হুমায়ূন আহমেদ এর লেখা বাদশাহ নামদার শেষ – পর্ব

বাদশাহ নামদার শেষ – পর্ব

সৈনিকরা বলল, তাঁবুর ভেতর একজন কেউ আছে। সে কে আমরা জানি না জাহাঁপনা। বৈরাম খাঁ তাকে তাঁবুতে রেখেছেন। আমাদের ওপর নির্দেশ সে যেন পালিয়ে যেতে না পারে এবং কেউ যেন তাঁবুতে ঢুকতে না পারে। গেলেন। অবিকল তার মতো দেখতে এবং তার সাজ পোশাকে একজন কে তাঁবুর ভেতরে চারপাই-এ বসে আছে। সে সম্রাটকে দেখে উঠে দাঁড়াল এবং কুর্ণিশ করল। হুমায়ূন বলল, তুমি কে?

জাহাঁপনা আমি একজন তুর্ক। আমার নাম হামজা।

তুমি দেখতে অবিকল আমার মতো এটা জানো?

জানি জাহাঁপনা। এই জন্যেই আমাকে আটকে রাখা হয়েছে।

তুমি দেখতে আমার মতো এটা কোনো অপরাধ হতে পারে না। ঘটনা আমাকে খুলে বলো।জাহাঁপনা, আমি দুসরা হুমায়ূন। যদি কোনো দুৰ্ঘটনায় আপনার প্রাণহানি হয়, তখন আমাকে দেখিয়ে বলা হবে হুমায়ূন জীবিত। সৈন্যদের মধ্যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি যাতে না হয় সেই ব্যবস্থা।

তোমার পেশা কী?

জাহাঁপনা, আমি একজন মুচি। পাদুকা সেলাই করি।

আরেকজন পাদুকা সেলাই করে। কী আশ্চর্য! তুমি আজ রাতে আমার সঙ্গে খানা খাবে।

জাহাঁপনা, এই তাঁবুর বাইরে যাওয়ার আমার হুকুম নাই।

তোমার জন্মতারিখ কী?

আমার মতো মানুষদের জন্মতারিখ কেউ রাখে না জাহাঁপনা।

বিবাহ করেছ?

জি জাহাঁপনা।

স্ত্রীর নাম কী?

যদি গোস্তাকি না নেন। তাহলেই স্ত্রীর নাম বলতে পারি।

গোস্তাকি নেব না।

আমার স্ত্রীর নাম হামিদা।

হুমায়ূন বিড়বিড় করে যে শের আবৃত্তি করলেন তার অর্থ–

বিশ্বের বিপুল রহস্যের আমরা যেটুকু জানি

তাও রহস্যে ঢাকা।।

নিজ তাঁবুতে ফিরে তেমন কোনো কারণ ছাড়াই হুমায়ূন অসুস্থ হয়ে পড়লেন। প্রবল জ্বরে তাঁর শরীর কাঁপতে লাগল। বিকারের ঘোরে বারবার ডাকতে লাগলেন, আকিকা বেগম! তুমি কোথায়? আকিকা! সবাই যখন হুমায়ূনকে নিয়ে ব্যস্ত ঠিক তখনই মীর্জা কামরান তাঁর বাহিনী নিয়ে উপস্থিত হলেন। অতর্কিত আক্রমণে হুমায়ূনের বাহিনী হকচকিয়ে গেল।

মীর্জা কামরান ব্যূহের ভেতর ঢুকে পড়ল। যে-কোনো মুহূর্তে হুমায়ূনের তাঁবু আক্রান্ত হবে এমন অবস্থা।হুমায়ূনকে রক্ষার জন্যে মীর্জা হিন্দাল এগিয়ে গেলেন। মীর্জা কামরান যুদ্ধে পরাজিত হয়ে পালিয়ে গেলেন, তবে একা গেলেন না। তাঁর ছোটভাইয়ের প্ৰাণ সঙ্গে করে নিয়ে গেলেন। মীর্জা হিন্দাল যুদ্ধে নিহত হলেন।

বৈরাম খাঁ শিশু আকবর, তার মা হামিদা বানু এবং হুমায়ূন-মাতা মাহিম বেগমকে নিয়ে ফিরলেন পরদিন ভোরে।বৈরাম খাঁ’র মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ল। হুমায়ূন অচেতন, মীর্জা হিন্দল নিহত। সৈন্যবাহিনী লণ্ডভণ্ড।দুটি মৃত্যুসংবাদ দাবানলের মতো ছড়িয়েছে। দিল্লীর সিংহাসনের অধিকর্তা ইসলাম শাহ্র মৃত্যু এবং বাবরপুত্র হুমায়ূনের মৃত্যু।

ইসলাম শাহ’র উত্তরাধিকারী তিনজন। তারা সিংহাসনের দখল নেওয়ার চেষ্টায় আছেন। জায়গায় জায়গায় তুমুল যুদ্ধ শুরু হয়েছে। ছোট রাজ্যের রাজারা কোন পক্ষ নেবেন ঠিক করতে ব্যস্ত।হুমায়ূনের উত্তরাধিকারী শিশু আকবর। মোগল শিবির শান্ত। আমীরদের মধ্যেই যা কিছু অস্থিরতা। তারা জানতে চান হুমায়ূনের মৃত্যুসংবাদ কতটুকু সত্যি!

হুমায়ূন গুরুতর অসুস্থ এটা সত্যি। রাজমহিষীরা সবাই চলে এসেছেন এটাও সত্যি। অসুস্থ হুমায়ূন রাজমহিষীদের তত্ত্বাবধায়নে আছেন। তাঁরা হুমায়ূন সম্পর্কে কোনো তথ্যই জানাচ্ছেন না। সম্রাটের ব্যক্তিগত মৌলানাকে তাঁবুতে ঢুকে চিন্তিত অবস্থায় বের হতে দেখা গেছে। সম্ভবত তিনি শেষ যাত্রার প্রস্তুতি হিসেবে তওবা করিয়েছেন।

আমীররা বৈরাম খাঁ’র সঙ্গে বৈঠকে বসেছেন। বৈরাম খাঁ’র কাছ থেকে ভেতরের খবর যদি কিছু পাওয়া যায়।বৈরাম খাঁ বললেন, আমার ধারণা সম্রাট হুমায়ূন মৃত। রাজমহিষীদের কাছ থেকে ইঙ্গিত সে রকম পাচ্ছি।আমীরদের একজন (সালার খাঁ) বললেন, এই অবস্থায় আমাদের করণীয় কী? বৈরাম খাঁ বললেন, আপনারা চিন্তা করে বের করুন কী করবেন। সত্যি সত্যি সম্রাটের মৃত্যু হয়ে থাকলে আমি আছি। যুবরাজ আকবরের পেছনে।

আকবর একজন শিশু।বৈরাম খাঁ বললেন, শিশু বড় হবে। ততদিন আপনারা থাকবেন। শিশুর অভিভাবক। আর আপনারা যদি মনে করেন এমন বিশৃঙ্খল অবস্থায় না থেকে মীর্জা কামরানের সঙ্গে যোগ দেবেন। সেই পথও খোলা। মীর্জা হিন্দাল নিহত—এই খবর আপনারা জানেন। তিনি বীরের মতো ভাইয়ের জন্যে যুদ্ধ করে মরেছেন। মীর্জা আসকারি আমাদের সঙ্গেই বন্দি অবস্থায় আছেন। মীর্জা কামরান শক্তি সংগ্রহের চেষ্টায় আছেন। আপনাদের মধ্যে কেউ যদি তার হাত শক্তিশালী করতে চান, করতে পারেন।

আরেক আমীর বললেন, কেউ যদি অন্য শিবিরে যেতে চায় তাকে বাধা দেওয়া হবে না? বৈরাম খাঁ বললেন, সম্রাট অসুস্থ। তিনি এই বিষয়ে কোনো ফরমান জারি করতে পারছেন না। আমি শুধু সেনাবাহিনীর প্রধান, আমার পদমর্যাদা আমীরদের নিচে।

বৈঠকের শেষে তিনজন আমীর জানালেন, তাঁরা হুমায়ূনের শিবিরে থাকবেন না, তবে মীর্জা কামরানের দলেও যোগ দেবেন না। তাদের রাজনীতির প্রতি বৈরাগ্য চলে এসেছে। তারা মক্কায় হজ করতে যাবেন। সেখান থেকে ফেরার সম্ভাবনাও ক্ষীণ।বৈরাম খাঁ বললেন, এমন যদি হয়, আমাদের সম্রাট সুস্থ আছেন এবং ভালো আছেন তাহলে কি আপনারা হজে যাওয়ার বাসনা ত্যাগ করবেন?

আমীররা মুখ চাওয়াচাওয়ি করছেন। বৈরাম খাঁ ঠিক কী বলতে চাচ্ছেন বোঝা যাচ্ছে না। যতই দিন যাচ্ছে বৈরাম খাঁ’র আচার-আচরণ ততই রহস্যময় হয়ে উঠছে।বৈরাম খাঁ বললেন, সম্রাট হুমায়ূন সম্পূর্ণ সুস্থ। স্বপ্নে আদিষ্ট হয়ে তিনি চিল্লায় ছিলেন। চিল্লার মেয়াদ আগামীকাল ফজর ওয়াক্তে শেষ হবে। তিনি তখন সবাইকে দর্শন দেবেন।

আমীররা সবাই একসঙ্গে বললেন, মারহাবা।বৈরাম খাঁ বললেন, আপনাদের মধ্যে যারা মক্কায় যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন তারা সম্রাটের দর্শন পাবেন না। তাদেরকে কিছুক্ষণের মধ্যে মক্কার দিকে যাত্রা শুরু করতে হবে।প্রধান আমীর ফৈয়জ খাঁ বললেন, এই সিদ্ধান্ত আপনি নিতে পারেন না।বৈরাম খাঁ বললেন, এই সিদ্ধান্ত আমার না। সম্রাট হুমায়ূনের।

তিনি অবিশ্বস্ত আমীরদের আলাদা করার দায়িত্ব আমাকে দিয়েছেন। এই দায়িত্ব আমি ভালোমতো সম্পন্ন করেছি। সম্রাটের মিথ্যা মৃত্যুসংবাদ রটানো আমার একটি কৌশল মাত্র।ফজরের নামাজ শেষ হয়েছে। প্রধান আমীরকে নিয়ে বৈরাম খাঁ নদীর কাছে গেছেন। পাথরের উপর বসে হুমায়ূন বই পড়ছেন। আমীরের কুর্নিশের জবাবে তিনি মাথা ঝাঁকালেন।

ফৈয়জ খাঁ বললেন, ইনি আমাদের সম্রাট না। আপনি তাকে ঠিকমতো শিখিয়ে দেন নাই কুর্নিশের জবাবে কী করতে হয়।বৈরাম খাঁ বললেন, এই কাজটা আমি আপনার জন্যে রেখে দিয়েছি। আপনি শেখাবেন।সম্রাট কি তাহলে ইন্তেকাল করেছেন?

না। তবে তাঁর অবস্থা সঙ্গিন। যে-কোনো মুহুর্তে আমরা তার মৃত্যুসংবাদ পাব।হায় আল্লাহ। কী দুঃসংবাদ! বৈরাম খাঁ বললেন, প্রতিটি দুঃসংবাদের সঙ্গে একটি সুসংবাদ থাকে। সুসংবাদ শুনুন। পাঞ্জাবের রাজা সুলতান আদম গক্করের হাতে মীর্জা কামরান বন্দি হয়েছেন। সম্রাট হুমায়ূনের প্রতি শুভেচ্ছার নিদর্শন হিসেবে তিনি বন্দি কামরানকে হস্তান্তর করতে চান।শুকুর আলহামদুলিল্লাহ। এখন আপনার পরিকল্পনা কী?

বৈরাম খাঁ বললেন, সম্রাট হুমায়ূন জীবিত থাকুন বা মৃত থাকুন আমি দিল্লী দখল করব। এই সুযোগ দ্বিতীয়বার আসবে না। সুলতান শাহ’র তিনপুত্র নিজেদের মধ্যে যুদ্ধ শুরু করেছে। এরা কেউ আমার বাহিনীর সামনে দাড়াতে পারবে না।ফৈয়জ খাঁ বললেন, সিকান্দর শাহ’র কিন্তু বিশাল বাহিনী।বৈরাম খাঁ বললেন, আমি পাঞ্জাব দিয়ে ঢুকব। সিকান্দর শাহ’র কল্পনাতেও নাই কেউ পাঞ্জাব দিয়ে ঢুকে তাকে আক্রমণ করতে পারে।যুদ্ধযাত্রায় নকল হুমায়ূন থাকবেন?

অবশ্যই। সে থাকবে হাতির পিঠে। আপনি অন্য আমীরদের নিয়ে তাকে ঘিরে থাকবেন। যাতে নকল হুমায়ূনকে স্পষ্ট দেখা না যায়।আপনার সাহসের তারিফ করছি।বৈরাম খাঁ বললেন, বুদ্ধির তারিফ করছেন না? অবশ্যই।বৈরাম খাঁ বললেন, আমার প্রিয় সম্রাট পবিত্র কোরানের একটি আয়াত প্রায়ই পাঠ করতেন। সেই আয়াতে আল্লাহপাক বলছেন, আমি তোমাদের ভাগ্য তোমাদের গলায় হারের মতো ঝুলাইয়া দিয়াছি।

ইহা আমার পক্ষে সম্ভব। দেখা যাক সম্রাট হুমায়ূনের ভাগ্যে কী লেখা।বৈরাম খাঁ শেষ মুহুর্তে হাতির পিঠে করে নকল হুমায়ূনের যাত্রা বাতিল করলেন। তিনি ঘোড়সওয়ার বাহিনী নিয়ে অতি দ্রুত অগ্রসর হবেন। হাতি যথেষ্ট দ্রুতগামী হলেও ঘোড়ার অনেক পিছনে পড়ে থাকবে।হুমায়ূনের জীবনের আশা সবাই ত্যাগ করেছেন।

আগে বেদানার রস খানিকটা মুখে নিতেন, পুরো এক দিন এক রাত্রি পার হয়েছে বেদানার রসও মুখে নিতে পারছেন না। তার চোখ বন্ধ। আগে ডাকলে অস্ফুট শব্দ করে সাড়া দিতেন। এখন সাড়াও দিচ্ছেন না। হুমায়ূন-মাতা মাহিম বেগমকে চিকিৎসক পুত্রের আরোগ্য লাভের আশা ছেড়ে মন শক্ত করার পরামর্শ দিয়েছেন। মাহিম বেগম অর্ধমৃত অবস্থায় আছেন। তিনি খাদ্য গ্রহণ বন্ধ করে দিয়েছেন।

এখন মধ্যরাত্রি। বহু বছর আগের একটি ঘটনার পুনরাবৃত্তি হচ্ছে। হুমায়ূনের বিছানার চারপাশ দিয়ে হামিদা বানু হাঁটতে হাঁটতে বলছেন, আমার প্রাণের বিনিময়ে হে আল্লাহপাক তুমি সম্রাটের জীবন ভিক্ষা দাও।চতুর্থবোর ঘূর্ণন শেষ করে হামিদা বানু চমকে তাকালেন, হুমায়ূন চোখ মেলে তার দিকে তাকিয়ে আছেন। মায়াময় হাসি হাসি চোখ।

হুমায়ূন বললেন, হামিদা! বিড়বিড় করে কী বলছ? হামিদা বানু ছুটে এসে সম্রাটকে জড়িয়ে ধরে বললেন, কিছুক্ষণ আগে খবর এসেছে বৈরাম খাঁ সিকান্দর শাহকে পরাজিত করে দিল্লী দখল করেছেন। আপনি এখন হিন্দুস্থানের সম্রাট।হুমায়ূন ক্ষীণ গলায় বললেন, এই সংবাদ আমি পেয়েছি।কীভাবে পেয়েছেন? আমার কন্যা আকিকা বেগম স্বপ্নে এসে আমাকে বলেছে। গরম পানির ব্যবস্থা করতে বলো। আমি স্নান করে শোকরানা নামাজ পড়ব।উঠে বসার সামৰ্থ্য কি আপনার আছে?

হ্যাঁ আছে। ইনশাল্লাহ। আমি সম্পূর্ণ সুস্থ।আচার্য হরিশংকর তার ঘরে। বিছানায় শুয়ে আছেন। তার হাতের কাছে মালশায় আগুন জ্বলছে। তিনি মালশার আগুনে মাঝে মাঝে হাত সেঁকছেন। আগুনের উত্তাপে তার খানিকটা আরাম বোধ হয়। ঘরে পচা মাংসের বিকট দুৰ্গন্ধ। হরিশংকর ফুট-ফরমাস খাটার জন্যে যে ছেলেটিকে রেখেছিলেন, সে পালিয়েছে।

মালশায় আগুন অনেক কষ্টে হরিশংকর নিজেই জ্বলিয়েছেন। হরিশংকরের প্রচণ্ড পানির পিপাসা পেয়েছে। পানি দেওয়ার কেউ নেই। খাট থেকে নেমে পানির সন্ধান করবেন। সেই শক্তি পাচ্ছেন না।ব্যাধি সারা শরীরে ছড়িয়েছে। এতদিন যন্ত্রণাবোধ ছিল না। এখন হঠাৎ হঠাৎ তীব্র যন্ত্রণা হচ্ছে। এই যন্ত্রণার চেয়ে মৃত্যু অনেক ভালো। মৃত্যু আসছে না।আমার বাবা কোথায় জানেন?

হরিশংকর তাকালেন, আকিকা বেগম নামের প্রেতিটা আবার এসেছে। রোগ থেকে তাঁর যেমন মুক্তি নেই, প্রেতের হাত থেকেও মুক্তি নেই।আকিকা বেগম বলল, আমার বাবা এখন হিন্দুস্থানের সম্রাট।হরিশংকর বললেন, এই যা যা। না গেলে তোর গায়ে আগুন ছুঁড়ে মারব।আকিকা বেগম খিলখিল করে হাসছে। হরিশংকর আগুনের মালশা ছুঁড়ে মারলেন। জ্বলন্ত কয়লা ঘরময় ছড়াল।

কাপড়ে লাগল। দেখতে দেখতে ঘরে আগুন ধরে গেল। আগুন এগিয়ে আসছে হরিশংকরের দিকে। হরিশংকর নড়লেন না। মন্ত্রমুগ্ধের মতো আগুনের দিকে তাকিয়ে রইলেন।হুমায়ূন দিল্লীর সিংহাসনে বসেছেন, তারিখ ২৩ জুলাই ১৫৫৫ খ্রিষ্টাব্দ। তার ডানপাশে শিশুপুত্র আকবর। আকবরের মাথায় পাগড়ি পরানো ছিল। সে পাগড়ি খুলে ফেলেছে। পাগড়ি নিয়ে খেলছে।নকিব ঘোষণা দিল আল সুলতান আল আজম ওয়াল খাকাল আল মোকাররম, জামিই সুলতানাত-ই-হাকিকি ওয়া মাজাজি, সৈয়দ আলসালাতিন, আবুল মোজাফফর নাসিরুদ্দিন মোহাম্মদ হুমায়ূন পাদশাহ গাজি জিল্লুললাহ।

আমীররা একে একে এসে সম্রাট হুমায়ূনের হাত চুম্বন করলেন। সম্রাট সবার কুশল জিজ্ঞাসা করলেন। আমীরদের পর এলেন। বৈরাম খাঁ। হুমায়ূন সিংহাসন ছেড়ে উঠে দাঁড়ালেন। বৈরাম খাঁকে চমকে দিয়ে তাকে বুকে জড়িয়ে ধরলেন। তিনি ঘোষণা করলেন, বৈরাম খাঁকে আমি ‘খান খান্নান’ (রাজাদের রাজা) সম্মানে সম্মানিত করছি। আমার শরীর ভালো যাচ্ছে না। হঠাৎ মারা যেতে পারি। এমন কিছু ঘটলে নকল হুমায়ূন দিয়ে সিংহাসন রক্ষা করতে হবে না। আমার অবর্তমানে উনি হবেন আকবরের অভিভাবক।

আকবর বয়োপ্রাপ্ত না হওয়া পর্যন্ত বৈরাম খাঁ’র নির্দেশে হিন্দুস্থান চলবে।বৈরাম খাঁ বললেন, আমার প্রাণের চেয়েও প্রিয় সম্রাট অনেক কষ্ট করেছেন। তাকে আমি আর কোনো কষ্ট করতে দেব না। বাকি জীবন অবশ্যই তিনি কাটাবেন মনের আনন্দে। আমাদের চারপাশে অনেক বিদ্রোহী আফগান দল আছে। তারা বিশৃঙ্খলার চেষ্টা চালাবে। সম্রাটকে এইসব কিছুই দেখতে হবে না। আমি দেখব।

আমীররা বললেন, মারহাবা।চিকের আড়াল থেকে মহিলাদের চাপা হাসি শোনা যাচ্ছে। অন্তঃপুরের সবাই দীর্ঘদিন পর দরবার শুরুর দৃশ্য দেখতে এসেছেন। মেয়েদের কণ্ঠস্বর এত উঁচু হওয়া উচিত না যে অন্য পুরুষরা তা শুনতে পান।সমস্ত নিয়মের ব্যতিক্রম করে উঁচু গলায় গুলবদন বললেন, আমার ভাই হিন্দুস্থানের সম্রাট পাদশাহ হুমায়ূনকে মোবারকবাদ।

হাতে-পায়ে শিকল বাঁধা অবস্থায় মীর্জা কামরানকে প্রাসাদের এক প্রকোষ্ঠে রাখা হয়েছে। প্রকোষ্ঠের বাইরে অস্ত্ৰধারী সৈনিকরা পাহারায় আছে। সম্রাটের নির্দেশে জওহর মীর্জা কামরানের কাছে এসেছে। জওহরকে বলা হয়েছে সে যেন কামরানকে শান্ত রাখার চেষ্টা করে।কামরান বললেন, তুমি কি আগে কখনো আমার নফর ছিলে?

জওহর বলল, না জনাব। আমি সবসময়ই সম্রাটের আবিতাবচি ছিলাম। এখনো আছি।কামরান বললেন, আমার কয়েকদিনের রোজা রাখা হয় নি। তুমি কি আমার হয়ে কাজা রোজা রাখতে পারবে? জওহর বলল, অবশ্যই পারব। তবে আপনার রোজা আপনারই রাখা উচিত।শিকলের কারণে আমি নামাজ পড়তে পারছি না। তুমি সম্রাটকে বলে আমার নামাজ পড়ার ব্যবস্থা করে দাও।

জওহর বললেন, ইশারায় নামাজ পড়ার বিধান আছে। আপনি ইশারায় নামাজ পড়ুন।আরে বুরবাক, ইশারায় নামাজ না হয় পড়লাম, ইশারায় অজু করব কীভাবে?কঠিন দুঃসময়ের নামাজে অজু লাগে না।কামরান বললেন, তাও ঠিক। তুমি আমার বিষয়ে কী শুনেছ? আমার কি মৃত্যুদণ্ড হবে?

আমি অতি তুচ্ছ একজন পানিবাহক। আমার সঙ্গে এই বিষয়ে কারোর কথা কেন হবে?তাও ঠিক। আচ্ছা শোনো, মীর্জা আসকারিকে কি শাস্তি দেওয়া হয়েছে? আপনি তো জানেন তাকে কী শান্তি দেওয়া হয়েছে।আমি কিছুই জানি না। আমাকে কিছু জানানো হয় না।জওহর বলল, সম্রাট তাকে ক্ষমা করেছেন। নিজ খরচায় তাকে মক্কা পাঠানোর ব্যবস্থা করেছেন।

মীর্জা কামরান দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলে বললেন, আবারও তোমার সম্রাট ভুল করলেন। সে যে মক্কা থেকে ফিরে আসবে না এবং সৈন্য সংগ্ৰহ করবে না। এই নিশ্চয়তা কি? আমি সম্রাট হলে তাকে মক্কা পাঠাতাম, তবে আগে চোখ তুলে নিতাম।জওহর বলল, কেউ কারও মতো না।তা ঠিক। আমাকে কবে সম্রাটের কাছে নেওয়া হবে তা কি জানো?

জনাব, আমি আপনাকে আগেই বলেছি। আমি একজন তুচ্ছ আবতাবচি।মীর্জা কামরান বললেন, তুচ্ছও মাঝে মাঝে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়। এই বিষয়ে একটা শের শুনতে চাও? আপনি শোনাতে চাইলে আগ্রহ নিয়ে শুনব।ধুলার একটি তুচ্ছ কণা চোখকে আচল করে দিতে সক্ষম।জওহর বলল, অতি উত্তম শের। মারহাবা।তোমার সম্রাট হুমায়ূনের শের কি আমার চেয়ে উত্তম?

দুজনের শের বিবেচনার যোগ্যতা আমার নেই জনাব।কামরান বললেন, তোমার যোগ্যতা পানির মশক বগলে নিয়ে ঘোরাঘুরিতে সীমাবদ্ধ।জওহর বলল, একেক জনের কাজ একেক রকম।মীর্জা কামরান বললেন, অনেকক্ষণ তোমার সঙ্গে বকবক করেছি। আমার মাথা ধরে গেছে, তুমি বিদায় হও।জওহর ঘর থেকে বের হওয়ার প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই প্ৰধান কারারক্ষী মীর্জা কামরানের ঘরে ঢুকল। কামরান বললেন, আমাকে কি মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে?

প্রধান কারারক্ষী বলল, না। সম্রাট আপনাকে জীবন ভিক্ষা দিয়েছেন।শুকুর আলহামদুলিল্লাহ। তবে আপনার চোখ তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। আপনাকেও পাঠিয়ে দেওয়া হবে মক্কায়।হতভম্ব কামরান বললেন, চোখ কখন তোলা হবে? এখনই। আমি কি ভাইয়ের সঙ্গে দেখা করতে পারব না? না। আপনাকে দেখলে আপনার ভাই দুর্বল হয়ে যাবেন। আপনার শাস্তি মওকুফ হয়ে যেতে পারে। কেউ তা চাচ্ছে না।মীর্জা বললেন, কেউটা কে?

প্রধান কারারক্ষী বললেন, কেউ-এর মধ্যে সবাই আছেন। আপনার নিজের মা মহামান্য গুলারুখ বেগমও আছেন।মীর্জা কামরান বললেন, আমাকে নিয়ে চলো। চোখ তোলো।মীর্জা কামরানের চোখ উৎপাটনের একটি প্রত্যক্ষদশী বিবরণ জওহরের বইয়ে আছে। এই রোমহর্ষক বীভৎস বর্ণনা বাদ থাকুক। ছোট্ট একটা অংশ বলা যেতে পারে।

চোখ তোলার জন্যে একজনকে চাকু হাতে মীর্জা কামরানের হাঁটুর উপর বসতে হলো। কামরান তাকে ধমক দিয়ে বললেন, চোখ তুলতে এসেছ চোখ তোলো। হাঁটুতে ব্যথা দিচ্ছ কেন বুরবাক! মক্কা যাওয়ার দিন কামরানের সঙ্গে হুমায়ূনের দেখা হলো। কামরান তাঁর কৃতকর্মের জন্যে ক্ষমা প্রার্থনা করলেন এবং নিজের একটি কবিতা আবৃত্তি করার অনুমতি প্রার্থনা করলেন।

সম্রাট বললেন, ভাই, তুমি কবিতা পড়ো।

মীর্জা কামরান দীর্ঘ কবিতা আবৃত্তি করলেন।

কবিতাটির শুরু এরকম—

মাটির ভাণ্ডে অমৃত ধারণ করা যায় না।

আমি মীর্জা কামরান মাটির ভাণ্ড ছাড়া কিছু না।

আমি গরল ধারণ করতে পারি

অমৃত কখনো না।

হুমায়ূন স্বর্ণভাণ্ড

তিনি একারণেই হৃদয়ে অমৃত

ধারণ করতে পেরেছেন।…

সম্রাট হুমায়ূন কবিতা শুনে শিশুদের মতো হাউমাউ করে কাঁদলেন।

বীরভূমের নোকরা গ্রামে হুমায়ূন তার এক আমীর তখতি খাকে পাঠিয়েছেন। হিন্দুস্থান-সম্রাট এই অঞ্চলের লছমি বাই নামের একজনকে তার সঙ্গে আহার করার নিমন্ত্রণ পাঠিয়েছেন। লছমি বাইকে নিয়ে যাওয়ার জন্যে ষোল বেহারকার রাজকীয় পান্ধি এসেছে। তখতি খী সম্রাটের একটি হুকুমনামা সঙ্গে এনেছেন। হুকুমনামায়। লছমি বাইকে পোচ শ বিঘা লাখেরাজ জমি দান করা হয়েছে।

তখতি খাঁ অনেক অনুসন্ধান করেও লছমি বাইকে খুঁজে পেলেন না। যেটুকু জানা গেল, লছমি বাই-এর স্বামী এবং পুত্র ডাকাতের হাতে নিহত হয়। লছমি বাই চরম অভাবে পর্যুদস্ত হয়ে ভিক্ষুক দলভুক্ত হয়। অনেক দিন সে নোকরা গ্রামেই ভিক্ষা করত। দীর্ঘদিন এই অঞ্চলে নেই।

সৌভাগ্য লছমি বাই-এর পাশ দিয়ে গেল। বেচারি তা স্পর্শ করতে পারল না।রাত্রি দ্বিতীয় প্রহর। সম্রাট হুমায়ূন লাইব্রেরিতে। ছবির রঙ-বিষয়ক একটি পাণ্ডুলিপি তার হাতে এসেছে। তিনি মন্ত্ৰমুগ্ধ হয়ে রঙ তৈরির কলাকৌশল শিখছেন। পানিতে অদ্রবণীয় রঙ কী করে দ্রবণীয় করা যায় সেই কৌশল পড়ে তিনি মুগ্ধ। তাঁর ইচ্ছা করছে এখনই পরীক্ষা করে দেখতে।

কে যেন সম্রাটের সামনে এসে দাঁড়িয়ে কুর্নিশ করল। লাইব্রেরির চারদিকে বৈরাম খাঁ’র বিশেষ বাহিনী পাহারা দিচ্ছে। তাদের এড়িয়ে একটি মাছিরও হুমায়ূনের কাছে আসা সম্ভব না। হুমায়ূন চমকে তাকালেন। হামিদা বানু কুর্নিশ করছেন।হুমায়ূন বললেন, এই মুহুর্তে আমি একটি রাজকীয় ফরমান জারি করছি—সম্রাটকে তার স্ত্রী হামিদা বানুর কুর্নিশ করার প্রয়োজন নেই।হামিদা বানু হাসলেন। সম্রাট বললেন, এত রাতে এখানে কেন?

হামিদা বানু বললেন, সম্রাট গভীর মন দিয়ে বই পড়ছেন। এই দৃশ্য দেখতে আমার ভালো লাগে। আপনি জানেন না প্রায়ই আমি আড়াল থেকে পাঠরত অবস্থায় আপনাকে দেখি। আজ সামনে এসেছি।আজ সামনে আসার পেছনে কি কোনো কারণ আছে?

একটা আর্জি নিয়ে এসেছি।আর্জি মঞ্জুর।না শুনেই আর্জি মঞ্জুর? সম্রাট হ্যাঁ-সূচক মাথা নেড়ে বললেন, এখন তোমার আর্জি বলো।হামিদা বানু বললেন, আমরা যখন পালিয়ে বেড়াচ্ছিলাম তখন এক রাতে আমরা খোলা প্ৰান্তরে ছিলাম। অচেনা এক গাছের নিচে বসেছিলাম। আপনার কি মনে আছে? আমার মনে আছে।হামিদা বানু বললেন, আমার খুব শখ আপনাকে নিয়ে ওই জায়গায় আবার যাই।

সম্রাট বললেন, তোমাকে আগেই বলেছি আর্জি মঞ্জুর।ফিনিক ফোটা জোছনাস্নাত রজনী। হুমায়ূন-পত্নী হামিদা বানু অচেনা এক বৃক্ষে হেলান দিয়ে বসে আছেন। হুমায়ূন কোনো কারণ ছাড়াই বৃক্ষের চারপাশে ঘুরছেন।সম্রাট একা আসেন নি। তার নিরাপত্তার জন্যে বিশাল বাহিনী নিয়ে বৈরাম খাঁ এসেছেন। সেনাবাহিনী দৃষ্টির আড়ালে আছে।হুমায়ূন বললেন, হামিদা আনন্দ পাচ্ছ?

হামিদা জবাব দিলেন না। ওই রাতে তিনি খিলখিল করে হাসছিলেন। আজ তার চোখভর্তি অশ্রু।হুমায়ূন হঠাৎ লক্ষ করলেন, হামিদা বানু যেখানে বসে আছেন তার উল্টাদিকে দুটি কিশোরী মেয়ে হাত ধরাধরি করে দাঁড়িয়ে আছে। এদের তিনি চেনেন। একজন তার কন্যা আকিকা বেগম। অন্যজন তার বান্ধবী। যার নাম মনে পড়ছে না। সম্রাট নিশ্চিত আফিমের নেশার কারণে হয়তো এ ধরনের বিভ্রম তার মধ্যে তৈরি হচ্ছে। এই মেয়ে এবং তার বান্ধবীকে তিনি রাজপ্রাসাদেও কয়েকবার দেখেছেন।

হুমায়ূন তাদের দিকে কয়েক পা এগুতেই মেয়ে দুটি খিলখিল করে হেসে দৌড়ে পালাল।হামিদা বানু চমকে উঠে বললেন, কে হাসে? কে হাসে? হুমায়ূন বললেন, কেউ হাসে না হামিদা। হিন্দুস্থানে এক বিচিত্র পাখি আছে, যখন সেই পাখি ডাকে মনে হয় কিশোরী মেয়ে হাসছে। হিন্দুস্থান অতি অদ্ভুত দেশ।হামিদা বানু বললেন, আপনি কি আমার হাত ধরে একটু বসবেন? হঠাৎ পাখির ডাক শুনে ভয় পেয়েছি।

হুমায়ূন স্ত্রীর পাশে এসে বসেছেন। তাঁদের গায়ে অবাক জোছনা গলে গলে পড়ছে। দুজনই অপেক্ষা করছেন হিন্দুস্থানের অদ্ভুত পাখির ডাক আরেকবার শোনার জন্যে।রাজা যায় রাজা আসে। প্ৰজাও যায়, নতুন প্ৰজা আসে। কিছুই টিকে থাকে না। ক্ষুধার্ত সময় সবকিছু গিলে ফেলে, তবে গল্প গিলতে পারে না। গল্প থেকে যায়।বাদশা নামদারের কিছু গল্প শোনানো শেষ হলো।

পরিশিষ্ট

বৈরাম খাঁ কিন্তু খাঁ ছিলেন না। তিনি ‘বেগ’। জওহর আবিতাবচি তাঁর গ্রন্থে বৈরাম বেগ বলে উল্লেখ করেছেন। তাকে খাঁ উপাধি দিয়ে সম্মানিত করেন ইরানের শাহ তামাস্প।

আমার ধারণা, সম্রাট হুমায়ূন বৈরাম খাঁ’র প্রতিভা ধরতে পারেন নি। তিনি বৈরাম খাঁকে তাঁর অতি অনুগত একজন হিসেবেই জেনেছেন। পারস্য থেকে ফেরার পর সম্রাট হুমায়ূনের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন হয়। বৈরাম খাঁকে তিনি সর্বোচ্চ সম্মান খান-খানান উপাধি দেন। একই সঙ্গে তাঁর জন্যে পানি সরবরাহের কাজে নিযুক্ত জওহর আবতাবচিকে পাঞ্জাবের রাজকোষের কোষাধ্যক্ষ করে দেন। জওহরের এই নিয়োগ হুমায়ূনের আবেগের কারণে হয়েছে। জওহরের রাজকোষ চালানোর যোগ্যতা ছিল না। সম্রাটের ইচ্ছা বলে কথা।

বৈরাম খাঁ নিষ্ঠার সঙ্গে তাঁর দায়িত্ব পালন করেন। তিনি সম্রাট হুমায়ূনকে সব ঝামেলা থেকে মুক্ত রাখেন।সম্রাটের মৃত্যুর পর বালক আকবরের অভিভাবক হিসেবে তাঁর শাসনভার তার হাতে চলে আসে। আমীরদের মধ্যে অসন্তোষ দানা বাঁধতে থাকে।আকবর মাতা হামিদা বানু নিজেও শংকিত হন। তিনি মনে করেন, বৈরাম খাঁ কখনোই আকবরের হাতে ক্ষমতা দেবেন না। আকবরকে থাকতে হবে বৈরাম খাঁ’র পুতুল হয়ে।

আকবর সিংহাসনে বসেই বৈরাম খাঁকে বললেন, আপনি মোঘল রাজবংশের জন্যে অনেক পরিশ্রম করেছেন। আপনার বিশ্রাম প্রয়োজন।বৈরাম খাঁ বললেন, আপনি কি মনে করছেন এখন আমাকে আপনার প্রয়োজন নেই? আকবর বললেন, আমার প্রয়োজনের চেয়ে আপনার বিশ্রাম জরুরি।বৈরাম খাঁ বললেন, আমি বিশ্রামে যাচ্ছি। আমার দায়িত্ব বুঝিয়ে দিচ্ছি।আকবর বললেন, আপনি হিন্দুস্থানে বিশ্রাম করবেন না। বিশ্রাম করবেন মক্কায়।

বৈরাম খাঁ বললেন, আমি স্বেচ্ছায় মক্কায় যেতে না চাইলে আপনার সাধ্যও নেই। আমাকে মক্কায় পাঠানো। বিশাল মোঘল সেনাবাহিনীর আমি প্রধান। সৈনিকরা আমার অনুগত। তারপরেও যেহেতু আপনি চাচ্ছেন আমি মক্কায় চলে যাব।বৈরাম খাঁ আহত এবং বিষণ্ণ হৃদয়ে মক্কায় রওনা হলেন। সম্রাট আকবরের পাঠানো গুপ্তঘাতকরা বৈরাম খাঁকে পথেই হত্যা করল।

পৃথিবীর ইতিহাসে আকবরের পরিচয় আকবর দ্যা গ্রেট। বৈরাম খাঁ’র করুণ পরিণতি গ্রেট আকবরের কাছ থেকে আশা করা যায় না, তবে প্রদীপের নিচেই থাকে অন্ধকার।

                   

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *