সবাই গেছে বনে- হুমায়ূন আহমেদ -(পর্ব-১১)

টুকটুক করে টোকা পড়ছে দরজায়| তার মানে যে এসেছে সে পরিচিত কেউ নয়পরিচিতরা ডােরবেল বাজায়ডােরবেলটি এমন জায়গায় যে অচেনা কারাের চোখে পড়ে না। 

সবাই গেছে বনে

আনিসের মনে হলাে যে এসেছে সে একজন মহিলাশুধুমাত্র মেয়েরাই দরজায় দুবার টোকা দিয়ে অনেকক্ষণ অপেক্ষা করে তৃতীয়বার টোকা দেয়ছেলেদের এত ধৈর্য নেই। 

আনিস দরজা খুলে দিলএকটি মেয়েই দাড়িয়ে আছে, মালিশাদিনের আলােয় তাকে একেবারেই চেনা যাচ্ছে নাতার উপর সে বেশ সাজগােজ করেছেকাধে লাল টকটকে ভেলভেটের ব্যাগসােনালি চুলগুলিকে লম্বা বেনি করে কাধের দুপাশে ঝুলিয়ে দিয়েছেরাতের আলােয় যতটা অল্প অল্প বয়েসী মনে হয়েছিল এখন অবশ্যি সে রকম লাগছে না । 

তুমি কি আমাকে চিনতে পারছ ? তা পারছিতুমি মালিশামালিশা গিলবার্ডআমি কি ভেতরে এসে বসতে পারি ? হ্যা পারমেয়েটি ঘরে ঢুকেই বললাে, তুমি সন্ধ্যাবেলা ফ্রী আছ ? কেন বলতাে ? আমি তােমাকে কোন একটি ভাল রেস্টুরেন্টে নিয়ে যেতে চাইআজ আমার জন্মদিনশুভ জন্মদিন মালিশাধন্যবাদতুমি কি যাবে আমার সঙ্গে ? আনিস ইতস্তত করতে লাগলােতােমার ইচ্ছা না হলে যেতে হবে নাআনিস বললাে, কোথায় যেতে চাও

আমার পকেটে চল্লিশ ডলার আছেএর মধ্যে হয় এরকম কোনাে রেস্টুরেন্টেম্যাক্সিকান খাবার তােমার পছন্দ হয় ? সেগুলি বেশ সস্তা। 

ম্যাক্সিকান খাবার আমার খুব পছন্দ। 

তােমাকে খুব একটা ভাল রেস্টুরেন্টে নেওয়ার ইচ্ছা ছিল আমারকিন্তু কী করব বল ? রােজগারপাতি নেইহাই স্কুল পাশ করি নিকাজেই রেস্টুরেন্টের ওয়েট্রেস আর বেবী সিটিংএর বেশি কিছু পাই নাচল্লিশ ডলার জমাতে হলে আমাকে দুমাস রােজ আট ঘণ্টা করে কাজ করতে হয়। 

সবাই গেছে বনে- হুমায়ূন আহমেদ

আনিস বললাে, তুমি যদি কিছু মনে না কর তাহলে আমি বরং ডিনারটা কিনিমালিশা হেসে ফেললাে। 

এখন আমার অবস্থা খুবই খারাপকিন্তু শীগগীরই আমি মাল্টি মিলিওনিয়ার হচ্ছিকাজেই টাকা খরচ করতে মায়া লাগে না আমার। 

আনিস বললাে, মিলিওনিয়ার সত্যি সত্যি হচ্ছ তুমি

ইউ বেটআমার মা ডলারের বস্তার উপর শুয়ে আছেআমাকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে যদি বিষটিষ খাইয়ে দেইআমিও বুড়িকে ভজিয়ে ভজিয়ে রাখছিপ্রতি সপ্তাহে চিঠি দেইমা তােমার শরীর কেমন আছে ? ঠিকমত ওষুধপত্র খাচ্ছ তাে ? গরমের সময় অবশ্যই হাওয়াই থেকে ঘুরে আসবেহা হা হা। 

আনিস হেসে ফেললােমালিশা বললাে, বুড়াে বুড়ি হলেই মানুষ এরকম হয়ে যায়ডলারই তখন প্রধান হয়ে দাঁড়ায়জীবন দিয়ে ডলার আগলে রাখেআমার মতে পঞ্চাশ এর উপর বয়স হলেই তাকে ঘাড় ধরে একটা নির্জন দ্বীপে ফেলে দিয়ে আসা উচিতনা না আমি খুব সিরিয়াসজান তুমি আমার মার কত টাকা আছে ? আন্দাজ করতে পার

মা দুনম্বর বিয়ে করে একজন পােল ব্যবসায়ীকেতার হচ্ছে সী কার্গোর ব্যবসাআমার স্টেপ ফাদার মারা যাবার পর সব কিছু আমার মা পেয়েছেতার মধ্যে আছে রাজপ্রাসাদের মত দুটি বাড়িএকটি ফ্লোরিডাতে অন্যটি বােহেমিয়া আইল্যান্ডেমা সব কিছু বিক্রি করে ডলার বানিয়ে ব্যাংকে জমা করেছেনিজে গিয়ে উঠেছে ওল্ড হােমেসস্তায় থাকা খাওয়া যায় বিশ্বাস করতে পার

সবাই গেছে বনে- হুমায়ূন আহমেদ

বিশ্বাস করা কঠিন। 

আমি তারই মেয়েআর দেখ চল্লিশটি ডলার খরচ করতে আমার গায়ে লাগছে। 

আনিস দেখলাে মেয়েটির চোখ ছলছল করছেআমেরিকান মেয়ে কাঁদবে না ঠিকইএরা মচকাতে জানে নাআনিস বললাে, টার আগে নিশ্চয়ই তুমি খেতে যাবে না? কফি খাও একটু

দাওকফিতে দুধ চিনি দাও তুমি ? দুচামচ চিনিদুধ চাই না। 

আনিস কফি বানাতে বানাতে বললাে, মিলিওনিয়ার যখন হবে তখন এত টাকা খরচ করবে কীভাবে

প্রথমেই প্লাস্টিক সার্জারী করবআমার বুক দুটি বড়ই ছােটসিলিকোন ব্যাগ দিয়ে বড় করবআমাকে দেখে অবশ্যি বােঝা যায় না আমার বুক এত ছােটআমি অন্য ধরনের ব্রা ব্যবহার করিফোম ব্রা। 

আচ্ছা। 

এই ব্রাতে ছােট বুকও খুব এট্রাকটিভ মনে হয়ব্রা খুললেই তুমি হতাশ হবেদেখতে চাও

না ঠিক আছে বিশ্বাস হচ্ছে তােমার কথাতাছাড়া আমার নাকটাও বেশি ভাল নামনে হয় অনেকখানি ঝুলে আছেতাই না ? আমার তাে মনে হয় না। 

তােমার সৌন্দর্যবােধ নেই তাই বুঝতে পারছ নানাকটা অল্প একটু তুলে দিলেই সব বদলে যাবে। 

কেমন বদলাবে| যেমন ধর তখন যদি তােমাকে বলিব্রা খুললেই দেখবে আমার বুক দুটি টাইনি তুমি দেখতে চাও ? তুমি বলবেতাই নাকি? কই দেখি তাে

আনিস খানিকক্ষণ চুপ করে থেকে বললাে, মালিশা তুমি বেশ বুদ্ধিমতী। 

 

Read more

সবাই গেছে বনে- হুমায়ূন আহমেদ -(পর্ব-১২)

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *