হুমায়ূন আহমেদের লেখা মীরার গ্রামের বাড়ি খন্ড-১৩

আজহার সাহেব স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে খুশি-খুশি গলায় বললেন, মনোয়ারা বাইরে চা-টা পাঠাবার ব্যবস্থা কর । আর শােনাে এদের একবেলা আমি খাওয়াতে চাই। পোলাও টোলাও কর। বেচারারা এই শীতের রাতে দূর দূর থেকে আসে। এত রাতে না-খেয়ে ফেরত যায়। রাপ লাগে ।

মীরার গ্রামের বাড়ি 

মনােয়ারা বললেন, তারা আসে তােমার গল্প শুনতে। গল্প শুনতে পাচ্ছে এতেই তারা খুশি। 

তা ঠিক। তবুও এক রাতে ভালাে করে এদের খাওয়াব। আগামীকাল রাতে খেতে বলি কেন?” 

“আচ্ছা বলো।’ 

‘গরুর মাংস দিয়ে তুমি যে একটা প্রিপারেশন করমঙ্গোলিয়ান বিফ, ঐটা করতে পার কিনা দেখ তো। এরা গ্রামে পড়ে আছে, নতুন কিছু খেতে পারলে খুশি হবে। 

দেখি পারি কি না।’ আজহার সাহেব চলে যেতেই মীরা বলল, মা, তুমি কি দাদীজানকে সামলেই? আশা করি তিনি আমার সঙ্গে ঘুমুতে আসবেন না। উনাকে বলে লিয়েছ তাে মা। 

এখনাে কিছু বলি নাই। কীভাবে বলব সেটাই বুঝতে পারছি না।’ “তােমাকে একটা বুদ্ধি শিখিয়ে দেই? 

আজ রাতে তুমি আমার সঙ্গে ঘুমুতে আস। তাছাড়া এম্নিতেই আমার শরীরটাও ভালাে লাগছে না। জ্বর-জ্বর লাগছে। আমার তােমার সঙ্গে ঘুমুতে ইচ্ছা করছে। তুমি আমার সঙ্গে ঘুমুতে এলে দাদীজান বাধ্য হয়ে শেফার সঙ্গে ঘুমুবেন। প্রবলেম সলভড়।’ শেফা বলল, আজ রাতের প্রবলেম হয় সলভড় হল, কাল কী করবে? মা কি রােজ তােমার সঙ্গে ঘুমুবেঃ ।  মীরা বলল, কালকেরটা কাল দেখা যাবে। আগে বর্তমানের সমস্যা মিটুক। ভবিষ্যতের সমস্যা ভবিষ্যতে মেটানাে হবে। We Live in Present, we do not live in future. তোর মাছ মারা কেমন হয়েছে ? 

মীরার গ্রামের বাড়ি খন্ড-১৩

ভালাে হয়নি। শখ মিটছে কি-না বল। শখ মিটলেই হল। মাছ মারতেই পারলাম না, শখ মিটবে কীভাবে? কাল আবার বলছিল?” হু। তুমি কি আমার সঙ্গে বসবে আপা?”। না।’ “প্লিজ আপা তুমি বােস, তােমার তাে ভাগ্য ভালাে। আমার ধারণা তুমি থাকলেই মাছ ধরা পড়বে। 

“আমার ভাগ্য ভালাে? 

অবশ্যই ভালাে। মা, আপার ভাগ্য ভালাে না?” মনোয়ারা হাসিমুখে বললেন, দুজনের ভাগ্যই ভালাে। 

শেফা বলল, জন্মের সময় আল্লাহ যদি রিপাের্ট-কার্ডের মতাে একটা কার্ডে আমাদের ভাগ্য লিখে দিয়ে দিত তাহলে খুব ভালাে হত। রিপাের্ট-কার্ড দেখে আমরা আগে ভাগে সব নিতাম। 

মনােয়ারা বললেন, তুই এমন মজা করে কথা বলা কোথেকে শিখেছিস? শেফ। বলল, বাবার কাছ থেকে শিখেছি মা। বাবার কাছ থেকে শিখেছি 

কীভাবে গল্প করলে গল্পগুলি বােরিং হয়। আমি গল্প করার সময় সেইটা বাদ দিয়ে গল্প করি । 

মীরা হেসে ফেলল। মনােয়ারা হাসতে শুরু করলেন। শুধু শেফা গম্ভীর হয়ে রইল। গম্ভীর হয়ে থাকলে ও তার খুব মজা লাগছে | দরজায় দেলোয়ারকে দেখা গেল । তাকে দেখাই যাচ্ছে না। নতুন প্যান্ট, জুতা, তার ওপর হলুদ কোট। 

শেফা ফিসফিস করে বলল ও মাই গড় । দেলােয়ার ভাইকে কীরকম সঙের মতাে লাগছে দেখেছ মার মনে হচ্ছে না সার্কাসের জোকার, এক্ষুনি ডিগবাজি খেয়ে কোনাে খেলা দেখাবে? 

মনােয়ারা বললেন, চুপ কর। “উনাকে আগের মতাে লুঙ্গি গেঞ্জি পরে থাকতে বলি মা? 

মনোয়ারা কিছু বলার আগেই দেলোয়ার বলল, ছােট আপা শুনে যান। 

শেফা উঠে গেল। দেলােয়ার বলল, ভালাে খবর আছে আপা। টিভি জোগাড় হয়েছে। 

টিভি দিয়ে লাভ কী হবে, কারেন্ট নেই। রাত এগারোটার পর কারেন্ট এলে টিভি কী দেখব। 

ব্যাটারি এনেছি। গাড়ির ব্যাটারিতে চলবে।’ একসেলেন্ট। আমার ঘরে ফিট করে দিন। আমি তো ফিট করা জানি না। মিস্ত্রি নিয়ে আসছি।’ নিয়ে এসেছেন তাে সময় নষ্ট করছেন কেন? লাগিয়ে দিন। | ‘চাচাজী রাগ করবেন নাতো?” 

কী অদ্ভুত কথা! বাবা রাগ করবে কেন? ঢাকায় কি আমি টিভি দেখি না? নামণই দেখি।’ 

তবু চাচাজীর একটা অনুমতি “আচ্ছা যান অনুমতি আমি নিয়ে নেব।’ 

মীরার গ্রামের বাড়ি খন্ড-১৩

শেফা অত্যন্ত আনন্দিত বোধ করছে। টিভির অন্য কোনাে প্রােগ্রাম না। দেখলেও এক্স ফাইল না-দেখলে শেফার চলে না। আজি এ ফাইল আছে। দেলােয়ার ভাইকে সন্ধ্যাবেলা শুধু জিজ্ঞেস করেছিল—আশেপাশের কোনাে বাড়ি আছে যাদের টিভি আছে? অামাকে এক্স ফাইল দেখতে হবে। দেলােয়ার ভাই টিভিই জোগাড় করে ফেলেছে। মানুষটা কাজের আছে। শুধু একটু জোকার ‘টাইপ। 

দেলােয়ার ভাই। 

“কোট প্যান্ট পরে আপনার কেমন লাগছে? “জ্বি ভালাে লাগছে। একটু লজ্জা-লজ্জা লাগছে।’ 

লা-লজ্জা লাগছে তা হলো শারে আছেন কিনা? ‘জুতা আর প্যাট বড় আশা কিনে দিয়েছেন । না পরলে মনে কষ্ট পাবেন। 

উনি মােটেই কষ্ট পাবেন না। আপনার যদি লজ্জা-লজ্জা লাগে আপনি বুলে ফেলুন। 

বড় আপার মনটা কি এখন ভালাে?” 

খুবই ভালাে। মন খারাপ হবে কেন? দাড়িয়ে থেকে সময় নষ্ট করছেন কেন? এক্স ফাইল শুরু হয়ে যাবে তাে।’ 

দেলােয়ার কাচুমাচু মুখে বলল, চাচাজীর কাছ থেকে যদি অনুমতিটা নিয়ে দেন। টিভি দেখে হঠাৎ যদি রেগে যান ।। 

‘আচ্ছা আমি এক্ষুনি অনুমতি এনে দিচ্ছি। আপনি মিস্ত্রি নিয়ে আমার ঘরে চলে যান। এমন জায়গায় টিভি ফিট করবেন যেন আমি বিছানায় শুয়ে-শুয়ে দেখতে পারি।’ 

“জি আচ্ছা । 

শো বসার ঘরের দিকে যাচ্ছে। 

সে ঘরে ঢুকল না। দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে রইল। আজহার সাহেব গল্প করছেন, সবাই মুগ্ধ হয়ে শুনছে

 

হুমায়ূন আহমেদের লেখা মীরার গ্রামের বাড়ি খন্ড-১৪

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *