সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ এর নিঝুম রাতের আতঙ্ক খন্ড-২

ভবভূতি অবাক হয়ে বলেছিলেন—বলাে কী!

নিঝুম রাতের আতঙ্ক

-হ্যামেকসিকো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভূততত্ত্বে ডক্টরেট ডিগ্রি দেয়আমাদের ভুতাে সেই ডিগ্রি পেয়ে এখন ভারতের নামকরা ঘােস্ট এক্সপার্ট অর্থাৎ ভূতবিশেষজ্ঞ হয়েছেগতবছর যখন রামচন্দ্রপুর ঘােস্ট প্রজেক্ট-থুড়ি, ভূতেদের অভয়ারণ্য চালু হল, তখন তার । উদ্বোধন করেছিলেন কে জানাে তাে?

ভূত বিষয়ক দফতরের মন্ত্রী মিসেস এস সি হাড়মটমটিয়াভবভূতি আরও অবাকএমন সরকারি দফতরের নাম তাে শুনিনিআর এস সি হাড়মটমটিয়া•••উহু, শুনিনি। 

গজপতির উল্লাস দেখে কে!-এই তাে! কিছু খবর রাখে নারাখবে কী করে? সারাজীবন তাে বনবাদাড়ে বাঘের লেজ ফলো করেই কাটালেশুনে রাখাে, এমন দফতর একটা আছেতবে গােপনীয় দফতর। তাই কেউ জানে নাআমার ভাগ্নের খাতিরেই আমি জেনেছি। 

হু। তাহলে ওই মন্ত্রীমহােদয়ার পুরাে নাম বুঝি মিসেস শাকচুন্নী হাড়মটমটিয়া? ভবভূতি ফের হেসে উঠেছিলেন। 

গজপতির আবার রাগ হয়েছিলবলেছিলেন-ঠিক আছে। কালই আমার সঙ্গে বেরিয়ে পড়াে। রামচন্দ্রপুর ভূতারণ্যে গিয়ে স্বচক্ষে সব দেখবেএও বুঝবে, স্টেশনের নাম রামচন্দ্রপুর রাখার কারণই বা কী

নিঝুম রাতের আতঙ্ক খন্ড-২

কী কারণ শুনি

ওটা ভূতারণ্যের বর্ডার। রাম শব্দে ভূতেরা জব্দ। বুঝলে ? পাছে অভয়ারণ্য বা ভূত প্রকল্পের দুএকটা পাজি ভুত এলাকা ছাড়িয়ে বাইরে গাগেরামে গিয়ে হানা দেয়, তাই ওই ব্যবস্থাতােমার সেদিরবন ব্যাঘ্র প্রকল্পের দুএকটা বাঘ কি এমন করে না মাঝে মাঝে ? 

রেল লাইনের ধারেধারে কিছুটা এগিয়ে ডানদিকে সরু একফালি রাস্তায় নামলেন গজপতি। সামনে একটা ছােট্ট নদী দেখা যাচ্ছিল। তার ওপর কাঠের পােল আছে। সেই পােপালে পৌছবার পর বললেন, এবার আমরা ভূতেদের অভয়ারণ্যের এলাকায় ঢুকছি। ওই দেখ, কাঠের ফলকে লেখা আছে : রামচন্দ্রপুর ভূত প্রকল্পদেখতে পাচ্ছ তাে

ভবভূতি থমকে গেলেন মুখের বাঁকা হাসিটা মিলিয়ে গেল। কাঠের ফলকটার সামনে দঁাড়িয়ে চশমা খুলে চোখ দুটো মুছে নিলেন। তারপর চশমার কাচ ভালভাবে মুছে হেট হলেন। কিন্তু না। বড় বড় হরফে সত্যি লেখা আছে : রামচন্দ্রপুর ভূত প্রকল্পএবং তলায় ব্রাকেটের মধ্যে : তেরটি প্রজাতির ভূতের অভয়ারণ্যতার পাশে আরেকটা বড় ফলকে নােটিশ

সাবধান, কেহ উহাদের উত্ত্যক্ত করিবেন নাঘাড় মটকাইয়া দিলে সরকার দায়ী হইবেন না। তবে কেহ কেহ আদর করিয়া 

উহাদের কিছু খাওয়াইতে চাহেন, তাহাতে আপত্তি নাই। কিন্তু

নিঝুম রাতের আতঙ্ক খন্ড-২

নীচের এই তালিকার খাদ্যগুলি ছাড়া আর কোন প্রকার খাদ্য খাওয়াইবেন না। জরিমানা করা হইবে।’.ভবভূতি একটু ঝুকে খাদ্য তালিকায় ঝটপট চোখ বুলিয়ে নিলেন। (১) দুধ (২) রসগােল্লা (৩) হাড়গােড় (৪) শুকনাে গােৰর (৫) খাঁটি সরিষার তৈল (৬) পাকা কলা (৭) টিকটিকির ডিম ও লেজ (৮) নানা রকম মাছ (সিঙ্গি বাদে) (৯) আরশােলার ঠ্যাং•••• গজপতি ওঁর পিঠে হাত রেখে চাপাস্বরে বললেন—দেরি হয়ে যাচ্ছে। সন্ধে হয়ে গেল। আমার ভাগ্নের অফিসে গিয়ে ওসব জেনে নেবে। এস। 

 ভবভূতি গুম হয়ে গেছেন। মুখে রা-বাক্যি নেই। তার ওপর “গজপতির একরকম চাপাগলায় কথা বলা শুনে তার গা ছমছম করছে এবার। 

দুধারে ঘন ঝােপজঙ্গল, মাঝখানে একফালি পিচের পথ। কিছুটা চলার পর বড় বড় গাছের জঙ্গল দেখা গেল। তার মধ্যে একটা আলো দেখা যাচ্ছিল। গজপতি তেমনি চাপাগলায় বললেন-ওই যে 

শ্ৰীমানের অফিস। মানে আমার ভাগ্নের। | ভবভূতি এখন মােটামুটি অনেকটা বিশ্বাস করে ফেলেছেন। খুতখুঁতে গলায় বললেন–ওদের জন্যে কিছু খাবার আনা উচিত ছিল। 

গজপতি ঠোচে আঙুল রেখে বললেন—চুপ! খাবারের নাম করো না। এক্ষুণি পিছু নেবে। সেবারে আমি কী বিপদেই না পড়েছিলুম এসে।’ 

-পিছু নিয়েছিল নাকি ? 

হুউ। ওই অফিস অব্দি পিছনে খালি বলে, “কী এনেছিস, দিয়ে যা। 

-বলাে কী! আচ্ছা, ওরা নাকিস্বরে কথা বলে কেন বলাে তাে? -নাক নেই যে! কংকালের মুণ্ডু দেখনি? নাক আছে ? 

নিঝুম রাতের আতঙ্ক খন্ড-২

-ঠিক বলেছ। নাকের জায়গায় গর্ত আছে বটে। 

এই সময় আলো অনেকটা কমেছে। ভবভূতি অস্বস্তিতে হাঁটছেন। আর অনবরত এদিক-ওদিক চাইছেন। হঠাৎ তার মনে হলো সামনে বাঁদিকে একটা গাছের প্রকাণ্ড মরা ও শুকনাে ডালে কালােরঙের এবং দেখতে কতকটা হনুমানের মতাে, কী যেন বসে আছে। তারপর : সেই অদ্ভুত প্রাণীটা বারকতক আপন খেয়ালে উল্লুকের মতােই। শুকনাে ডালটা ধরে চরকিঘােরা হয়ে ঘুরল। ভবভূতি শিউরে উঠে বললেন—ওটা কী? 

গজপতি দেখেই চাপাস্বরে বললেন—বলল রাম রাম রাম রাম ভবভূতি আওড়াতে শুরু করলেন–রাম রাম রাম রাম রাম 

সাবধানে পা টিপেটিপে জায়গাটাপেরিয়ে গিয়ে গজপতি জানালেন —এই প্রজাতির নাম ‘গেছে। এরা গাছে থাকে। এদের বড় বদ অভ্যেস। টুপটাপ করে ঢিল ছােড়ে। মাথা ন্যাড়া দেখলে তাে আর রক্ষে নেই।। 

 

Read More

সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ এর নিঝুম রাতের আতঙ্ক খন্ড-৩

 

 

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *