সাতকাহন পর্ব-(১৯)-সমরেশ মজুমদার

সাতকাহন

এই যেমন তাকে শেষপর্যন্ত অর্জুন নায়েকের সাহায্য নিতেই হল। প্রথমে সাহায্যটাকে ঘুষ বলে মনে হলেও সেটাকে এড়ানাে গেল না বলেই সাহায্য হিসেবে ভাবতে ভাল লাগছে। সতীশবাবুকে আজ রাত্রে হাসপাতালে একা ফেলে রাখা খুব অন্যায় হত । আবার এমনও হতে পারে, অর্জুন সম্পর্কে নানান কুকথা শুনে তার প্রতি বিরূপ হয়েছে সে, হয়ত লােকটা তার সঙ্গে সত্যি সত্যি ভাল ব্যবহার করতে চায় ! 

মনােরমা বলতেন, ‘ঘরে থাকবি ঘরের মত, বাইরে বাইরের মত । এ দুটোকে কখনই এক করবি না। শশাওয়ার আগে নিজে বিছানায় বসবি না, কাউকে বসতে দিবি না। রাত্রে ঠিকঠাক করে রাখা নরম বিছানায় শুয়ে যে আরাম পাবি সেই একই বিছানা ব্যবহার করার পরে ভােরবেলায় তােকে শুতে দিলে কি সেই আরাম লাগবে ? তার মানে সব কিছু তাের কাছে আলাদা যত্ন চায়। যত্ন করলে সে-ও তােকে খুশী করবে, বুঝলি ।। 

মনােরমা এককালে রাত্রে শুয়ে শুয়ে এমন অনেক কথা বলতেন। তখন শুনতে ভাল লাগত না। অন্যমনস্ক হয়ে প্রায়ই সে ঘুমিয়ে পড়ত। এখন তার কিছু কিছু বড় সত্যি বলে মনে হয়। মনােরমা হয়তাে একটা মানে ভেবে ওসব বলতেন এখন সেটা আর একটা অর্থ তৈরী করে। আজ এই মুহূর্তে মনােরমাকে খুব মনে পড়ছিল দীপাবলীর। এখন অবশ্য মনােরমা তাকে মাসে একখানা হলেও চিঠি দেন।

সাতকাহন পর্ব-(১৯)

চাকরি পাওয়ার খবরে উল্লসিত হয়েছিলেন। দীপাবলী লিখেছিল, কে বলতে পারে তাকে হয়তাে জলপাইগুড়ি জেলায় কখনও বদলি করতে পারেন সরকার। সেরকম হলে মনােরমা বেশী খুশী হবেন বলে জানিয়েছিলেন। চাকরি পাওয়ার পর দীপাবলী মনােরমাকে লিখেছিল, তিনি যদি ইচ্ছে করেন তাহলে তার কাছে এসে থাকতে পারেন। মনােরমা জবাবে লিখেছিলেন, বউমা তাঁকে কিছুতেই ছাড়তে রাজি নন।

অমরনাথের বড় ছেলে স্কুল ফাইনাল পাশ করামাত্র কোম্পানি চা বাগানে ডেকে নিয়ে চাকরি দিয়েছে। এখন বউমাও তাঁর সেবাযত্ন করে। এই অবস্থায়, তাদের ছেড়ে তাঁর পক্ষে অন্য কোথাও গিয়ে থাকা সম্ভব নয়। মনােরমাকে আমন্ত্রণ জানানাের সময় সে নিশ্চয়ই আন্তরিক ছিল কিন্তু পরে মনে হয়েছে তার কাছে এলে মনােরমা নিশ্চয়ই খুব স্বস্তি পেতেন না। তাঁর যাবতীয় শুচিবায়ুতা এখানে এসে প্রতি পদে আঘাত পেত। 

রাত দশটায় দুজন গ্রাম্য মানুষ এসে ডাকাডাকি করতে লাগল। 

বিছানায় শুয়ে কখন ঘুমিয়ে পড়েছিল দীপাবলী নিজেই জানে না। তিরিও তাকে খেতে ডাকেনি। ঘুম ভাঙার পর মনে হল, মধ্যরাত। ঘরে হ্যারিকেন জ্বলছে। ডাক শুনেছিল তিরিও। সে শুয়েছিল মেঝেতে, ধড়মড় করে উঠে বসল। দীপাবলী তাকে জিজ্ঞাসা করল, ‘কে ডাকছে রে ? 

সাতকাহন পর্ব-(১৯)

দরজা খুলে দেখ?’ তিরি উঠে দাড়াল। 

ভেতর থেকে জিজ্ঞাসা কর। তিনি বাইরের ঘরে গিয়ে উচিয়ে পরিচয় জানতে চাইলে দেশীয় গলায় জবাব মিলল। নেখালির দুজন মানুষ এসেছে। নাম শােনামাত্র ছুটে এল তিরি দীপাবলীর কাছে, ওরা এসেছে, নিশ্চয়ই ঝামেলা করবে! 

ঝামেলা করবে কেন ? ‘আমার জন্যে। 

দীপাবলীর খুব রাগ হয়ে গেল। এই মেয়েটা এখানে থেকেও মাঝেমাঝেই আততি হয়। গ্রামের মানুষ এসে তাকে সুখের জগৎ থেকে টেনে নিয়ে যাবে এইরকম ধারণা ওর মন থেকে সরছে না। আর লােকদুটো যদি সত্যি ঝামেলা করতে আসে তাহলে ওদের শায়েস্তা করার ক্ষমতা দীপাবলীর আছে। কিন্তু ঠিক এই মুহুর্তে সে-ও অসহায়। পুলিশের সাহায্য তাে আগামীকালের আগে পাওয়া যাবে না। 

সে সােজা বাইরের ঘরে গিয়ে দরজা খুলে হ্যারিকেন উচিয়ে ধরতেই দুটো লােক কপালে হাত ঠেকিয়ে নমস্কার করল। দীপাবলী উচু গলায় প্রশ্ন করল, কি চাই? 

একজন বলল, একজন বাবু আমাদের গ্রামে মাঠের ওপর শুয়ে আছে। বাবু বলছে আপনার সঙ্গে জানাশােনা আছে। 

‘মাঠের ওপর শুয়ে আছে ? চমকে উঠল দীপাবলী। ‘হ্যাঁ । দিনভর খড়িয়া খেয়েছে, খাইয়েছে সবাইকে। এখন আর উঠতে পারছে না। আপনার নাম শুনে খবর দিতে এলাম। 

‘এখনও মাঠেই শুয়ে আছে ? ‘হ্যাঁ। নেশা মাথায় উঠে গিয়েছে, হাঁটতে পারছে না। ঠোঁট কামড়াল দীপাবলী । তারপর শেষ সংশয় থেকেই প্রশ্ন করল, ‘কিরকম দেখতে ? ‘লম্বা, পাজামা পাঞ্জাবি পরেছে। নিঃশ্বাস ফেলল দীপাবলী। তারপর বলল, এতদুরে তাে এই রাত্রে ওকে নিয়ে আসা সম্ভব নয়। তােমরা যদি ওকে কোন ঘরে রাতটা থাকতে দাও তাহলে ভাল হয় ? 

সাতকাহন পর্ব-(১৯)

এবার দ্বিতীয় লােকটি বলল, “এখন গ্রামের কেউ ঘরে থাকতে দেবে না। ‘নে ? ‘মাতাল হয়ে বাবু একজনের সঙ্গে মারপিট করেছে। ‘মারপিট ? সে কি ? 

 যাদের সঙ্গে হাড়িয়া খাচ্ছিল তাদের একজন খারাপ কথা বলে, বাবুও তাই খারাপ কথা বলে, তারপর মারপিট আরম্ভ হয়ে যায়।  ‘ও। আমার কাছে লােকজন এখন নেই। আমি কি করতে পারি বল ? তােমরা কি ওকে এখানে নিয়ে আসতে পারবে ? 

লােকদুটো নিজেদের মধ্যে কিছু কথা বলল। তারপর জানালে যে চো কমবে। নেখালির মানুষদের দীপাবলী যে সাহায্য করছে তার জন্যেই চো করবে। বলে ওরা চলে গেল। 

দরজা বন্ধ করে সােজা বাথরুমে চলে গেল দীপাবলী। সারাদিনের ঘাম, ক্লান্তি আধা ভেঙে যাওয়ার জড়তার সঙ্গে আর একটা গা ঘিনঘিন করা অনুভূতি জুড়ে গেল। শমিত এত নিচে নেমে গেছে সে ভাবতেই পারছিল না। যে শমিত এককালে গ শিরে কথা বলত, মানুষের প্রতিভার নামে যা-ইচ্ছে তাই করবে স্বাধীনতায় বিশ্বাস করত না, সে সারাদিন ওই গরিব মানুষদের গ্রামে মদ খেয়ে এবং খাইয়ে পড়ে রইল একটা সাধারণ মাতালের মত মারপিট করল ? মগের জল শরীরে ঢালতে ঢালতেও কাঁটা হয়ে রইল দীপাবলী।

 স্নান সেরে সে তিরিকে বলল খাবার দিতে। বেশীক্ষণ না খেয়ে থাকলে এবং সেইসঙ্গে উত্তেজনা মিশলে পেটে চিনচিনে ব্যথা শুরু হয়ে যায়। সে খেতে চাইছে দেখে তিরি যেন অবাক। কিন্তু মুখে কিছু না বলে খাবার দিল। কোন কোন সময় খাওয়াটা যে কতখানি বিরক্তিকর হয় তা এখন টের পেল দীপাবলী ।

সাতকাহন পর্ব-(১৯)

খেয়ে দেয়ে বলল, ওরা যদি শমিতকে নিয়ে আসে তাহলে বাইরের ঘরটা খুলে দিবি । ওখানেই শুইয়ে ওরা চলে গেলে দরজা বন্ধ করে তুই শুয়ে পড়বি। শােওয়ার সময় এই দরজাটাও বন্ধ করে রাখবি। যা, খেয়ে নে। আর শােন, ওরা এলে আমাকে ডাকাডাকি করার কোন দরকার নেই। আমার শরীর ভাল না। 

মশারি খাটিয়ে দিল তিরি। শুয়ে পড়ল দীপাবলী। বিছানায় গা এলিয়েই বুঝতে পারল আজ সহজে ঘুম আসবে না। একবার ভেঙে যাওয়া ঘুম এখন উধাও হয়ে গিয়েছে। সে প্রাণপণ চেষ্টা করতে লাগল ঘুম আনতে দুই চোখে। কিন্তু বন্ধ চোখের পাতায় শমিতের মুখ। বারবার। সে নিঃসাড়ে পড়ে রইল। 

নিঝুম হয়ে যাওয়া চরাচরে একসময় কিছু লােকের কথাবার্তা শােনা গেল। শেষপর্যন্ত দরজায় ধাক্কা, মানুষজনের গলার আওয়াজ। দীপাবলী বিছানায় স্থির হয়ে রইল। তিরির গলা শােনা গেল, কে ? 

বাইরে থেকে জবাব ভেসে এল, ‘বাবুকে নিয়ে এসেছি। 

দীপাবলী শুনল, তিরি দরজা খুলছে। লােকগুলাে শমিতকে নিয়ে সম্ভবত ভেতরে ঢুকল। শুইয়ে দেওয়ার শব্দ হল। হঠাৎ একটা লােক বলে উঠল, “মেমসাহেব কোথায় ? 

শরীর খারাপ, শুয়ে পড়েছে। তিরি অন্যরকম গলায় কথা বলল । “তাের জন্যে, তাের জন্যে বাবু মারপিট করল। ইঃ। 

তারপরেই লােকগুলাের চলে যাওয়ার শব্দ পাওয়া গেল । গলার স্বর অন্ধকারে একসময় মিলিয়ে গেল। তিরি দরজা বন্ধ করল আরও কিছুক্ষণ বাদে। দীপাবলী বুঝতে পারছিল না এতক্ষণ দরজা খুলে তিরি কি করছিল। আরও খানিকটা সময় পার করে তিরি এঘরে এল। এবার ও বিছানা করে শুতে যাচ্ছে। দীপাবলী গম্ভীর গলায় বলল, মাঝখানের দরজাটা বন্ধ করে দিতে বলেছিলাম তােকে ! 

‘বাবুর শরীরে জ্বর এসেছে। কাতর গলায় বলল তিরি। ‘তােকে যা বলছি তাই কর।। 

সাতকাহন পর্ব-(১৯)

তিরি উঠল। দরজাটা ভাল করে বন্ধ করতে একটু শব্দ হল । দীপাবলীর মনে হল শব্দটা যেন তিনি ইচ্ছে করেই করল। শমিত আসার পর থেকে যেন তিরি তার সঙ্গে অন্যরকম ব্যবহার করছে। একটা প্রতিবাদী ভঙ্গী সবসময় ওর আচরণে চোখে পড়ছে। দীপাবলীর কিছুতেই ঘুম আসছিল না। সারাদিন মাঠেঘাটে পড়ে মদ গিললে জ্বর আসতেই পারে, কিন্তু তাকে জ্বালাতন করা কেন ? | তবু শেষরাতে তন্দ্রা এসেছিল কিন্তু রাত ফুরােবার আগেই সেটা গেল সরে । উঠে বসল দীপাবলী।

ঘড়িটা চোখের সামনে টেনে এনে সময় দেখল । অন্যদিন আরও আধঘন্টা সে স্বচ্ছন্দে মােয়। আজ ঘুম এল কখন ? চট করে পাশের বন্ধ দরজার দিকে তাকাল সে। ঘরের এক কোনায় নিবন্ত হ্যারিকেন থেকে ফ্যাকাশে হলুদ আলাে বের হচ্ছে। মাটিতে অঘােরে ঘুমাচ্ছে তিরি। দীপাবলী বিছানা থেকে নেমে বাথরুমে গেল । 

দাঁত মাজতে মাজতে, প্রায়ান্ধকার বাথরুমে দাঁড়িয়ে অন্য চিন্তা মাথায় এল তার। শমিতের ঘটনাটা নেখালির মানুষেরা নিশ্চয়ই গল্প করবে। এধরনের ব্যাপার রােজ ঘটে । আর যেখানে সে জড়িত তখন গল্পের গতি বাড়বে।

সে এর আগে দেখেছে, এক অল্পবয়সী মেয়ে চাকরি করতে এসেছে, তা যে পােস্টেই হােক, আশেপাশের মানুষ তার মধ্যে গল্প খোঁজে। শমিত অন্তত এই ক্ষতিটুকু করতে পারল। অবশ্য নিজে যতক্ষণ অন্যায় করছে ততক্ষণ সে কাউকে পরােয়া করে না, তবু এসব কার ভাল লাগে ? 

সাতকাহন পর্ব-(১৯)

অভ্যেসমত স্নান সেরে সে যখন ঘরে ফিরে এল তখনও তিরির ঘুম থেকে ওঠার সময় হয়নি। বাইরের ঘর দিয়ে বেরুবার প্রবৃত্তি হল না। সে ভেতরের উঠোন পেরিয়ে খিড়কির দরজা খুলে মাঠে এসে দাঁড়াল। অন্ধকার আকাশ থেকে নেমে আসছে পৃথিবীর ওপর। আর একটু বাদেই তারা ঢুকে যাবে মাটির ভেতরে। এ বড় সুসময়। অন্যদিন এই মুহুর্তে মন মাজা কাঁসার থালার মত ঝকঝকে হয়ে যায়। 

দীপাবলী অনামনস্ক হাঁটতে লাগল । সতীশবাবুর বাড়ির দিকে যাওয়ার কথা ভাবল একবার। নিশ্চয়ই যারা গিয়েছিল কাল শহরে তারা এতক্ষণে শ্মশানেই আটকে আছে। সে পুবমুখাে দাঁড়াল। সূর্য দেখা যাচ্ছে না, তিনি এখনও দিগন্তের নীচে । কিন্তু তােড়জোড় শুরু হয়ে গেছে তার উঠে আসার। হঠাৎ দূরে, ঝাপসা হয়ে থাকা একটি মানুষের মূর্তি চোখে পড়ল । লােকটি গুনগুন করে গান গাইছে। বিস্মিত দীপাবলী কয়েক পা এগােল। তখনই কানে এল, ‘আকাশ পানে হাত বাড়ালেম কাহার তরে ?’ 

গলার স্বর কাঁপছে, সুর সব জায়গায় চেনা নয়। শরীর দুলছে। শমিত। ও কি করে তার আগে এখানে এল ? দীপাবলী অনুমান করল শমিত তার অনেক আগেই বেরিয়েছে। গতরাত্রে সম্পূর্ণ মাতাল একটা লােককে শুইয়ে দেওয়ার পর এই ভাের না হওয়া সময়ে সে কোন পুলকে বাইরে বেরিয়ে গান ধরে ? | দীপাবলী লক্ষ করল, গান থামল, ধীরে ধীরে উবু হয়ে বসল মাঠের ওপর। এই বসার ভঙ্গী চোখে খারাপ ঠেকল। স্বাভাবিক মানুষ এইভঙ্গীতে সচরাচর বসে না।

সাতকাহন পর্ব-(১৯)

মাথা ঝুঁকে পড়েছে সামনের দিকে। নিতান্ত অনিচ্ছায় দীপাবলী এগিয়ে গেল । একজন কেউ সামনে এসে দাঁড়িয়েছে এই বােধও যেন শমিতের নেই। একটু বাদেই বাবুরা কাজে আসবেন। তারা যদি শমিতকে এই ভাবে বসে থাকতে দ্যাখেন তাহলে গতরাত্রের গল্প আরও জোরদার হবে। কালকের মদের প্রতিক্রিয়া কি এখনও চলছে ওর শরীরে ? 

দীপাবলী ডাকল, ‘শমিত !  

শমিত অনেক কষ্টে মুখ তুলল যেন। তার মুখচোখ দেখে আঁতকে উঠল সে। হাত বাড়িয়ে কপাল স্পর্শ করতেই আগুনের ছোঁয়া পেল। আতঙ্কিত দীপাবলী বলল, ওঠো, বাড়িতে গিয়ে শােবে চল। এরকম অসুস্থ হয়ে কেন বাইরে এসেছ? 

শমিত হাসতে চেষ্টা করল কিন্তু পারল না। 

ওকে একা তােলা দীপাবলীর পক্ষে অসম্ভব। সে দ্রুত ফিরে গেল। তিরিকে ডেকে এনে দুজনে মিলে কোনরকমে শমিতকে নিয়ে এল বাইরের ঘরে। সেখানে ঢুকেই শরীর গুলিয়ে উঠল। সমস্ত ঘরে বমি করে রেখেছে শমিত। দুর্গন্ধে সেখানে দাড়ানাে যাচ্ছে না।

এরকম একটা নরকে কোন মানুষকে শশাওয়ানাে যায় না। দীপাবলী তিরিকে ভেতরের দরজাটা খুলতে লল। সেটা যেহেতু বন্ধ ছিল ওপাশ থেকে তাই তিরিকে খিড়কির দর ঘুরে যেতে হল। শমিতকে দুহাতে ধরে দাঁড়িয়ে আছে দীপাবলী। টলছে শমিত। আর চলতে 

টলতে বলছে, ‘আই অ্যাম সবি দীপা, লেট মি গাে। কথা জড়িয়ে যাচ্ছে। 

ভেতরের ঘরে দ্বিতীয় বিছানা নেই। মাটিতেও শাওয়ানাে যায় না। অতএব নিজের বিছানাতেই শুইয়ে দিতে বাধ্য হল দীপাবলী । দেখা গেল ওর পাঞ্জাবির হাতাতেও কিঞ্চিৎ বমি শুকনাে হয়ে লেগে আছে। নতুন পাঞ্জাবি শমিতের ঝােলা থেকে এনে সেটা পরিয়ে দিতে প্রচণ্ড কসরৎ করতে হল। 

সাতকাহন পর্ব-(১৯)

তিরি বলল, “কি হবে দিদি। শরীর যে পুড়ছে। ‘মাথা ধুইয়ে দেওয়া দরকার। তুই এক বালতি জল নিয়ে আয়। 

শমিতের মাথা বিছানার একপাশে নিয়ে এসে ধীরে ধীরে মাথা ধুইয়ে দিল দীপাবলী । শরীরের ছোঁয়া পাওয়া মাত্র জল গরম হয়ে যাচ্ছে। জলের স্পর্শ পেয়ে চোখ খুলল শমিত। লাল টকটকে চোখ মেলে কি দেখল সে-ই জানে। 

 তিরি ততক্ষণে চলে গিয়েছে বাইরের ঘরটাকে পরিষ্কার করছে। জল এবং ঝাঁটার শব্দ হচ্ছে সেখানে। একবার দরজায় এসে বলল, ‘কাল সারাদিন কিছু খায়নি দিদি, যেখানে বমি পড়েছে সেখানেই কালাে দাগ হয়ে গিয়েছে। 

দীপাবলী চোখ বন্ধ করে পড়ে থাকা শমিতের দিকে তাকাল। সেই শমিত এমন কাণ্ড কেন করল ?

 

Read more

সাতকাহন পর্ব-(২০)-সমরেশ মজুমদার

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *