হুমায়ন আহমেদ এর হিমুর দ্বিতীয় প্রহর খন্ড-৪

তুই বিয়ে না করে খুব ভাল আছিসদিব্যি শরীরে বাতাস লাগিয়ে ঘুরছিস তােকে দেখে হিংসা হয়স্বাধীনতা কী জিনিস তা কী মার্ম সেটা বােঝে শুধবিবাহিত পুরুষরাইউঠিরে হিমু

হিমুর দ্বিতীয় প্রহর
               হিমুর দ্বিতীয় প্রহর

আচ্ছা । 

বাদলের প্রসঙ্গে যা বলেছি মনে থাকে যেনমনে পাকবেও আচ্ছা তাের অসুখের ব্যাপারটাই তাে কিছু জানলাম নাকী অসুখ?” 

ঠা লেগেছেঠাঞ্জা লাগল কীভাবে? ফুটপাতে চাদর গায়ে শুয়েছিলাম চোর চাদর নিয়ে গেল‘ 

ফুটপাতে ঘুমুচ্ছিলি?” 

নাে প্রবলেম” 

শােন হিমু, আমরা চাচ্ছি, ওর একটা বিয়ে দিতেমােটামুটি নিমরাতি করিয়ে ফেলেছিএখন তুই যদি ভুং ভাজং দিস তাহলেতাে আর বিয়ে হলে নাসে হদ পাঞ্জাবী পরে হাটা দেবে। 

আমি কেন ভুং ভাজং দেব? তােকে দিতে হবে নাতােকে দেখলেই ওর মধ্যে আপনাআপনি ভুজংভাজং হয়ে যাবেঅনেক কষ্টে তাকে নরম্যাল করেছি, সব জলে যাবে। 

আপনি নিশ্চিন্ত হয়ে থাকুন। 

ঘরে ঘুমুতে আর ভাল লাগে না?” 

বাদল এয়ারপাের্টে নেমেই বলেছেহিমুদা কোথায়? আমি মিথ্যা করেবলেছি, সে কোথায় কেউ জানে না। 

ভাল বলেছেনমেসের ঠিকানা চাচ্ছিলতাের আগের মেসের ঠিকানা দিয়ে দিয়েছিখুবই ভাল করেছেন আগের ঠিকানায় খোঁজ নিতে গিয়ে ঠগ খাবে‘ 

খোঁজ নিতে এর মধ্যেই গিয়েছেছেলেটাকে নিয়ে কি যে দুশ্চিন্তায় আছি! লিয়েটা দিয়ে দিতে পারলে নিশ্চিন্তআমাকে আর চিন্তা করতে হবে নাচিন্তা ছলনা যা করার বৌমা করবে‘ 

হিমুর দ্বিতীয় প্রহর খন্ড-৪

বিয়ে ঠিকঠাক করে ফেলেছেন? 

শোন হিমু, বাদলের কাছ থেকে দূরে থাকবিমনে থাকে যেন। মনে থাকবে। 

টাকাপয়সা কিছু লাগবে? লাগলে বল, লজ্জা করিস নাধর, পাঁচশাে টাকা রেখে দেঅষুধপত্র কেনার ব্যাপার থাকতে পারে।’ | আমি নােটটা রাখলামফুপা চিন্তিত ভঙ্গিতে বের হয়ে গেলেনছেলে আমার ফাদে পড়ে যদি আবার ফুটপাতে শয্যা পাতে! কিছুই বলা যায় না । ব্যাধি সব মানুষকে এক চন সুস্থ মানুষের জন্যে। 

মান্নান বেশ পছন্দ হলহাসপাতালের মানুষ গুলির একটা মিল আছেসবাই রােগীরােগযন্ত্রণায় কাতর ব্যাধি সৰ সালে দিয়েছেএকজন সুস্থ মানুষ অপচিত একজন সুস্থ মান কোনো সহমর্মিতা বােধ করবে না, কিন্তু একজন অসুস্থ মানুষ অন্য অসুস্থ মানুষের জন্যে করবে। 

তামপাতালে খাওয়াদাওয়ার ব্যাপারটা নিয়েও ভাবতে হচ্ছে নানাশতা মাছে৷ বেলী মালার আসাপুন হার ব্যবস্থাও আছেজায়গায় টাকা খাওয়ালে স্পেশাল ডায়েটের ব্যবস্থা হয়ডাক্তারদের অনেক সংস্থা আছেকলা গলায় তরুণ ডাক্তারদের কাছে অভাবে কথা বলতে পারলে অসধ তাে পাওয়া যায়ই, পৃথ্য কেনার টাকাও পাওয়া যায়রােগ সেরে গেছে, তার পরেও কিছুদিন হাসপাতালে থেকে শরীর সালালান ব্যবস্থাও আছে। খাতাপত্রে নাম থাকবে না কিন্তু বেড থাকবে

একএকদিনএকএক ওয়ার্ডে গিয়ে ঘুমাতে হবেছেলেমেয়ে নিয়ে গত সাত মাস ধরে হাসপাতালে বাস করছে এমনএকজনের সন্ধান পাওয়া গেল নাম ইসমাইল মিয়াস্ত্রীর ক্যানসার হয়েছিলতাকে হাসপাতালে ভরতি করিয়ে মাসখানিক চিকিৎসা করালসেই থেকে ইসমাইল মিয়ার হাসপাতালের সঙ্গে পরিচয়ধীরে ধীরে পুরাে পরিবার নিয়ে সে হাসপাতালে পার হয়ে গেলস্ত্রী মরে গেছেতাতে অসুবিধা হয় নি বাচ্চারাহাসপাতালের বারান্দায় ফেলে

হিমুর দ্বিতীয় প্রহর খন্ড-৪

এক ওয়ার্ড থেকে আরেক ওয়ার্ডে ঘুরে কেউ কিছু বলে নাইসমাইল মিয়া দিনে বাইরে কাজকর্ম করে (মনে হয় দুনম্বরী তাজচুরি, ফটকাবাজি) রাতে হাসপাতালে এসে ছেলেমেয়েদের খুঁজে বেরকরেঘুমানোর একটা ব্যবস্থা করেইসমাইল মিয়ার সঙ্গে পরিচয় হলঅতি ভদ্র অতি বিনয়ীহাসিমুখ ছাড়া কথা বলে নাতার মধ্যে দার্শনিক ব্যাপারও আছেআমি বললাম, হাসপাতালে আর কতদিন থাকবে । 

তলায় পইরা দুইটা পিপিলিকার সত্যু হলে তাও আলাহপাকের বিধানআজরাইল আলাইহেস সালাম আল্লাহপাকের নির্দেশে দুই পিপিলিকার জানকবজ করবে। 

আচ্ছা। 

এই জন্যেই ভাইজান কোন কিছু নিয়া চিন্তা করি না যার চিন্তা করার কথা সেই চিন্তা করতেছেআমি চিন্তা কইরা কি করব । 

কার চিন্তা করার কথা

কার আবার আল্লাহপাকের| ইসমাইল মিয়া খুবই আল্লাহভক্তসমস্যা হচ্ছে তার প্রধান কাত চলি চুরির পক্ষেও সে ভাল যুক্তি দাড় করিয়েছে— 

চুরিতে আসলে কোন দোষ নাই ভাইজানভালুক কি করে? পেটে ক্ষিধালাগলে মৌমাছির মৌচাক থাইক্যা মধু চুরি করেএর জন্যে ভালকের লােষ হয়এখন বলেন মানুষের দোষ হইল ক্যান। 

বগার মা নামের এক বৃদ্ধার সঙ্গে পরিচয় হলসে আভ করেঝাড় না কাঠি নিয়ে রােগিদের ঝাড়েতাতে নাকি অতি দ্রুত রােগ আরোগ্য হয়হাসপাতালে সর্বাধুনিক চিকিৎসার সাথে সাথে চলে ঝাড়ফুক। 

হিমুর দ্বিতীয় প্রহর খন্ড-৪

এই বৃদ্ধা দশটাকার বিনিময়ে আমাকেও একদিন ঝেড়ে গেলেনআমি দশটাকার বাইরে আরাে পঞ্চাশ টাকা দিয়ে ঝাড়া মন্ত্র খানিকটা শিখে নিলাম । 

কালী সাধনাবিষ্ট কালী মাতাউত্তর দক্ষিণ, পূর্ব পশ্চিম ব্লাও নাও ঈশানে যাও বগার মাসঙ্গে অনেক গল্পগুজব করলাম জানা গেল না বলে তার কোন ছেলে বা মেয়ে নেইতার তিনবার বিয়ে হয়েছিলকোন ঘরেই কোন সন্তান হয় নাই কি করে তার নাম বগার মা হয়ে গেল তিনি নিজেও জানেনা 

ইসমাইল দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলে বলল, ক্যামনে বলি ভাইজান? আমার হাতে তাে কিছু নাই। তোমার হাতে নেই কেন?” সর তাে ভাইজান আল্লাহপাকের নির্ধারণআল্লাহপাক নির্ধারণ করেনেমেই আনি লাচ্ছা নি হাসপাতালে থাকব এইজন্যে আছিযেদিন নির্ধারণ করবেন আর দরকার নাই সেইদিন বিদায়। 

তাতো বটেইআল্লাহপাকের হুকুম ছাড়াতো ভাইজান কিছুই হওনের উপায় নাইতাও ঠিকসদ নাে পিপিলিকা আল্লাহপাক তার খবর রাখেনআপনার পাশে 

আমি বললাম, মা ঝাড় ফুকে রােগ সারে। 

বগার মা অতি চমৎকৃত হয়ে বললেন, কি কও বাবা? ঠিকমত ঝাড়তে পারলে ক্যানসার সালে। 

আপনি সারিয়েছেন?‘ 

হিমুর দ্বিতীয় প্রহর খন্ড-৪

অবশ্যইত্রিশ বছর ধইরা ঝাড়তেছিত্রিশ বস্থানের ক্যানসার ম্যাসারকত কিছু ভাল করেছিএকটা কচকা ঝাড়া দশটা পেনিসিলিইনজেকশনের সমানবাপধন তােমারে যে ঝাড়া দিলাম এই ঝাড়ায় দেখবা আই দিনে লিনোসিধা হইয়া দাড়াই। 

তিনি অবশ্যই তার পুত্রকে কিছুদিন আমি বসলামআমার সামনে পিরিচে ঢাকা একটা চায়ের কাপ অভাবজানার সামনেও তাই চা তৈরী করে সে আমাকে নিয়ে এসেছেআমি তার জেতালে সামান্য হলেও কৌতুহল জাগিয়ে তুলতে পেরেছি। 

হিমু সাহেব।’ 

হাসপাতালে আমি অনেক কিছুই শিখলামহাসপাতালে ব্যাপান, আমার বাবার চোখ এড়িয়ে গিয়েছিলনয়ত তিনি অবশ্যই তার আর হাসপাতালে রেখে দিতেনএবং তার বিখ্যাত উপদেশমালার সঙ্গে আলাে উপদেশ যুক্ত হত । 

প্রতি দুই বৎসর অন্য হাসপাতালে সাতদিন থাকিবার ব্যবস্থা করেনমানুষের জরাব্যধি শোক তাহাদের পাশে থাকিয়া অনুধাবন করিলার চেষ্টাকরিবে। বাড়ি কী, জীব জগথকে ব্যাধি কেন বার বার আক্রমণ করে তাহবয়িলার চেষ্টা করিবেতবে মনে রাখিও ব্যাধিকে ঘৃণা করিবে নাব্যাধিজীবনেরই অংশ। জীবন আছে বলিয়াই ব্যাধি আছে” 

আপনি কি সিগারেট খান? কেউ লিলে খাই। 

নিন সিগারেট নিনডাক্তাররা সৰ লােশীলের প্রত্ম যে উপাদেশ লেম তা হচ্ছেসিগারেট ছাড় সেখানে আমি আপনাকে সিগাত্রেট দিচ্ছি, মারণ কি ললনাতাে?” বুঝতে পারছি না‘ 

হিমুর দ্বিতীয় প্রহর খন্ড-৪

কারণ আমি নিজে একটা সিগারেট খাবছেলেদের সঙ্গে পাল্লা দিতে গিয়ে সিগারেট ধরেছিলামছেলেরা সিগালেট খাবে আমরা মেয়েলা কেন খাব না? এখন এমন অভ্যাস হয়েছেএর থেকে বেলতে পারছি নাচেষ্টা অবশ্যি করছি না‘ 

 ফারজানা সিগারেট ধরালআশ্চর্য সিগারেটটাও তার ঠোটে মানিয়ে গেলপাতলা ঠোটের কাছে জ্বলন্ত আগুনবাহ কি সুন্দরসুন্দরী তরুণীদের ঘিলে যা থাকে সবইকি সুন্দর হয়ে যায়

হিমু সাহেব!” 

কেমন আছেন হিমু সাহেব? জ্বি ম্যাডাম ভাল আছি‘ 

আপনার বুকে কনজেশন এখনাে আছেএন্টিবায়ােটিক যা দেয়া হয়েছেকনটিনিউ করবেনসেরে যাবে‘ 

থ্যাংক ম্যা ম্যাডাম । 

আপনাকে রিলিজ করে দেয়া হয়েছে আপনি চলে যেতে পারেনথ্যাংক যা ম্যাডাম” প্রতিটি বাক্যে একবার করে ম্যাডাম বলছেন কেন? ম্যাডাম শব্দটা আমারপছন্দ নাআর বলবেন নাজি আচ্ছা বলব না‘ 

আপনার হাতে কি সময় আছে? সময় থাকলে আমার চেম্বারে আসুনআপনার সঙ্গে কিছুক্ষণ গল্প করি‘ 

জি আচ্ছাআমি তরুণী ডাক্তারের পেছনে পেছনে যাচ্ছিতার নাম ফারজানাসুন্দর মানুষকেও সব সময় সুন্দর লাগে নাকখনো খুব সুন্দর লাগে, কখনাে মােটামুটি লাগেএই তরুণীকে আমি যতবার দেখেছি ততবারই মুগ্ধ হয়েছিএপ্রন ফেলেদিয়ে ফারজানা যদি ঝলমলে একটা শাড়ি পরত তাহলে কি হত?

ঠোটে গাঢ় লপাড়, কপালে টিপহালকা নীল একটা শাড়ি কানে ঝুলবে নীল পাথরের  তোফ দুলএই মেয়ে কি বিয়ে বাড়িতে সেজেগুজে যায় না? তখন চারদিকে অবস্থাটা কি হয়? বিষের কনে নিশ্চয়ই মন খারাপ করে ভাবে এই মেয়েটাকেন এসেছেআজকের দিনে আমাকে সবচে সুন্দর দেখানাের কথাএই মেয়েটা সেই জায়গা নিয়ে নিয়েছেএটা সে পারে না। 

হিমুর দ্বিতীয় প্রহর খন্ড-৪

হিমু সাহেব। 

জু। 

এখন গল্প করুন। আপনার গল্পশুনি। কি গল্প শুনতে চান

আপনি অস্বাভাবিক একটা দৃশ্য দেখে ভয় পেয়েছিলেন ভয় পেয়ে অসুস্থ বাধিয়েছেনসেই অস্বাভাবিক দৃশ্যটা কি আমি জানতে চাচ্ছি‘ 

কেন নিতে চাচ্ছেন

জানতে চাচ্ছিকারণ এই পৃথিবীতে অস্বাভাবিক কিছুই ঘটে নাপৃথিবীচলে তার স্বাভাবিক নিয়মেমানুষ সেইসব নিয়ম একে একে জানতে শুরু | করেছেএই সময় আপনি যদি অস্বাভাবিক দৃশ্য দেখতে শুরু করেনতাহলেতাে সমস্যা” 

মানুষ কি সবকিছু জেনে ফেলেছে?‘ 

ফারজানা সিগারেটে লম্বা টান দিয়ে বলল, সব কিছু না জানলে অনেককিছুই জেনেছেইউনিভার্স কি ভাবে সৃষ্টি হল তাও জেনে গেছে। আমি চায়ে চুমুক দিতে দিতে হাসিমুখে বললাম, ইউনিভার্স কি ভাবে সৃষ্টি হয়েছে। 

লা লা থেকে সব কিছুর শুরুআদিতে ছিল প্রিমলছিল নৈর্য অস্ত্র উচ্চতা কিছুই নেইসেই এটম বিগ ব্যাং ভেঙ্গে গেলসে এবং টাইমসেই স্পেস ছড়িয়ে পড়তে লাগলএক্সপানডিং ৯৯ 

সমকাের শুরু তাহলে বিগ ব্যাং থেকো

সআরডিয়েল এটম যার ভঙ্গে গেল তৈরী হল পানডিং ইউনিভার্সে। 

বিগ ব্যাং এর আগে সময় ছিল না?‘ 

বিগ ব্যাং এর আগে তাহলে কি ছিল

সেটা মানুষ কখনাে জানাতে পারবে নামানুষের সমস্ত বিদ্যা এবং তা শুরুও বিগ ব্যাং এর পর থেকেই

 

Read More 

হুমায়ন আহমেদ এর হিমুর দ্বিতীয় প্রহর খন্ড-৫

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *