হুমায়ূন আহমেদের লেখা হোটেল গ্রেভার ইন খন্ড-১১

এতে তােমার সুবিধা হবে। উকল ডেকোরেশন হবে না। এক খরচায় হয়ে যাবে। তুমি একা মানুষ।

ও তােমার এত বড় সাহস, তুমি পাকিস্তানীদের সঙ্গে আমাকে বাংলাদেশ নাইট করতে বলছ? তুমি কি জান, ওরা কী করেছে?  জান ওরা আমাদের কতজনকে মেরেছে?

তুমি কি জান …?

হোটেল গ্রেভার ইন

কী মুশকিল—তুমি এত উত্তেজিত হচ্ছ কেন? | তুমি আজেবাজে কথা বলবে, তুমি আমার দেশকে অপমান করবে, আর আমি তোমার সঙ্গে মিষ্টি মিষ্টি কথা বলব?

মিজান, ফরেন স্টুডেন্ট অ্যাডভাইজারের সামনের টেবিলে প্রকাণ্ড এক ঘুসি বসিয়ে দিল। টেবিলে রাখা কফির পেয়ালা উল্টে পড়ল। লোকজন ছুটে এল। প্রচণ্ড হেচৈ।

এরকম মাথা গরম একটা ছেলেকে সব সময় সামলে-সুমলে রাখা মুশকিল। তবে ভরসা একটাই—সে আমাকে প্রায় দেবতার পর্যায়ে ফেলে রেখেছে। তার ধারণা আমার মতো জ্ঞানী-গুণী মানুষ শতাব্দীতে এক-আধটা জন্মায়। আমি যা বলি, শােনে।

হোটেল গ্রেভার ইন খন্ড-১১

মিজান তার ভাঙা মরিস মাইনর নিয়ে ঝড়ের গতিতে চলে এল। সঙ্গে বাংলাদেশের ম্যাপ নিয়ে এসেছে। সেই ম্যাপ দেখে আমার আক্কেল গুড়ুম। যে কটা রঙ পাওয়া গেছে সব কটাই সে লাগিয়েছে।

জিনিসটা দাঁড়িয়েছে কেমন বলুন তো? ও রঙ একটু বেশি হয়ে গেল না? ও ওরা রঙ-চঙ একটু বেশি পছন্দ করে হুমায়ূন ভাই। ? তাহলে ঠিকই আছে।

ও এখন আসুন প্রােগ্রামটা ঠিক করে ফেলা যাক। বাংলাদেশী খাবারের নমুনা হিসাবে খিচুড়ি খাওয়ানাে হবে। খিচুড়ির শেষে দেওয়া হবে পান-সুপারি।

পান-সুপারি পাবে কোথায়? শিকাগাে থেকে আসবে। ইণ্ডিয়ান সপ আছে–ওরা পাঠাবে। ভলার পাঠিয়ে চিঠি দিয়ে দিয়েছি।ও খুব ভালাে।

ও দেশ সম্পর্কে একটা বক্তৃতা দেয়া হবে। বক্তৃতার শেষে প্রশ্ন উত্তর পর্ব। সবার শেষে জাতীয় সঙ্গীত।

ও জাতীয় সৃঙ্গীত গাইবে কে কেন, আমি আর আপনি। | তুমি পাগল হয়েছ ? জীবনে আমি কোনদিন গান গাইনি।।

ও আর আমি বুঝি হেমন্ত ? এইসব চলবে না, হুমায়ূন ভাই। আসুন গানটা একবার প্র্যাকটিস করি।মিজান, মরে গেলেও তুমি আমাকে দিয়ে গান গাওয়াতে পারবে না। তাছাড়া এই গানটার আমি কথা জানি না, সুর জানি না।

কথা সুর তাে আমিও জানি না হুমায়ূন ভাই। চিন্তা নেই, একটা ব্যবস্থা হবেই।

উৎসবের দিন ভাের বেলাতে আমরা প্রকাণ্ড সসপ্যানে খিচুড়ি বসিয়ে দিলাম। চাল, ডাল, আনাজপাতি সেদ্ধ হচ্ছে। দুটো মুরগি কুচি কুচি করে ছেড়ে দেয়া হল। এক পাউণ্ডর মত কিমা ছিল তাও ঢেলে দিলাম। যত ধরনের গরম মসলা ছিল সবই দিয়ে দিলাম। জালি হতে থাকল।

মিজান বলল, খিচুড়ির আসল রহস্য হল মিক্সিং-এ। আপনি ভয় করবেন না। জিনিস ভালই দাড়াবে।

হোটেল গ্রেভার ইন খন্ড-১১

সে একটা খুন্তি দিয়ে প্রবল বেগে নাড়াতে শুরু করল। ঘন্টা দুয়েক পর যা পঁড়াল তা দেখে বুকে কঁপন লাগে। ঘন সিরাপের মত একটা তরল পদার্থ। উপরে আবার দুধের সরের মত সর পড়েছে। জিনিসটার রঙ দাড়িয়েছে ঘন কৃষ্ণ। মিজান শুকনাে গলায় বলল, কালাে হল কেন বলুন তাে হুমায়ূন ভাই। কালাে রঙের কিছুই তাে দেইনি।

আমি সেই প্রশ্নের জবাব দিতে পারলাম না। মিজান বলল, টমেটো পেস্ট দিয়ে দেব নাকি?

দাও।

টমেটো পেস্ট দেয়ায় বঙ আৱাে কালচে মেরে গেল। মিজান বলল, লাল রঙয়ের কিছু ফুড কালার কিনে এনে ছেড়ে দেব?

দাও।

তাও দেয়া হল। এতে কালাে রঙের কোন হেরফের হলাে না। তবে মাঝে মাঝে লাল রঙ ঝিলিক দিতে লাগলাে। দুজনেই মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়লাম। জাতীয় সংগীতেরও কোন ব্যবস্থা হল না! মিজানের গানের গলা আমার চেয়েও খারাপ। যখন গান ধরে মনে হয় গলায় সর্দি নিয়ে পাতিহাঁস ডাকছে। শিকাগাে থেকে পানও এসে পৌছল না।

Read More

হুমায়ূন আহমেদের লেখা হোটেল গ্রেভার ইন খন্ড-১২  

 

 

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *