টুকটুক করে টোকা পড়ছে দরজায়। | তার মানে যে এসেছে সে পরিচিত কেউ নয়। পরিচিতরা ডােরবেল বাজায়। ডােরবেলটি এমন জায়গায় যে অচেনা কারাের চোখে পড়ে না।
আনিসের মনে হলাে যে এসেছে সে একজন মহিলা। শুধুমাত্র মেয়েরাই দরজায় দু’বার টোকা দিয়ে অনেকক্ষণ অপেক্ষা করে তৃতীয়বার টোকা দেয়। ছেলেদের এত ধৈর্য নেই।
আনিস দরজা খুলে দিল। একটি মেয়েই দাড়িয়ে আছে, মালিশা। দিনের আলােয় তাকে একেবারেই চেনা যাচ্ছে না। তার উপর সে বেশ সাজগােজ করেছে। কাধে লাল টকটকে ভেলভেটের ব্যাগ। সােনালি চুলগুলিকে লম্বা বেনি করে কাধের দু‘পাশে ঝুলিয়ে দিয়েছে। রাতের আলােয় যতটা অল্প অল্প বয়েসী মনে হয়েছিল এখন অবশ্যি সে রকম লাগছে না ।
তুমি কি আমাকে চিনতে পারছ ? তা পারছি। তুমি মালিশা। মালিশা গিলবার্ড। আমি কি ভেতরে এসে বসতে পারি ? হ্যা পার। মেয়েটি ঘরে ঢুকেই বললাে, তুমি সন্ধ্যাবেলা ফ্রী আছ ? কেন বলতাে ? আমি তােমাকে কোন একটি ভাল রেস্টুরেন্টে নিয়ে যেতে চাই। আজ আমার জন্মদিন। শুভ জন্মদিন মালিশা। ধন্যবাদ। তুমি কি যাবে আমার সঙ্গে ? আনিস ইতস্তত করতে লাগলাে। তােমার ইচ্ছা না হলে যেতে হবে না। আনিস বললাে, কোথায় যেতে চাও?
আমার পকেটে চল্লিশ ডলার আছে। এর মধ্যে হয় এরকম কোনাে রেস্টুরেন্টে। ম্যাক্সিকান খাবার তােমার পছন্দ হয় ? সেগুলি বেশ সস্তা।
ম্যাক্সিকান খাবার আমার খুব পছন্দ।
তােমাকে খুব একটা ভাল রেস্টুরেন্টে নেওয়ার ইচ্ছা ছিল আমার। কিন্তু কী করব বল ? রােজগারপাতি নেই। হাই স্কুল পাশ করি নি। কাজেই রেস্টুরেন্টের ওয়েট্রেস আর বেবী সিটিং–এর বেশি কিছু পাই না। চল্লিশ ডলার জমাতে হলে আমাকে দু‘মাস রােজ আট ঘণ্টা করে কাজ করতে হয়।
সবাই গেছে বনে- হুমায়ূন আহমেদ
আনিস বললাে, তুমি যদি কিছু মনে না কর তাহলে আমি বরং ডিনারটা কিনি। মালিশা হেসে ফেললাে।
এখন আমার অবস্থা খুবই খারাপ। কিন্তু শীগগীরই আমি মাল্টি মিলিওনিয়ার হচ্ছি। কাজেই টাকা খরচ করতে মায়া লাগে না আমার।
আনিস বললাে, মিলিওনিয়ার সত্যি সত্যি হচ্ছ তুমি ?
ইউ বেট। আমার মা ডলারের বস্তার উপর শুয়ে আছে। আমাকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে যদি বিষটিষ খাইয়ে দেই। আমিও বুড়িকে ভজিয়ে ভজিয়ে রাখছি। প্রতি সপ্তাহে চিঠি দেই— মা তােমার শরীর কেমন আছে ? ঠিকমত ওষুধপত্র খাচ্ছ তাে ? গরমের সময় অবশ্যই হাওয়াই থেকে ঘুরে আসবে। হা হা হা।
আনিস হেসে ফেললাে। মালিশা বললাে, বুড়াে বুড়ি হলেই মানুষ এরকম হয়ে যায়। ডলারই তখন প্রধান হয়ে দাঁড়ায়। জীবন দিয়ে ডলার আগলে রাখে। আমার মতে পঞ্চাশ এর উপর বয়স হলেই তাকে ঘাড় ধরে একটা নির্জন দ্বীপে ফেলে দিয়ে আসা উচিত। না না আমি খুব সিরিয়াস। জান তুমি আমার মার কত টাকা আছে ? আন্দাজ করতে পার?
মা দু‘নম্বর বিয়ে করে একজন পােল ব্যবসায়ীকে। তার হচ্ছে সী কার্গোর ব্যবসা। আমার স্টেপ ফাদার মারা যাবার পর সব কিছু আমার মা পেয়েছে। তার মধ্যে আছে রাজপ্রাসাদের মত দুটি বাড়ি। একটি ফ্লোরিডাতে অন্যটি বােহেমিয়া আইল্যান্ডে। মা সব কিছু বিক্রি করে ডলার বানিয়ে ব্যাংকে জমা করেছে। নিজে গিয়ে উঠেছে ওল্ড হােমে। সস্তায় থাকা খাওয়া যায় । বিশ্বাস করতে পার ?
সবাই গেছে বনে- হুমায়ূন আহমেদ
বিশ্বাস করা কঠিন।
আমি তারই মেয়ে। আর দেখ চল্লিশটি ডলার খরচ করতে আমার গায়ে লাগছে।
আনিস দেখলাে মেয়েটির চোখ ছলছল করছে। আমেরিকান মেয়ে কাঁদবে না ঠিকই। এরা মচকাতে জানে না। আনিস বললাে, ছ‘টার আগে নিশ্চয়ই তুমি খেতে যাবে না? কফি খাও একটু ?
দাও। কফিতে দুধ চিনি দাও তুমি ? দু‘চামচ চিনি। দুধ চাই না।
আনিস কফি বানাতে বানাতে বললাে, মিলিওনিয়ার যখন হবে তখন এত টাকা খরচ করবে কীভাবে?
প্রথমেই প্লাস্টিক সার্জারী করব। আমার বুক দুটি বড়ই ছােট। সিলিকোন ব্যাগ দিয়ে বড় করব। আমাকে দেখে অবশ্যি বােঝা যায় না আমার বুক এত ছােট। আমি অন্য ধরনের ব্রা ব্যবহার করি। ফোম ব্রা।
ও আচ্ছা।
এই ব্রাতে ছােট বুকও খুব এট্রাকটিভ মনে হয়। ব্রা খুললেই তুমি হতাশ হবে। দেখতে চাও?
না ঠিক আছে বিশ্বাস হচ্ছে তােমার কথা। তাছাড়া আমার নাকটাও বেশি ভাল না। মনে হয় অনেকখানি ঝুলে আছে। তাই না ? আমার তাে মনে হয় না।
তােমার সৌন্দর্যবােধ নেই তাই বুঝতে পারছ না। নাকটা অল্প একটু তুলে দিলেই সব বদলে যাবে।
কেমন বদলাবে। | যেমন ধর তখন যদি তােমাকে বলি—ব্রা খুললেই দেখবে আমার বুক দুটি টাইনি তুমি দেখতে চাও ? তুমি বলবে— তাই নাকি? কই দেখি তাে ?
আনিস খানিকক্ষণ চুপ করে থেকে বললাে, মালিশা তুমি বেশ বুদ্ধিমতী।
Read more