হুমায়ূন আহমেদের লেখা মীরার গ্রামের বাড়ি খন্ড-২৬

মীরা তার কালরাতের জন্যে যত প্রস্তুতিই নিক, কোনো এক ফাঁকফোকর দিয়ে কালনাগিনী ঢুকে পড়বে। নিয়তি এড়ানাে যাবে না। নিয়তি মেনে নিতে পারলে খুব ভালো হত। সব কয়লায়িত নিয়তির হাতে ছেড়ে নিশ্চিন্ত মনে ঘুরে বেড়ানো যেত | অশাকিল হচ্ছে নিয়তির হাতে মার নিজেকে হাওতে পারছে না। নিয়তি বেহুলার জন্যে সত্যি, তার জন্যে সত্যি না। গাড়ি প্রচণ্ড ঝাঁকুনি খেয়ে থেমে গেল। ঘুম ভেঙে মনােয়ারা অসহায় গলায় বললেন, কী হয়েছেরে মীরা?

মীরার গ্রামের বাড়ি 

এইভার বলল, কিছু ল আম | চাকা শাহছার। ক্লার্তা এমুল জন্য । মনোয়ারা বললেন, চাকা বদলাতে কত দিন লাগবে । “দশ মিনিট। ‘তাড়াতাড়ি বদলাও। আমাদের বাড়িতে রেখে তুমি ঢাকা যাবে। 

ড্রাইভার জবাব দিল না। সে গাড়ি থেকে নেমে চাকা বদলাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ছে। দেলােয়ার তার লাশ । দেলােয়ারের হাতে এখনাে সানি-ভতি জাবিতে। সে মনে হয় কোনো অবস্রাতেই এটা হাতছাড়া করবে না । 

মীরা বলল, মা তোমার কি ঠাণ্ডা লাগছে। জানালার কাচ পুরােপুরি উঠিয়ে দেব। মনােয়ারা বললেন, আমাকে নিয়ে তােকে ভাবতে হবে না। তুই নিজের কথা ভাব। 

মনােয়ারা আবারো চোখ বন্ধ করে ফেললেন। মীরা গাড়ির দরজা খুলে নেমে এল। মীরা নিজেকে নিয়ে এই মুহুর্তে কিছু ভাবতে চাচ্ছে না। আগে ভাগে এভাবে কিছু হবে না । না হােক । তবু একটা ব্যাপার ঠিক রাখতে হবে—নে কী করবে ? 

মীরার গ্রামের বাড়ি খন্ড-২৬

মারা বলল, মা একটা ক্যাসেট চুলল তোমার কি খুব অসুবিবা হাব মনােয়ারা মেয়ের দিকে তাকালেন। তার সাথে বিস্ময়। এমন একটা ভয়ংকর সময় মেয়েটা কাসেটে গান দিতে চ{সেই ? তার মানে কি এই যে ভয়ংকর ব্যাপারটা তার গায়ে লাগছে না। সে কিছু বুঝতেই পারছে না। তার ধারণা ছিল তিনি তার পরিবারের মানুষগুলিকে চেনেন। এখন মনে হচ্ছে চেনেন না। 

এটা ঠিক করা আছে। এ নিয়ে অর ভাবাভাবির কিছু নেই। সাবের নামের মানুষটাকে সে বিয়ে করবে না। এবং, … 

নাহ এবং কী তা নিয়ে ভাবতে ইচ্ছা করছে না। বাবার সঙ্গে মারার কথা বা দরকার। বাবাকে ও খােলাখুলি সব জানানাে দরকার। তিনি মনে ন ত | কষ্ট পাবেন বা না পাবেন তা নিয়ে এখন আর দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হবার কিছু নেই । মীরাকে দেখতে হবে তার নিজের জীবন। 

বাবাকে কথাগুলি কীভাবে বলা যায়? কথাগুলি ইংরেজিতে শুরু করা যেতে পারে । ইংরেজিতে বলার একটা সুবিধা হচ্ছে, মনে হয় সে তার নিজের সমস্যার কথা বলছুে না । অন্য কারো সমস্যার কথা বলছে। 

16, I want to discuss something with you. Please spare me few minutes. The wit৷ না ভালো লাগছে না। কথাগুলি বাংলাতেই বলতে হবে। 

মীরার গ্রামের বাড়ি খন্ড-২৬

 আমার কাছে ভুল মনে হয়নি এবং এখনো মনে হচ্ছে না। তবে ভুলতাে বটেই। এই ভুলের জন্যে তােমরা আমাকে শান্তি দিতে চাও দাও । কিন্তু আমার জীবনটা যেহেতু আমার, আমি সেই জীবন কীভাবে যাপন করব তা ঠিকও করব আমি ।। এই ব্যাপারে তোমরা জোর খাটাতে পারবে না । 

বাবা তখন নিশ্চয়ই খুবই বিস্মিত হয়ে বলবেন—এ-রকম বক্তৃতার ভাষায় কথা ছিল কেন রে ? ব্যাপারটা কী ? 

ব্যাপারটা শােনার পর বাবা কীভাবে রি এক্ট করবেন ? আগেভাগে কিছুই বলা যাচ্ছে না। মা এত কাছের, সেই মা যে এমন করবে তাতাে মীরা বুঝতে পারে নি। মাত্রার আশা ছিল—আর কেউ না | হোক, | মত্ত ত ত র সমস্যা কিছুটা হলেও মীরার মাত্রা করে দেখবে। মা শুধু মা না, একই সঙ্গে মেয়ে। একটা মেয়ে আরেকটা মেয়ের জন্যে কোনোরকম সহানুভুতি বােধ করবে না ? 

ড্রাইভার গাড়ির ড্যাশকেন্দ্র থেকে কালো বের করে চালিয়ে দিল । গান হই। মরা ক্রোব বন্ধ করে গান শুনছে। মনােয়ারা মেয়ের দিকে তাকিয়ে আছেন । ফুলের মতাে সুন্দর একটা মেয়ে। ফুলের সঙ্গে এই মেয়ের উপমা দেয়া ঠিক হচ্ছে না। আরেকটা ব্যাপারে মনােয়ারা খুব অবাক হচ্ছেন—গান শুনতে তার নিজের ভালাে লাগছে। শুধু ভালাে না, বেশ ভালো লাগছে। তিনি নিজেও চোখ বন্ধ করলেন । গান হচ্ছে। যে গাইছে তার গলাটাও তো খুব মিষ্টি।

মীরার গ্রামের বাড়ি খন্ড-২৬

বন্যা -কি? মনােয়ারার ইচ্ছা করছে মীরার কাছে নামটা জানতে। তিনি অবশ্যি জানতে চাইলেন না। চোখ বন্ধ করলেন। 

“হেথা যে গান গাইতে আসা আমার 

আজো কেবলি সুর সাধা, আমার 

কেবল গাইতে চাওয়া। 

গাড়ি চলতে শুরু করেছে। মনোয়ারা জেগে উঠেছে। তার চোখ এখনাে লাল। কিছুক্ষণ ঘুমিয়েছেন বলে লাল ভাব আরাে বেড়েছে। 

মীরা বলল, মা তােমার শরীরটা একটু ভালাে লাগছে ? 

মনোয়ারা জবাব দিলেন না এবং মেয়ের দিকে ফিরলেন না। তিনি তাকিয়ে আছেন তার ডানদিকে । লুষ্টি জানালার বাইরে ফসল কাটা খোলা প্রান্তর। দেখার কিছু নেই। 

শেফা ভেবে পাচ্ছে না কেন তার ভাগ্যটা এত খারাপ? পৃথিবীতে নিশ্চয়ই তারচে অনেক খারাপ ভাগ্যের মেয়ে আছে তবে শেফার ধারণা বাংলাদেশে তারচে খারাপ ভাগ্যের মেয়ে আর নেই। 

আজ সে এতবড় একটা মাই ধরে ফেলেছে। আর আই কি-না বাড়িতে কেউ নেই। সে, বাবা আর দাদীজান। দাদীজানের সকাল থেকে দাতব্যথা বলে বিছানায় শুয়ে কাতরাচ্ছে। তারপরও তিনি এসে দেখেছেন এবং শেফাকে হতভম্ব করে বলেছেন—মাছটা তাে খারাপ না ।

 

Read More

হুমায়ূন আহমেদের লেখা মীরার গ্রামের বাড়ি খন্ড-২৭

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *