যদিও সন্ধ্যা -পর্ব-(১০)-হুমায়ূন আহমেদ

 আমি একা বানাব। 

তুমি তাে একাই বানাচ্ছআমি শুধু তােমাকে সাহায্য করবইমন শান্ত গলায় বলল, না। 

শওকত বলল, হ্যালাে, কে অনিকা

আনিকা জড়ানাে গলায় বলল, আমার নাম অনিকা নাআমার নাম আনিকা একটা আকার আছে । 

তুমি আজ অফিসে যাও নি

শরীর খারাপ নাকি

শরীর ভালাে বেশি রকম ভালােএই জন্যেই অফিসে যাই নিঠিক করেছিআজ সারাদিন মজা করবএকটা ক্যাব ভাড়া করে ময়নামতি যাব ছােটবেলায় একবার ময়নামতি যাবার কথা ছিল, যাওয়া হয় নি হ্যালাে শােন, তুমি কি আমার সঙ্গে ময়নামতি যাবে

আজ তাে যেতে পারব নাআজ আমার ছেলে আসবেভুলে গিয়েছিলামআজ পাঁচ তারিখ ঘর গুছিয়ে রেখেছ ? মােটামুটি গুছিয়েছি। 

আমাকে কী জন্যে টেলিফোন করেছ ? পুত্রের আগমন সংবাদ দিতে, নাঅন্য কোনাে কারণ আছে

একটা জরুরি ব্যাপার নিয়ে তােমার সঙ্গে আলাপ করতে চাইআলাপ করাে। 

যদিও সন্ধ্যা -পর্ব-(১০)-হুমায়ূন আহমেদ

ঘটনাটা হলাে কাল সন্ধ্যায় আমি বাসায় ফিরে দেখি, দরজার নিচ দিয়ে কে যেন একটা মুখবন্ধ খাম ঢুকিয়ে দিয়ে গেছে। 

খামে কী আছে ? প্রেমপত্র ? খামে পাঁচশটাকার বিশটা নােটআচ্ছা শােন, টাকাটা কি তুমি দিয়েছ ? আমি ? আমি টাকা দেব কোন দুঃখে

হঠাৎ করে মনে হলাে তুমি কিনাঅনেকদিন পরে ছেলে আসছে, এদিকে আমার হাত খালি তুমি বিষয়টা জানাে বলে...। 

জনাব শােনেন, আমি মহিলা হাজী মুহম্মদ মহসিন নাআমি অতি কৃপণ এক মহিলাযে খেয়ে নাখেয়ে টাকা জমায়কী জন্যে জমায় জানেন, একদিন সে সংসার করবেসংসারে টুকটাক খরচ করবেএকটা মাইক্রোওয়েভ অভেন কিনবে, একটা প্রেসারকুকার কিনবে, একটা রাইস কুকার..

আমার কেন জানি মনে হচ্ছে, তােমার শরীর খারাপকথা জড়িয়ে যাচ্ছে। 

আমি নিজেই জড়িয়ে যাচ্ছি, আমার কথা তাে জড়াবেই কিসে জড়িয়ে যাচ্ছি জিজ্ঞেস করলে না? | কিসে জড়িয়ে যাচ্ছ

দুঃখজালে জড়িয়ে যাচ্ছিমানুষ জড়ায় প্রেমজালে, আমি জড়াই দুঃখজালে

যদিও সন্ধ্যা -পর্ব-(১০)-হুমায়ূন আহমেদ 

আনিকা, টেলিফোন রাখি ? কেন, এক্ষুণি কি তােমার ছেলেকে আনতে যেতে হবে ? ওকে আনতে যাব বিকেলে বিকেল হতে এখনাে অনেক দেরিকিছুক্ষণ কথা বলােকী নিয়ে কথা বলব

কী নিয়ে কথা বলবে তাও আমি বলে দেব ? আজকাল দেখি আমার সঙ্গে কথা বলার মতাে কোনাে টপিকও খুঁজে পাও নানতুন কোনাে অল্পবয়েসীর সঙ্গে কি প্রণয় হয়েছে ? তার নাম কী

তুমি কী সব কথা যে বলাে। 

অ্যাই শােন, তুমি পঞ্চাশ পৃষ্ঠার বাধানাে খাতা জোগাড় করসেই খাতায় তুমি পর্যন্ত যে কটি মেয়ের প্রেমে পড়েছ, তাদের নামধাম লিখে রাখ প্রথমে লিখবে নামতারপর লিখবে বয়সতারপর লিখবে কী কারণে প্রেমে পড়লেসব শেষে লেখা থাকবে কী কারণে প্রেম চলে গেল। 

অনিকা আমি রাখি

আবার অনিকা বলছ ? আমার নাম আনিকা একটা আকার আছেআচ্ছা ঠিক আছে, এখন থেকে তুমি আমাকে অনিকাই ডাকঅনিকা ডাকার একটা 

সুবিধা আছে। 

কী সুবিধা

তুমি তােমার প্রেমিকাদের নাম অ্যালফাব্যাটিলি নিশ্চয় সাজাবে সেখানে আমার নাম সবার আগে চলে আসবে আনিকা নাম হলে অনেক পেছনে পরে যাব প্রথমে স্বরে , তারপর স্বরে হ্যালাে, টেলিফোন কি রেখে দিলে

যদিও সন্ধ্যা -পর্ব-(১০)-হুমায়ূন আহমেদ

তুমি কতদিন পর আমাকে টেলিফোন করেছ, সেটা জানাে

জানি নাঠিক এক মাস তিন দিন পরতুমি শেষ টেলিফোন করেছিলে গত মাসের দুতারিখেআজ পাঁচ তারিখ । 

তুমি সব দিনতারিখ মুখস্থ করে রাখ? হ্যা রাখিতােমার সঙ্গে সম্পর্কিত সব কিছু মুখস্থ করে রাখি। 

আনিকা শােন, আমি একটা দোকান থেকে টেলিফোন করছিদীর্ঘ সময়ধরে কথা বলছি, ওরা নিশ্চয়ই বিরক্ত হচ্ছেবিরক্ত হচ্ছে না, ওরা খুশি হচ্ছেতুমি নিশ্চয়ই ওদের মিনিট হিসেবে টাকা দেবেতুমি যত বেশি কথা বলাে ওদের ততই লাভতাছাড়া এখন তােমার কাছে দশ হাজার টাকার বান্ডেল আছেটাকার সমস্যা নেইআরাে তিন মিনিট কথা বলাে তুমি কি জানাে টেলিফোনে তােমার গলার স্বর অদ্ভুত সুন্দর

জানতাম নাএখন জানলামআমাদের বাসায় গতকাল সন্ধ্যায় ধুন্ধুমার কাণ্ড হয়েছেকী কাণ্ড হয়েছে

ধুন্ধুমার কাণ্ডমিতুর স্বামী মিষ্টি, কাপড়চোপড় নিয়ে উপস্থিতবাবারজন্য পাঞ্জাবি, আমার এবং মাজন্যে শাড়ি। 

মিতুর স্বামী মানে ? মিতু কি বিয়ে করেছে নাকি

হ্যা, আগস্ট মাসেই বিয়ে করে ফেলেছেতার স্বামীর কাঠের দোকান আছে দোকানের নাম Wood kingমিতুর বর হচ্ছে বনের রাজা। 

যদিও সন্ধ্যা -পর্ব-(১০)-হুমায়ূন আহমেদ

মিতু গােপনে বিয়ে করে ফেলেছে ? আশ্চর্য তাে! আশ্চর্য হবার কী আছে! মিতু আমার মতাে নাসাহসী মেয়েতােমাদের বাড়ির সবার রিঅ্যাকশান কী ? সবাই মেনে নিয়েছেন

আমি এবং মা, আমরা দুজন খুশিমা খুশি, কারণ মিতুর বনের রাজার চেহারা সুন্দরলম্বাফর্সাসে প্রতিটি বাক্যে তিনবার করে বলছে মাআমি খুশি, কারণ সে আমার জন্যে যে শাড়িটা এনেছে সেই শাড়িটা সুন্দরকালাে মেয়েদের সব শাড়িতে মানায় নাএই শাড়িতে মানাবেশাড়িটার রঙ হালকা গােলাপিগােলাপির উপর রুপালি ফুলতুমি আর্টিস্ট মানুষ তুমি নিশ্চয় বুঝতে পারছ কালাের সঙ্গে হালকা গােলাপি এবং সিলভার কালার খুব ভালাে যায়। 

বুঝতে পারছিতােমার বাবাউনার রিঅ্যাকশান কী

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *