সব মিলিয়ে মাত্র ১ ডলার ৮৭ সেন্ট। এর মধ্যে ষাটটি সেন্টই ছিল খুচরো পয়সা। মুদি দোকানী, সবজি বিক্রেতা আর কসাইর সাথে রীতিমত দরদামের যুদ্ধে জয়ী হয়েই একটি দুইটি করে পয়সা গুলো জমিয়েছি। দোকানদারের সাথে দরদামের ব্যাপারে আমি কখনো বিন্দু পরিমানও ছাড় দেই নি, শেষ পর্যন্ত যুদ্ধ চালিয়ে যেতাম।
তিনবার পয়সাগুলো গুনল ডেলা। মাত্র ১ ডলার ৮৭ সেন্ট! কালই বড়দিন!!
এই মূহুর্তে পুরনো ময়লা সোফার উপর বসে বিলাপ করা ছাড়া আর কিছুই করার ছিল না, ডেলা তাই করল।
‘আসলে সর্বদা ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্না করা, আর খুশি থাকার অভিনয় করার একটি মিশ্রণই হল জীবন’, ভাবলো ডেলা।
যদিও যত্নের অভাবে বাড়িটি আস্তে আস্তে খারাপের দিকে যাচ্ছে, তবুও দেখে নেয়া যাক ডেলাদের বাড়িটির এখনকার অবস্থা কেমন। একটি সাজানো ফ্ল্যাট(তবে সুসজ্জিত নয়), যার ভাড়া প্রতি সপ্তাহে ৮ ডলার। বাড়িটি দেখে একেবারে ভিক্ষুকদের আবাস মনে না হলেও আসলে অনেকটা তেমনই।
বাড়ির দরজায় একটি ‘চিঠির বাক্স’ আছে। এটির একেবারে বেহাল দশা ছিল, কোন চিঠিই বাক্সটির মুখ দিয়ে ভেতরে ঢুকতো না; এছাড়া একটি নষ্ট বৈদ্যুতিক সুইচও আছে, যেটাতে আঙুলের সর্বশক্তি দিয়ে কলিংবেল বাজাতে চাইলেও কাজ হয় না।
বাড়ীর প্রধান দরজায় একটি কার্ড ঝোলানো, সেখানে লেখা ছিল, ‘মিস্টার জেমস ডিলিংহাম ইয়ং।’
এক সময় যখন মিঃ ‘ডিলিংহামের’ আয় তুলনামূলকভাবে বেশি ছিল। তখন সে সপ্তাহে ৩০ ডলার বেতন পেত, কিন্তু সপ্তাহে এখন আয় কমে ২০ ডলারে নেমে আসায় সামনের দরজায় ঝোলানো ‘ডিলিংহাম’ লেখাটি কেমন যেন ফ্যাকাসে ও বর্ণহীন লাগছে। জিম ও ডেলা এ কারনে আরো সাধারন মানের একটি বাসা খোজার চিন্তা করল।
যখন জেমস ডিলিংহাম ইয়াং বাসায় আসেন তখন মিসেস জিম তাকে আদর করে ‘জিম’ নামে ডাকেন এবং তার প্রিয়তমা স্ত্রী নিয়ম করে তাকে প্রতিদিন ভালবাসার চাদরে জড়িয়ে ধরে সারাদিনের অপেক্ষার প্রহর ঘুচান।
আর মিসেস ডিলিংহাম হলেন ‘ডেলা’ যাকে ইতিমধ্যে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়েছে।
ডেলা ফোপানো থামিয়ে দুই গালে পাউডার লাগিয়ে বিষন্ন চোখে জানালার পাশে দাঁড়িয়ে দেখল একটি ধূসর বিড়াল ধূসর একটি বেড়ার উপর দিয়ে একটি ধূসর রঙের বাড়ির পিছনের উঠানে হাঁটছে।
‘আগামিকালই যে বড় দিন কিন্তু তার কাছে মাত্র ১.৮৭ ডলার আছে!
তা দিয়েই জিমের জন্য বড়দিনের উপহার কিনতে হবে। এই অর্থ সে জমিয়েছে তার সারা মাসের চেষ্টায়। সপ্তাহে ২০ ডলার আয় ডেলার পরিবারের জন্য একেবারেই পর্যাপ্ত নয়; তাছাড়া ডেলা মাসের খরচের যে খসড়া হিসাব করেছিল বাস্তবে তার চেয়ে অনেক বেশি খরচ হয়েছে।
‘মাত্র ১.৮৭ ডলার তার জীমের উপহার কেনার জন্যে’!! কেদে ফেলার উপক্রম হল ডেলার।
জীমের জন্যে একটি বড়দিনের উপহার কেনার চিন্তা করে কত সময় ব্যয় করেছে তা বলা কঠিন, কত পরিকল্পনা ছিল তার। ডেলার ইচ্ছা ছিল উপহারটি হবে অনেক দামী তবে দুর্লভ এবং নিখাদ; তার দেওয়া উপহারটি হবে জিমের খুব প্রিয় এবং প্রতিদিনের ব্যবহার্য।
ডেলার ফ্লাটের রুম ও জানালার মাঝখানে দেয়ালের সাথে খাড়াভাবে আটকানো একটি আয়না ছিল; অনেকেই হয়তো ৮ ডলার ভাড়ার ফ্লাট বাড়িতে এমন আয়না দেখে থাকবেন। একজন হালকা পাতলা মানুষ তার প্রতিবিম্ব দেখে নিজের সম্পর্কে হালকা একটি ধারণা লাভ করতে পারে আর ডেলা হলো এই ধরনের মানুষের একটি সঠিক উদাহরণ।
হঠাৎ ডেলা জানালা থেকে নজর সরিয়ে লম্বা আয়নার সামনে দাঁড়ালো। তার চোখ দু’টি উজ্জ্বল হয়ে উঠলো কিন্তু মাত্র ২০ সেকেন্ডের ব্যবধানে তার সুন্দর মুখটি ফ্যাকাসে হয়ে গেল। কিছু না ভেবেই ডেলা খোঁপা বাঁধা সুন্দর চুলগুলো খুলে দিল।
জিম ও ডেলার অভাবের সংসার হলেও তাদের কাছে দু’টি মূল্যবান জিনিস ছিল; যার কারনে তারা দুজনেই খুব গর্ববোধ করত। একটি হলো জিমের স্বর্ণের ঘড়ি, যা একসময় তার দাদার মালিকানায় ছিল। পরে তার বাবার হাত ঘুরে এখন জীম সেটা পেয়েছে। আর অন্যটি হলো ডেলার লম্বা ও ঘন সুন্দর চুল। এটা অনেকটা সেবার রানীর খনির রত্ন ভান্ডারের মত। ডেলা মাঝে মাঝে জানালার পাশে দাঁড়িয়ে তার লম্বা চুলগুলো জানালার বাইরে শুকাতে দেয় তখন মনে হয় সেবার রানীর মনি মানিক্যের অবমুল্যায়ন ঘটেছে ।
রাজা সলোমন(আঃ) যেমন তার সম্পত্তি মাটির নিচের ঘরে রেখেছিলেন জিমও তার প্রিয় সোনালি ঘড়িটি পকেটে লুকিয়ে রাখে এবং প্রতি মুহূর্তে সময় দেখার ছুতায় ঘড়িটি বের করে দেখে।
ডেলার লম্বা চুলগুলো চকচকে ঢেউ তোলা পাহাড়ি ঝর্ণার জলের মতো মনে হল। চুলগুলো একদম হাঁটুর নীচ পর্যন্ত লম্বা। অনেকটা তার জামার মত লাগছে। ডেলা চুলগুলো এবার যত্ন করে খোঁপা বাঁধলো। আহত মনে মিনিটখানেক কিছু ভাবল ডেলা, তারপরই তার চোখ থেকে দু এক ফোটা পানি গড়িয়ে পড়ে পুরনো কার্পেটকে ভিজিয়ে দিল।
ডেলা এবার পুরাতন বাদামি জ্যাকেট গায়ে দিল, সাথে পুরাতন বাদামি হ্যাট; সাথে তার উজ্জ্বল চকচকে চোখের মত একটি গোলাকৃতির জামা পরলো। ডেলা দ্রুত বেগে ঘর থেকে বের হয়ে বাড়ির সামনের বড় রাস্তায় গিয়ে উঠল।
হাটতে হাটতে হঠাৎ একটি সাইনবোর্ড দেখে ডেলা থমকে দাঁড়ালো, তাতে লেখা ‘Mme Sofronie’ ডেলা দৌড়ে এক নিঃশ্বাসে দোকানে ভেতরে ঢুঁকে পড়লো।
‘তুমি কি আমার চুল কিনবে?’ ডেলা জিজ্ঞেস করলো।
‘হ্যা,আমি চুল কিনি’, ম্যাডাম বললেন। ‘তোমার মাথায় টুপিটি খোল, আর আগে তোমার চুলতো দেখতে দাও’
“বিশ ডলার”
কোন কিছু না ভেবেই রাজি হয়ে গেল ডেলা। বলল, ঠিক আছে জলদি দেন, প্লীজ।
ওহ! এর পরের দুই ঘন্টা ডেলার একরকম ঘোরের মধ্যেই চলে গেলো, অনেকটা ডানাকাটা পরীর মত; ডেলা জিমের জন্য পুরো শহরে তন্ন তন্ন করে পছন্দের উপহারটি খুঁজতে লাগল।
‘অবশেষে সে এটা খুজে পেল’
ডেলা চিন্তা করলো, এটি সত্যিকার অর্থেই শুধু জিমের জন্য তৈরী হয়েছে, অন্য কারো জন্য নয়। এমন সুন্দর জিনিস আর কোন দোকানে ছিল না, ডেলা এটি বের করে নিয়ে আসলো। এটি একটি প্লাটিনামের তৈরী শিকল; খুব সুন্দর ও খাঁটি প্লাটিনাম দিয়ে তৈরী। এমনকি এটি তার ঘড়ির চেয়েও বেশি দামী হতে পারে। তবে এটির শৈল্পিক কোন মূল্য নেই। শিকলটি দেখার সাথে সাথে তার পছন্দ হয়ে যায় এবং মনে মনে ধরেই নিয়েছে এটি অবশ্যই জিমের ঘড়ির জন্যই উপযুক্ত হবে।
দাম পড়ল ২১ ডলার, বাকি ৮৭ সেন্ট নিয়ে ডেলা বাড়ির দিকে ছুটলো।
জিম নিশ্চয়ই এটি ব্যবহার করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করবে এবং অনেক খুশি হবে। তাকে আর ঘড়ির জন্যে পুরাতন চামড়ার বেল্ট লাগাতে হবে না।’ ফেরার পথে ভাবলো ডেলা।
ডেলা যখন বাড়ি ফিরে এলো, তখন তার সকল দুশ্চিন্তা দূর হয়ে গেল। সে চুলায় আগুন জ্বালালো। এটা অনেকটা ভালবাসার ক্ষতে প্রলেপ দেওয়ার মতো একটি মহৎ কর্ম যা ভালবাসাকে নতুন করে জাগিয়ে তোলে। এটি সব সময় কঠিন কাজ – একটি বিরাট কাজ।
৪০ মিনিটের মধ্যে তার মাথাটি ছোট ছোট কোকড়া চুলে ঢেকে গেলে; দেখে অনেকটা স্কুল পালানো বালকের মতো লাগলো। ডেলা সতর্ক দৃষ্টিতে ঘরের লম্বা আয়নার দিকে তাকালো।
‘জিম যদি দ্বিতীয়বার আমার দিকে তাকানোর আগেই আমাকে মেরে না ফেলে তাহলে সে নির্ঘাত বলবে, আমাকে কনি আইল্যান্ডের কোরাস গার্লদের লাগছে। কিন্তু এছাড়া আমার আর কি বা আর করার ছিল মাত্র ১ ডলার ৮৭ সেন্ট দিয়ে?’
ঠিক সাতটার দিকে ডেলা জিমের জন্য কফি তৈরী করল এবং চপ রান্নার জন্য গ্যাস স্টোভের উপরে ফ্রাই পেন বসালো।
জিম কখনো দেরী করে বাড়ি ফিরে না; ডেলা ধাতব চেইনটি ডাবল করে হাতে রাখলো এবং টেবিলের একদম কোনায় গিয়ে বসলো, যেখান ঘরের সদর দরজা আছে। হঠাৎ ডেলা সিঁড়িতে জিমের পায়ের আওয়াজ শুনতে পেল; মুহুর্তের জন্য তার মুখটি ফ্যাকাশে হয়ে উঠলো। দৈনন্দিন বিভিন্ন বিষয়াদি নিয়ে ডেলার নীরবে প্রার্থনার অভ্যাস আছে, আজো ফিসফিস করে প্রার্থনা করলো,
‘হে জগদীশ্বর, সে যেন ভাবে আমি এখনো সুন্দরী আছি।’
বাইরে থেকে জিম দরজা খোলে ভেতরে ঢুঁকে আবার দরজাটি বন্ধ করে দিল। তাকে খুব রোগা মনে হচ্ছিল। মাত্র ২২ বছর বয়সে দারিদ্র্যতা তাকে পুড়িয়ে মারছে। তার একটি নতুন ওভারকোট প্রয়োজন। এমনকি এই শীতেও তার হাতে কোন গ্লাভস পর্যন্ত নেই।
জিম ঘরে প্রবেশ করলো, ভেতরে ঢুঁকেই তার দৃষ্টি স্থির হয়ে রইলো ডেলার দিকে। তার এভাবে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকা দেখে ডেলা ভয় পেয়ে গেল। তাদের এ চোখা চোখি এতো তীক্ষ্ণ ছিল যা ডেলার পক্ষে ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়।
এই চাহনীতে নেই কোন রাগ, নেই কোন বিস্ময়, নেই কোন অপসন্দ, নেই কোন ভয়াবহতা; এমনকি নেই কোন অনুভূতি যার জন্য ডেলা ভীত ছিল। ডেলার দিকে সে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল।
ডেলা এবার টেবিল থেকে উঠে জিমের সামনাসামনি হল।
ডেলা চিৎকার করে বলে উঠলো, প্রিয়তম, ‘আমার দিকে এভাবে তাকিয়ো না’ আমি চুলগুলো কেটে বিক্রি করেছি, কারণ আমি তোমাকে বড়দিনে কোন উপহার না দিয়ে থাকতে পারবো না। দেখো, ‘আমার চুলগুলো খুব তাড়াতাড়ি আবার গজিয়ে উঠবে’তুমি কিছু মনে করো না, তুমি কি মন খারাপ করবে? আমি এই মাত্রই এটা করেছি। আমার কাছে আর কোন বিকল্প ছিল না। আমার চুল অসম্ভব দ্রুতগতিতে বাড়ে।
বলো জিম, ‘মেরি ক্রিসমাস!’ চলো আমরা আনন্দ করি। আর তুমিতো এখোনো দেখনি আমি কত সুন্দর একটি উপহার তোমার জন্য কিনে এনেছি।’
‘তুমি চুলগুলো কেটে ফেললে?’অনেক পরিশ্রমক্লান্ত স্বরে জিম বললো।
‘আমি চুলগুলো কেটেছি এবং বিক্রিও করেছি’ উত্তর দিল ডেলা।
‘তুমি কি আমাকে আগের মত ভালো বাসবে না? দেখো আমি তো আগের আমিই আছি, শুধু চুলগুলোই নেই, তাই না?’
‘তুমি বলছো তোমার চুলগুলো নেই, একটি দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে জিম বলল। জিম ঘরের চতুর্দিকে বোকার মত তাকালো।
‘খুঁজে লাভ হবে না, ‘চুলগুলো আমি ইতিমধ্যেই বিক্রি করে দিয়েছি’ উত্তর দিল ডেলা।
আজ বড়দিন, আসো আনন্দ করি। হতে পারে আমার কয়েগুচ্ছ চুলই গেছে, কিন্তু তাতে কি?’
ডেলা হঠাৎ করে অতি আদুরে গলায় জিমের মুখোমুখি হয়ে বললো, আমার চুল গুলো গণনা করা যাবে কিন্তু পৃথিবীর কেউ তোমার প্রতি আমার ভালবাসার গভীরতা কখনো পরিমাপ করতে পারবে না।’
‘আমি কি তোমার জন্য মাংশের বড়া গুলো নিয়ে আসবো?’ জিমকে চুলের কথাটি ভোলাতেই জানতে চাইলো ডেলা।
ঘোরটা কেঁটে যেতেই জিম স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করলো। সে ডেলাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।
‘আমাকে ভুল বুঝ না, ডেল’, জিম বললো। আমি মনে করি না চুল কাটার বাহারী ডিজাইন, মুখ সুন্দর করে শেভ করা কিংবা একটি পছন্দের শ্যাম্পু কখনো আমার প্রিয়তমাকে কোন পরিবর্তন করতে পারে। কিন্তু তুমি যদি প্যাকেট-টা খোল তাহলে বুঝতে পারবে কেন আমি কিছু সময়ের জন্য নির্বাক হয়েছিলাম’। জিম ওভারকোটের ভেতর থেকে একটি প্যাকেট বের করে টেবিলের উপর ছুড়ে দিল।
সাদা নরম আঙ্গুল দিয়ে ডেলা প্যাকেটটি খুলল। তারপর ডেলার আনন্দে অতি উৎসাহী চিৎকার; তারপর, হায়!! মেয়েলি কণ্ঠটি তাৎক্ষণিক পরিবর্তিত হয়ে যেন মৃগী রোগীর কান্নায় ও বিলাপে পরিণত হল।
চিরুনিগুলো চারদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে – সব গুলো চিরুনি। এমন চিরুনির জন্য ডেলা দিনের পর দিন জানালার দিকে চেয়ে চেয়ে কত আরাধনা করেছে। চমৎকার সুন্দর চিরুনি, কাছিমের খোলক দিয়ে তৈরী আর রত্ন খচিত, এগুলো সুন্দর চুলের জন্য আদর্শ। এগুলো নিশ্চিত খুব দামী চিরুনি।’ ভাবলো ডেলা। এগুলোর জন্যে কত দিন সে স্বপ্ন দেখেছে, এক সময় সে আশাই ছেড়ে দিয়েছিল। অবশেষে এগুলো তার হয়েছে।
যে গাছগুলো সুন্দর করে সাজানো উচিত ছিল সে গাছ গুলোই আজ নেই।
ডেলা চিরুনি গুলোকে বুকের মধ্যে জড়িয়ে রাখলো; আর জিমকে এমনভাবে জড়িয়ে ধরলো যাতে তার চোখের দিকে সরাসরি তাকাতে পারে। তারপর বলল, ‘আমার চুল তাড়াতাড়িই বড় হয়ে যাবে! জিম!’।
তারপর ডেলা বিড়ালের মত লাফ দিয়ে উঠে কাঁদতে শুরু করলো, উহ! উহ!!
জিম তখনো তার সুন্দর উপহার-টা দেখেনি। ডেলা খুশি মনে জিমের জন্য কেনা গিফট বের করে হাতের তালুতে রাখলো। মূল্যবান ধাতুর তৈরি ঘড়ি ঝোলানোর শেকলটির ঔজ্জ্বল্য চারদিকে ছড়াতে লাগলো।
‘দেখ, এটা সুন্দর হয়েছে না, পুরো শহর খুজে এটা আমি তোমার জন্যে কিনেছি। তুমি এখন দিনে শতবার ঘড়ি দেখবে। তোমার ঘড়িটি আমায় দাও। আমি এখন দেখব, তোমার ঘড়ির সাথে শিকলটি কেমন মানায়’।
তার কথা মত কিছু না করে জীম কাউচে ধপাস করে বসল। তারপর হাসিমুখে পেছনের দিকে হাতটি বাড়িয়ে দিল।
‘ডেলা, চল আমরা দু’জনে আমাদের বড়দিনের উপহার গুলো দূরে সরিয়ে রাখি এবং এগুলো এতটাই সুন্দর যে, শুধু বড়দিনের উপহার হিসাবে এগুলোকে মানায় না’
‘আমি ঘড়িটি বিক্রি করে দিয়েছি তোমার চুলের জন্য সুন্দর চিরুনি কেনার টাকা জোগাড় করতে।’
‘এখন চপের ব্যবস্থা করতে পার’ সাথে যোগ করল জিম।
চলো দশ সেকেন্ডের জন্য আমরা কিছু বুদ্ধিমান পরীক্ষার সাথে বিবেচনা করি অপ্রত্যাশিতভাবে ঘটে যাওয়া বিষয়টিকে অন্য প্রেক্ষাপট থেকে।
সপ্তাহে আট ডলার কিংবা বছরে মিলিয়ন ডলার – পার্থক্য কী? একজন গণিতবিদ অথবা একজন বুদ্ধিমান মানুষ তোমাকে যে উত্তরটি দেবে তা ভুলও হতে পারে। ম্যাজাইরা অনেক মুল্যবান উপহার আনেন, কিন্তু এগুলো তাদের নিজেদের জন্য নয়; এই গাঢ় সত্যটি পরে উদ্ভাসিত হয়।
তুমি কী জানো, ‘ম্যাজাইরা হলো খুব জ্ঞানী; বিষ্ময়কর রকম জ্ঞানী মানুষ। যারা বড়দিনে ম্যানজারের শিশুটির জন্যে উপহার নিয়ে এসেছিলেন। তারাই সর্ব প্রথম বড়দিনে উপহার দেওয়ার প্রথা চালু করেছিলেন। নির্দিধায় বলা যায় এটি একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ ছিল।’ কি বলো তুমি?
আর আজ আমি শিখলাম দু’টি বোকা শিশুর মত দু’জন মানুষের গতানুগতিক কাহিনী; যারা একই ফ্লাটে বসবাস করে অথচ বোকার মতো তাদের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদটি একে অন্যের জন্য বিসর্জন দিল; কিন্তু কারো কোন উপকারে আসলো না।
তবে সব শেষে বলা যায়, আজকের দিনে যারা উপহার দেবে তাদের মধ্যে এই উপহার গুলোই সর্বোৎকৃষ্ট, এতে কোন সন্দেহ নেই। যারা আজকের দিনে উপহার দেয় এবং অন্যের কাছ থেকে উপহার পায় এরা সবাই জ্ঞানী; সর্বত্রই তারা মহাজ্ঞানী। তারাই ম্যাজাই।
—–শেষ—–