সবাই গেছে বনে- হুমায়ূন আহমেদ -(পর্ব-৯)

ব্যাপার কী সফিক

আরে আনিস ভাই আজকে ফার্মেসি ডিপার্টমেন্টে একটা চাকরির খোঁজে এসেছিলামশুনি ইন্টারন্যাশনাল উইক হচ্ছে, বাংলাদেশের একটা কিছু না থাকলে দেশের বেজ্জতিআমার নিজের কাছে যা ছিল নিয়ে চলে এসেছি

সবাই গেছে বনে

বল কী

জিনিস কম থাকায় সুবিধা হয়েছেদেশটা কোথায় কী এইসব সবাই জানতে চাচ্ছেহা হা হানামটা তাে জানলাে কী বলেন

খালি টেবিল নিয়ে সাতদিন বসে থাকবে বুঝি

আরে নাআজ বিকালেই রুনকিদের বাড়ি থেকে এক গাদা জিনিসপত্র নিয়ে আসব দেখবেনহুলুস্থুল কারবার করবএক মালয়েশিয়ান আমার স্টলের সামনে এসে দাঁত বের করে হাসছিলােশালার অবস্থাটা কী হয় কালকে দেখবেনরুনকিকে নিয়ে আসবদেশের ইজ্জতের একটা ব্যাপারআনিস হাসি মুখে বললাে, তােমার চাকরির কী ব্যবস্থা হবে ? এই সাতদিন আর যাচ্ছ না সেখানে

আরে ভাই রাখেন চাকরিমাথার ঘায়ে কুত্তা পাগল অবস্থা এখনলােকজন কেউ কেউ এসে দাঁড়াচ্ছেও স্টলের সামনেকেউ কেউ বিস্মিত হয়ে বলছে

কোন দেশের স্টল এটি

বাংলাদেশেরকোথায় সেটি ? প্যাসিফিক আইল্যান্ড

এশিয়া মহাদেশেকত বড় দেশ সেটি ? কত স্কয়ার মাইল ? কালকে বলতে পারবকাল আসবেনলােক সংখ্যা কত? আগামীকাল জানতে পারবেনসব লিখে টাঙ্গিয়ে দেয়া হবে। 

আনিস দূর থেকে দেখলাে লােকজন আসছে না সফিকের স্টলেতবে বুড়াে বুড়িরা কিছু কিছু আসছেতারা আবার দীর্ঘ সময় দাড়িয়ে দাঁড়িয়ে সফিকের বক্তৃতা শুনছে। 

দেশটা অত্যন্ত সুন্দরসবুজ গাঢ় সবুজসমুদ্র আর নদীবনে ঘুরে বেড়ায় ইয়া ইয়া রয়েল বেঙ্গল টাইগারআগামী কাল যদি আসেন তবে সেই রয়েল বেঙ্গলের ছবিও দেখতে পাবেনদয়া করে আসবেনভুলবেন না। 

সফিকের কাণ্ড কারখানাই অন্যরকম| পাঁচটা ডলার পকেটে নিয়ে ফার্গোতে এসে এক মাসের মধ্যে দুচল্লিশ ডলার দিয়ে গাড়ি কিনে ফেললােআমিন সাহেব খবর পেয়ে বিরক্ত হলেন খুব, গাড়ি কিনলে গাড়ির দরকারটা কী তােমার

সবাই গেছে বনে- হুমায়ূন আহমেদ 

সফিক মাথা চুলকে বলছে, দেশের সম্মানের জন্যেই কাজটা করলামদেশের সম্মান ? দেশের সম্মান মানে ? গরিব দেশ গরিব দেশ করে তাে, বুঝলেন না শালাদের দেখিয়ে দিলাম আর কী ? তােমার দুচল্লিশ ডলারের গাড়ি দিয়ে ওদের দেখিয়ে দিলে ? চালাতে জান গাড়ি ? শিখব। 

এখানেই শেষ নয়, আর্টসের ছাত্র কীভাবে সায়েন্সের কম্বিনেশনে চার পাঁচটা সাবজেক্ট নিয়ে ফেললােআমেরিকায় এসে ইতিহাস ভূগােল পড়ে লাভটা কী ? পড়তে হলে পড়তে হয় ফিজিক্স কেমিস্ট্রি কম্পুটার সায়েন্স। 

মিড টার্মের রেজাল্ট হওয়ার পর ফরেন স্টুডেন্ট এডভাইজার টয়লা ক্লিন ডেকে পাঠালেন সফিককেরেজাল্ট ভয়াবহ তিনটি ডি এবং একটি সি। 

সফিক তােমার দেশ কোথায় ? সফিক গম্ভীর হয়ে বললাে, ইণ্ডিয়া ম্যাডামক্যালকাটা সিটি। 

টয়লা ক্লিন কাগজপত্র ঘেঁটে সফিকের চেয়েও গম্ভীর হয়ে বললেন, কিন্তু আমার কাছে যেসব কাগজপত্র আছে সেখানে লেখা বাংলাদেশ। 

সফিক মাথা চুলকায় জবাব দেয় না। 

তুমি কি দয়া করে ব্যাপারটা আমার কাছে এক্সপ্লেইন করবে

রেজাল্ট যা হয়েছে ম্যাডাম এতে দেশের একটা বদনাম হয়ে যায় এই জন্যেই বলি ইণ্ডিয়া। 

টয়লা ক্লিনের গাম্ভীর্য মনে হয় খসে পড়ছেঠোটের কোণায় মৃদু হাসিতােমার দেশের সব ছাত্র বুঝি পায়

ম্যাডাম আমার দেশের ছাত্ররা সব বাঘের বাচ্চাযে কোনাে আমেরিকান স্ট্রেইট ছেলেমেয়েদের এরা কুৎ করে পানি দিয়ে গিলে ফেলবে। 

তােমার কথা ঠিক বুঝতে পারলাম না। 

অর্থাৎ এরা খুব মারাত্মকএকেবারে গ্রীন পেপার। 

টয়লা ক্লিন বলে দিলেন ফাইন্যালে যে করেই হােক এভারেজ সি থাকতেই হবেজিপিএ ২এর কম হলে ভিসা রিনিউ হবে না। দেশে ফিরে যেতে হবে । 

বাইরে দিনে ছয় সাত ঘণ্টা কাজ করে পড়ারই সময় পাই না ম্যাডামকোথায় কাজ কর তুমি ? নিক্স প্লেসেবিয়ার বিক্রি হয় সেখানে। 

 

Read more

সবাই গেছে বনে- হুমায়ূন আহমেদ -(পর্ব-১০)

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *