছা যা, আর ভাবব নানা ভেবে তুই পারবি নাব্যাপারটা রক্তের মধ্যে ঢুকে আছে। 

আনুশকা বলল, জানালা পুরােটা খােলা না রেখে হাফ খুলে রাখতুই একেবারে গােসল করে ফেলেছিস। 

জরী জানালা বন্ধ করে উঠে দাঁড়ালআনুশকা বলল, যাচ্ছিস কোথায় ? অন্য কোথাও গিয়ে বসবযেখানে আমার মাতৃসম কেউ থাকবে নাকেউ আমাকে ক্রমাগত উপদেশ দেবে না। 

স্যরিএখানেই বােসজানালা পুরােপুরি খুলে দেআমি আর কিছু বলব নাওয়ার্ড অব অনার। 

না, তাের পাশে বসব না| জারী হাঁটতে শুরু করলদলের পুরুষদের মধ্যে শুধু মােতালেবকে দেখা যাচ্ছেসে ইতিমধ্যে শােবার ব্যবস্থা করে ফেলেছে

 

Read more

রূপালী দ্বীপ-হুমায়ূন আহমেদ-(পর্ব-১২)

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *