সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ এর নিঝুম রাতের আতঙ্ক খন্ড-৯

আরেকবার হয়েছে কী, করিম জোলা গেছে ঘােড় কিনতে শহরে। একখানে কুমড়োেলা কুমড়াে বিক্রি করছে। করিম বলল – ভাই, এগুলো কী? লােকটা ভাবল, কী বুদ্ধরে বাবা। কুমড়ােও চেনে না। তাই তামাসা করে বলল—এগুলো হচ্ছে ঘােড়ার ডিম।

নিঝুম রাতের আতঙ্ক 

করিম জোলা লাফিয়ে উঠল। জ্যান্ত ঘােড়া কেনার চেয়ে ঘােড়ার ডিম কিনলে সস্তায় হবে। ডিম ফুটে বাচ্চা বেরুবে : তাকে পুষে 

বড় করবেকী মজাই না হবেসে খুশি হয়ে বললভাই, দাম কত ? 

চতুর কুমড়ােলা বলল—পাঁচ টাকা। 

করিম ভাবল, বেশ শস্তাই বটেঘােড়ার দাম অনেক বেশিসে তক্ষুণি টাকা দিয়ে কুমড়ােটা মাথায় করে গাঁয়ের পথ ধরল। মাঠের এইখানে উচু আলে হঠাৎ পা ফস্কে গেল তার। অমনি কুমড়ােটা গেল পড়েপড়েই ফাটল। 

আর আলের গর্তে ছিল খেকশিয়ালের বাসাদুম করে কুমড়ােটা ফেটেছে তার কাছেখেকশিয়াল ভাবল এ এক বিপদভয়ের চোটে বেচারা গর্ত থেকে বেরিয়ে দৌড়তে শুরু করল। সে তাই দেখে হায় হায় করে উঠল। এই যা! ডিম ভেঙে ঘােড়ার বাচ্চা বেরিয়ে পালাচ্ছে যে! সে খেকশিয়ালটার পিছনে দৌড়ে যায় আর চেঁচায়— ঘঘাড়েকা বাচ্চা ভাগতা। ঘােড়কা বাচ্চা ভাগ ••• 

এইরকম কত মজারমজার গল্প চালু আছে করিমকে নিয়ে। আরেকটা শোন, তাহলেই বুঝবে করিম জোলা কত সরল মানুষ ছিল । তার একটুকরাে তরমুজ খেত ছিলচোরের জ্বালায় বেচারার খেত উজাড় হয়ে যায়প্রতি রাতে চোর এসে তার খেতে চুপিচুপি হামলা করে। করিম জোলার ঘুমটা এত বেশি যে টের পায় না কিছু। 

নিঝুম রাতের আতঙ্ক খন্ড-৯

একদিন সে মনমরা হয়ে আছে, এক ফকির যাচ্ছেন পথে। ফকিরের তেষ্টা পেয়েছিলপাশের খেতে তরমুজ দেখে ভাবলেন, করিমের কাছে একটা তরমুজ চাইবেন। 

করিম ফকিরের অনুরােধে তক্ষুণি একটা পাকা তরমুজ দিলফকির তেষ্টা মিটিয়ে খুশি হয়ে বললেন-বলাে বাবা, কী চাও? | করিম জোলা বলল-ফকিরসায়েব, আমার ঘুমটা বড় বেশিরাতে চোরেরা এসে তাই সব তরমুজ চুরি করে নেয়। একটা কিছু উপায় বাৎলে দিন তােএকটা কিছু উপায় বাতলে দিন তাে (পৃঃ ৩৮ ) 

ফকির বললেন—ঠিক আছে। রাতের বেলা তােমার কানে একটা আওয়াজ হবে। যদি খেতের কাছে কেউ আসে, অমনি শুনবে—তোমার কান থেকে আওয়াজ বেরুচ্ছে ? কে রে, কে রে, | সে হাতে চঁাদ পেল। সেদিন থেকে যেমন চোর আসে ঘুমন্ত করিম জোলার কান থেকে আওয়াজ বেরােয়কে রে ?  কে রে? চোরেরা ভাবে, এই রে! ব্যাটা জেগে আছে। তারা পালিয়ে যায়। 

বেশ চলছিল। হঠাৎ এক রাতে একদল ডাকাত যাচ্ছে গেরস্থ বাড়ি হানা দিতে। গাঁয়ের শেষে করিম জোলার তরমুজ খেতের কাছে যেই এসেছে, তারা শুনলকুঁড়ে থেকে জোলা বলছে—কে রে••• কে রে–কে রে ? 

তারা তাে চোর নয়, ডাকাত। ওতে ভয় পাবে কেন ? কুঁড়েয় গিয়ে হামলা করল ! লােক জেগে থাকলে ডাকাতি করবে কেমন করে? টের পেয়েই তাে সে ডাকাত-ডাকাত বলে চেঁচাবে এবং ঘুমন্ত লােকেরা জেগে যাবে। 

কিন্তু কুঁড়েয় গিয়ে তারা অবাক। করিম ঘুমােচ্ছে নাক ডাকিয়ে। আর তার কান থেকে আওয়াজ বেরুচ্ছে-কে রে-কে রে-কে রে? 

দলপতি করল কী, বুদ্ধি করে একটু খড় গুজে দিল তার কানে। ব্যাস, কে রে—কে রে আওয়াজটা বন্ধ হয়ে গেল। দলপতি বলল লােকটা দেখছি মন্তরবাজ এলেমদার ! এমন লােক দলে থাকলে 

তাে ভালই। | তাই করিমকে গুতাের চোটে জাগিয়ে দলপতি হুকুম দিল—চল ব্যাটা, আমাদের সঙ্গে তােক ডাকাতি করতে যেতে হবে। 

সরলমনা করিম বেচারা প্রাণের দায়ে তাদের সঙ্গে চলল। গাঁয়ে এক গেরস্থ বাড়ির কাছে তারা হাজির হল। দলপতি বলল—এই এলেমদার মন্তরবাজকে ভেতরে পাঠানাে যাক। শােন হে স্যাঙাত । 

নিঝুম রাতের আতঙ্ক খন্ড-৯

তুমি সব মালকড়ি সােনাদানা মন্তরের জোরে হাতিয়ে পাঁচিলের ওপর দিয়ে ছুড়বে আর আমরা কুড়ােব।। 

করিমকে ওরা পাঁচিলে তুলে দিয়ে এক ধাক্কায় ওপারে ঠেলে ফেলল। বেচারা ভেতরে পড়ল। সে কখনও ডাকাতি কি করেছে ? পরের বাড়ি ঢুকেছে নিশুতি রাতে? ঠকঠক কাপছে। 

গেরস্থ তার পাঁচিল থেকে পড়ার শব্দে জেগে গিয়েছিল ওদিকে। লণ্ঠন জ্বেলে বেরিয়েছে ঘর থেকে-কী শব্দ হল দেখতে। 

গতিক দেখে করিম গােয়ালঘরে গিয়ে লুকিয়ে পড়ল। একটা গাইগরু তার কানে খোঁজা খড়গুলাে দেখামাত্র মুখ বাড়িয়ে টেনে নিল। আর ব্যস! করিমের কান থেকে আওয়াজ বেরুতে লাগল। 

কে রে—কে রে— ? | তাই শুনে গেরস্থ গােয়ালঘরে এসে ঢুকল। বাড়ির লােকেরাও গেল জেগে। তারপর করিম বেচারাকে ধরে তাে দে প্রহার! বেচারা বিনিদোষে মার খেল।

 

Read More.

সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ এর নিঝুম রাতের আতঙ্ক খন্ড-১০

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *