হজরত বায়েজিদ বোস্তামির (রহ.) মায়ের গল্প

হজরত বায়েজিদ বোস্তামির (রহ.) মায়ের গল্প

হুমায়ুন আইয়ুব: হজরত বায়েজিদ বোস্তামি (রহ.) (৮০৪-৮৭৪ খ্রি.)। ইরানের বোস্তান শহরে জন্ম। তার নাম শোনেনি এমন লোক খুব কমই আছেন। মায়ের সেবা করে তিনি অনন্য হয়ে আছেন ইতিহাসের পাতায়। বোস্তামি (রহ.)-এর মা একদিন শয্যাশায়ী ছিলেন। তখন শীতকাল। ঘরের দরজা খোলা থাকায় ঠা-া বাতাস ভেতরে আসছিল।

বায়েজিদকে মা বললেন, দরজার একটি কপাট বন্ধ করে দেওয়ার জন্য। বায়েজিদ মাকে জিজ্ঞেস করতে ভুলে গেলেন কোন পাশের কপাটটি বন্ধ করবেন। ডান পাশের কপাট নাকি বাম পাশের। ততক্ষণে মা ঘুমিয়ে পড়েছেন। বায়েজিদ মনে করলেন, এ অবস্থায় মাকে ঘুম ভাঙ্গিয়ে জিজ্ঞাসা করলে তার কষ্ট হবে।

তাই ঘুম না ভাঙ্গিয়ে কিছুক্ষণ একপাশের কপাট খোলা রেখে আরেক পাশের কপাট বন্ধ রাখেন। আবার কিছুক্ষণ অন্যপাশের কপাট খোলা রেখে অপর পাশেরটি বন্ধ রাখেন। এ অবস্থায় সারা রাত  কাটিয়ে দিলেন। মা তাহাজ্জুদের নামাজ পড়তে উঠে বায়েজিদকে এ অবস্থা করতে দেখে জিজ্ঞাসা করলেন, বায়েজিদ তুমি এমন করছ কেন?  তিনি ব্যাপারটি খুলে বললে, মা আনন্দে তার বুকে বায়েজিদকে জড়িয়ে ধরে আল্লাহর দরবারে দোয়া করেন, প্রভু! তুমি আমাকে এমন সন্তান দান করেছ ধন্য আমার জীবন। তার মর্যাদা তোমার বন্ধুদের সারিতে অন্তর্ভুক্ত কর।

অন্য একদিন রাতে হজরত বায়েজিদ পড়াশোনা করছিলেন। মা ডেকে বললেন, বাবা বায়েজিদ আমাকে এক গ্লাস পানি দাও। আমার খুব পিপাসা পেয়েছে। তিনি পানি আনতে গিয়ে দেখেন, ঘরের মশকে পানি নেই। পাশের কূপ থেকে মশক ভর্তি করে পানি এনে দেখলেন মা ঘুমিয়ে পড়েছেন। তখনও ছিল শীতকাল।

পানির গ্লাস হাতে নিয়ে সারা রাত মায়ের শিয়রে দাঁড়িয়ে রইলেন সন্তান বায়েজিদ। খুব ঠা-ায় হাত যেন অবশ হয়ে যাচ্ছিল। ফজরের আজানের আগে তাহাজ্জুদের নামাজ পড়তে উঠেন বায়েজিদের মা। দেখেন বায়েজিদ তার মাথার পাশে পানির গ্লাস হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। প্রশ্ন করলেন, বাবা বায়েজিদ তুমি আমার মাথার পাশে পানির গ্লাস নিয়ে দাঁড়িয়ে আছ কেন? তিনি বলেন, মা আপনি পানি চাইলে মশকে পানি না থাকায় পাশের কূপ থেকে পানি নিয়ে আসতে দেরি হয়ে যায়।

এসে দেখি আপনি ঘুমাচ্ছিলেন। তাই আপনার কষ্ট হবে বলে ঘুম ভাঙ্গানোর চেষ্টা করিনি। আপনি কখন ঘুম থেকে জাগ্রত হয়ে পানি খোঁজ করেন। আর যদি হাতের নাগালে পানি না পান হয়তো কষ্ট পাবেন, এ কথা ভেবে পানির গ্লাস নিয়ে দাঁড়িয়ে আছি। বায়েজিদের কথা শুনে মায়ের আনন্দে বুক ভরে যায়।

তাহাজ্জুদের নামাজ পড়ে মা আল্লাহর দরবারে দুহাত তুলে দোয়া করলেন, হে আল্লাহ! আমার বায়েজিদকে সুলতানুল আরেফীন হিসাবে তোমার বন্ধুর দফতরে অতি মর্যাদার আসন প্রদান কর। সুলতানুল আউলিয়া হজরত বায়েজিদ বোস্তামি (রহ.) বলেন, সেদিন মাতৃ হৃদয়ে সেই অকপট প্রাণখোলা দোয়া আল্লাহর দরবারে পৌঁছে সঙ্গে সঙ্গে মঞ্জুর হয়ে গিয়েছিল।

ফলে আমার বর্তমান এ অবস্থা। কারণ মহানবী (সা.) বলেন, তিন ব্যক্তির দোয়া আল্লাহর দরবার থেকে ফেরত যায় না। মজলুম, মুসাফির, পিতা-মাতার দোয়া। সূত্র: তাজকিরাতুল আউলিয়া।

 

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *