হুমায়ূন আহমেদের লেখা হিমুর দ্বিতীয় প্রহর খন্ড-১৭

আমি জানি না তবে আমি নিশ্চিত উদ্ভিদ বিজ্ঞানীরা জানেন

হিমুর দ্বিতীয় প্রহর

কাচকলাকেউ কিছু জানে নামারা সাহায্য করতে পারি‘ এজী এটেনাএই ক্ষের সঙ্গে যোগাযােগ বিরক্ত করবে নামুমুতে দাও‘ সমি লম্য বােঝার ব্যাপারে তোমরা গাছের কাছে সাহায্য প্রাণ কেন আমাদের কাছে সাহায্য প্রার্থনা করলেইতাে আমরা সাহায্য কক 

তােমার সাহায্য করতে পার?অবশ্যই পারিআমাদের পাতাগুলি অসম্ভন শক্তিশালী এক এন্টেনার সাহায্যে আমরা এই বিপুল সৃষ্টি জগতের সব বৃক্ষের সঙ্গে যে ব্ৰক্ষা করি‘ 

তাই নাকি

মনে কর সিরাস নক্ষত্রপুঞ্জের একটা গ্রহে গাছ আছেআমরা সেই s সঙ্গে যােগাযােগ করতে পারিআমরা সেই গাছ থেকে তােমাদের বৈজ্ঞানিক তথ্য এনে দিতে পারি‘ বাহ ভাল তাে। 

পথিবীর মানুষরা অমর হতে চায়কিন্তু অমরত্বের কৌশল জানে নাএলােমিছা নক্ষত্রপুঞ্জেই একটা গ্রহ আছে যার অতি উন্নত প্রাণীরী আমানত কৌশল জেনে গেছেতােমরা চাইলেই আমরা তােমাদের তা দিতে পারি‘ 

শুনে অত্যন্ত প্রীত হলাম‘ তুমি কি চাও” 

নাআমি চাই নাআমি যথাসময়ে মারে যেতে চাইহাজার হাজার বছর বেছে থেকে কি হবে‘ 

তুমি চাইলে আমি তােমাকে বলতে পারি।’ 

না আমি চাচ্ছি নাস্বাণে প্রাপ্ত কোন ঔষধের আমার প্রয়ােজন নেইতুমিযথেষ্ট বিরক্ত করেছএখন বিদেয় হওভাল কথা তােমার নাম কি

আমার নাম টানমেনালিয়া বেলেরিকা‘ এমন অদ্ভুত নাম

হিমুর দ্বিতীয় প্রহর খন্ড-১৭

তর এক কাপ চা খাওয়া দরকারবনের ভেতর কে আমাকে চা মাওয়াবেআমি গলা উচিয়ে বললাম, আমার চারদিকে যে সব গাছ ভাইরা আছেন তাদের বলছিআমার খুব চায়ের তৃষ্ণা হচ্ছেআমি আপনাদের অতিথি আপনারা কি আমাকে এক কাপ চা খাওয়াতে পাবেন। 

প্রশ্নটা করেই আমি চুপ করে গেলাম উত্তরের জন্যে কান পেতে রইলাম উত্তর পাওয়া গেল না তবে কয়েক মুহূর্তের জন্যে আমার মনে হচ্ছিল গাছ উত্তর দেবে। 

দরজায় কোনাে কলিংবেল নেই। 

পুরানাে স্টাইলে কড়া নাড়তে হলপ্রথমবার কড়া নাড়তেই ভেতর থেকে শ্ৰেহ্মা জড়ানাে গলায় জবাব এলকে? আমি চুপ করে রইলামপ্রথমবারের কেতে জবাব দিতে নেইদ্বিতীয়বারে জবাব দিতে হয়এই তথ্য আমার মামার বাড়িতে শেখা ছােট মামা বলেছিলেন— 

| বুঝলি হিমু, প্রথম ডাকে কখনাে জবাব দিবি নাঅর্পার না! তুই হয়তাে ঘুমচ্ছিস, নিশুতি রাতে বাইরে থেকে কেউ ডাকলহিমু! তুই বললি, জ্বিতা হলেই সর্বনাশ! মানুষ ডাকলে সর্বনাশ নামানুষ ছাড়া অন্য কেউ ডাকলে সর্বনাশ বাধা পড়ে যাবিতােকে ডেকে বাইরে নিয়ে যাবেএর নাম নিশির ডাককাজেই সহজ বুদ্ধি হচ্ছেযেডাকুক প্রথমবারে সাড়া দিবি নাচল করে থাকবি দ্বিতীয় বারে সাড়া দিবি মনে থাকবে?” 

আমার মনে আছে বলেই প্রথমবারে জবাব না দিয়ে দ্বিতীয়বারের জন্যে আপেক্ষা করতে লাগলামআবার কড়া নাড়লাম যাতে মিসির আলি সাহেব দ্বিতীয়বার বলেনকে? আমি আমার পরিচয় দিতে পারি| মিসির আলি দ্বিতীয়বার কেবললেন নাদরজা খুলে বাইরে তাকালেনখুব যে কৌতুহলী হয়ে তাকালেন তাও না

হিমুর দ্বিতীয় প্রহর খন্ড-১৭

রাত একটার আগমুকের দিকে যতটুকু কৌতুহল নিয়ে তাকাতে হয় সে কৌতুহলও তার চোখে নেইপরনে লুঙ্গি খালি গায়ে শাদা চাদর জড়ানাে ভদ্রলােকের মাথা ভরতি কাচাপাকা চুল আমি ভেবেছিলাম টেকো মাথার কাউকে দেখবআইনষ্টাইন মার্কা এত চুল ভাবিনিআমি বললাম, স্যার মালিকুম । 

ওয়ালাইকুম সালামআমার নাম হিমুআচ্ছাআপনার সঙ্গে কী কথা বলতে পারি

মিসির আলি দরজা ধরে দাড়িয়ে আছেনতার দৃষ্টি আগের মতাে কৌতূহল শূন্যতিনি কী বিরক্ত? বুঝা যাচ্ছে নাভদ্রলােক কি ঘুম থেকে উঠে এসেছেন? বােধ হয় ঘুমন্ত মানুষ প্রথম বার কড়া নাড়তেই কে বলে সাড়া দেবে না। 

আমি বিনীত ভঙ্গিতে বললাম, কথা বলার জন্যে রাত দুটা খুব উপযুক্ত 

এটা বৈজ্ঞানিক নামসহজ নাম বহেরাআমরা কিন্তু অদ্ভুত গাছ শালবনের ফঁাকে গজাই এবং লম্বায় শালগাছকেও ছাড়িয়ে যাইআমাদের বাকলের রঙ কি বলতাে? বলতে পারলে নাআমাদের বাকলের রঙ নীলআচ্ছা যাও আর বিরক্ত করব না। এখন ঘুমাও। 

আমার ঘুম ভাঙ্গল সন্ধ্যার আগে আগে। জেগে উঠে দেখি সত্যি সত্যিএকটা বহেরা গাছের নিচেই শুয়ে আছিগাছ ভর্তি ডিমের মত ফুলআমি খানিকটা ধাধায় পড়ে গেলামআমার পরিস্কার মনে আছে আমি শুয়েছিলাম, শাল গাছের নিচেশালের মুল দেখতে দেখতে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। 

ঢাকায় যেতে হবে পায়ে হেঁটেসেটা খুব খারাপ হবে নাশীতকাল হাটার আলাদা আনন্দতবে ঢাকায় কতক্ষণে পৌছাৰ কে জানেমিসির আলিসাহেবের সঙ্গে আমার দেখা করা দরকার দেখাটা আজ রাতেও হতে পারে।  আপনি যদি বলেন পনি জেগে ছিলেন তাই দরজার কড়া নেড়েছি

Read More

হুমায়ূন আহমেদের লেখা হিমুর দ্বিতীয় প্রহর খন্ড-১৮

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *