– “আপনার কথাবার্তা শুনে আমি খুবই অবাক হচ্ছি—আসলে আমি কিছুই জানি না।
“কিছু না জানলে জানবে। জানার জন্যেই আসতে বলছি। এখন আমি তোমার সঙ্গে লাভক্ষতির একটা আলাপ করব । এই আলাপটা মন দিয়ে শোন। লাইনে ডিস্টার্ব হচ্ছে না তাে? পরিষ্কার শুনতে পাচ্ছ?
“আমার দু’টাই মেয়ে। আমাদের যা বিষয়সম্পত্তি আছে সবই এদের। বাংলাদেশের হিসেবে মীরার বাবা শুধু সম্মানিত মানুষই নন, বিত্তবান মানুষও। ঢাকা শহরে কল বাগানে আমাদের চারতলা একটা বাড়ি আছে । ঐ বাড়ি তুমি আমি হতে পারব কি পারব না এমন বলতে পাই না।
এই দেখান। ভাড়া দেয়া আছে। এ ছাড়াও মীরার বাবা দু মেয়ের নামে গুলশানে তিনহাজার স্কয়ার ফিটের দু’টা এপার্টমেন্ট কিনে দিয়েছেন । দুটি মেয়ের জন্যেই | দশ লক্ষ টাকায় সঞ্চয়পত্র নো আছে।
আপনি আমাকে এইস কেন বলছেন বুঝতে পারছি না ।
তোমাকে বলছি কারণ মীরা তোমাকে অসম্ভব পছন্দ করে। যদি কোনাে কারণে সে তােমাকে হারায় সেটা সে সহ্য করতে পারবে না।
মীরার গ্রামের বাড়ি খন্ড-২৪
‘আমার হারাবার কথা উঠছে কেন? আমি তাকে বলেছি আমরা দুজনই এখন ছাত্র। তারপর একটা প্ল্যান করে .III =ILITE আমি সেই সময়টা মীরাকে দিতে পারছি না। মীরার দাদীজানের বয়স আশির উপরে। তিনি গুরুতর অসুস্থ। আমরা মূলত গ্রামে এসেছি তাকে লেখতে। তিনি নাতি জামাইয়ের মুখ দেখতে চাচ্ছেন।’ Tদ আপনি কি সত্যি সত্যি বিয়ের কথা ভাবছেন?
‘মিথ্যামিথ্যি বিয়ের কথা কেউ ভাবে না। বিয়ের কথা যদি ভাবে, সত্যি বিয়ের কথাই ভাবে। যাই হােক তুমি ভেবো না যে তুমি এখানে আসবে আর জোর করে তােমাকে বিয়ে দেয়া হবে। আমি চাই মীরার দাদাজান তােমাকে দেখুন । তারপর আমরা পারিবারিক ভাবে আলাপ-আলোচনা করব।
তােমার মা-বাবার সঙ্গে আলাপ করব।‘আমার বাবা বেঁচে নেই। আমার গার্জিয়ান হচ্ছেন আমার বড়মামা । আমরা তােমার মার সঙ্গে আলাপ করব, তোমার মামার সঙ্গে আলাপ করব। আমি কথা যা বলার বলে ফেলেছি। আমাকে তাড়াতাড়ি বাড়িতে ফিরতে হবে। অসুস্থ মেয়ে ফেলে এসেছি। তুমি কি আর কিছু জানতে চাও ?”
“মীরা আপনাকে কী বলেছে ? – “মীরা আমাকে কিছুই বলেনি। সে অত্যন্ত চাপা-স্বভাবের মেয়ে। তাকে মেরে ফেললেও তার পেট থেকে কোনাে কথা বের করা যাবে না। তাকে হঠাৎ দেখছি সে খুব টেনশানে করছে। জানি না কী কারণ তার মাথায় ঢুকে গেছে যে তুমি তাকে ছেড়ে যাচ্ছ। আমার মেয়ের টেনশান আমার কাছে অনেক বড় ব্যাপার। আমি তােমাকে যা বললাম, মেয়ের টেনশন কমানাের জন্যেই বললাম। আশা করি তুমি আমার উপর রাগ করােনি।’
মীরার গ্রামের বাড়ি খন্ড-২৪
জ্বি না রাগ করব কেন ? রাগ করার মতাে তাে আপনি কিছু বলেননি।‘আচ্ছা বাবা রাখি। আমি গাড়ি পাঠিয়ে দিচ্ছি।’
বুঝতে পারছি । তুমি ভালো । ভেবেটবে সিদ্ধান্ত ন| ওঁ | কানো সিদ্ধান্তই হুট করে নিতে নেই। সিদ্ধান্ত যত ছোটই হােক তার জনে। চিন্তার সময় দিতে হয় । রাখি কেমন ?
‘খালা স্নামালিকুম ” “ওয়ালাইকুম সালাম।’
মীরা এতক্ষণ অবাক হয়ে মা’র দিকে তাকিয়েছিল। এখন সে চোখ নামিয়ে নিল । মনোয়ারা বললেন, খুব পানির পিপাসা পেয়েছে। মা দেখ তো আমার জন্যে একগ্লাস পানি জোগাড় করা যায় কিনা।
বা মা’র গা আগের মতো হয়ে গেছে। এই কর মামলা এবং ভালােবাসায় আর্দ্র। মীরার চোখ ভিজে উঠতে শুরু করেছে। সে বলল, মা তোমার কি জুর আসছে । চোথ টুকটুকে লাল হয়ে আছে।”
মনোয়ারা ক্লান্ত গলায় বললেন, বুঝতে পারছি না। বুকে ব্যথা হচ্ছে ?
বেশি ব্যথা হচ্ছে । “না বেশি না। আমি একগ্লাস পানি খাব। তুষায় বুক ফেটে যাচ্ছে। ‘ মীরা পানির সন্ধানে বের হল।
মনােয়ারা উঠে দাঁড়াতে গিয়ে দেখলেন তার মাথা ঘুরছে। মনে হচ্ছে এক্ষনি মেঝেতে পড়ে যাবেন। চেয়ারের হাতল ধরে তিনি নিজেকে সামলালেন। তার উচিত বসে পড়া। তিনি বললেন না, প্রায় টলতে টলতে বের হলেন।
উত্তেজনায় শেফার চোখমুখ লাল হয়ে আছে। তার শরীর কাপছে। মনে হচ্ছে এক্ষুণি সে কেঁদে ফেলবে। আসলেই তার কান্না আসছে । নিচের ঠোট দাত দিয়ে। শক্ত করে কামড়ে ধরে সে কান্না থামাচ্ছে। কান্না থামানের এটা তার পুরনাে। কৌশল। তার ছিপ মাছ ধূরা পড়ছে। এমন সময় মাছটা ধরল যখন অশেপাশে কেউ নেই। অনু *.fণ আগেও আজাহার সাহেব ছিলেন। তিনি বললেন, মা অামি একটু হেটে আসি কেমন? শো চাচ্ছিল তার বাবা পাশে থাকে, তারপরে ও বলল, আচ্ছা ।জহার সাহেব চলে যাবার পর শো হঠাহ লেখ।
মীরার গ্রামের বাড়ি খন্ড-২৪
তার দু’টা ছিপের দু’টা ফাৎনার একটা নেই । সত্যি সত্যি নেই । প্রথমে সে বুঝতেই পারেনি যে মাছ টেনে নানা পানির নিচে নিয়ে গিয়েছে। সে চিন্তিত মুখে ফাৎনা খুঁজে বেড়াচ্ছে, তখন হঠাৎ মনে হল মাছ টোপ গিলেনি তাে! কী সর্বনাশ মাছ-মন্ত্র তো পড়া হয়নি। সে তিনবার মাছ-মন্ত্র পড়ে পানিতে টোকা দিল। আর তখনি শিশিশি ধরনের শব্দ হল। মাছ সুতা টানছে। হুইল-বড়শির হুইল ঘুরছে। শেফার বুক ধক করে উঠল। সে ডাকল, বাবা বাবা ।
তখন মনে হল বাবা নেই, একটু আগে উঠে গেছেন। সে কী করবে। বঁড়শি হাতে নিয়ে হ্যাচকা টান দেবে? না শুধু বড়শি শক্ত করে ধরে বসে থাকবে। বাঙ মাছ যদি হয় তাকে সুদ্ধ টেনে পানিতে নিয়ে যাবে নাতাে? – শেফা কাপতে কাপতে বভুশি ধরল । আর তখন অন্য ফানাটাও পানিতে ডুবে গেল। শেফা কী করবে।
মাছ-মন্ত্র পড়ে পানিতে টোকা দেবে ভ করে? তার হত্র বন্ধ । মাছ সুতা টানছে। শিশিশি শব্দ হচ্ছে। মনে হচ্ছে মাছটার ভয়ংকর শক্তি। দুল ধরে বসে থাকা যাচ্ছে না । রাক্ষুসী মাছ নাতো? মাল গিলে খেয়ে ফেলতে পারে এমন কোনাে ব্রাহ্মসী মাছ! পুরানাে দিঘিতে এ-রকম মাছ থাকতেও তো পারে।
Read More