হুমায়ূন আহমেদের লেখা হোটেল গ্রেভার ইন খন্ড-১০

বর্তমানে আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগে কোয়ান্টাম কেমিস্ট্রি পড়াই। ক্লাসের শুরুতে ছাত্রদের এই গল্পটি বলি। শ্রদ্ধা নিবেদন করি ঐ অন্ধ ছাত্রর্টির প্রতি, যার কারণে আমার পক্ষে এই অসম্ভব সম্ভব হয়েছিল।

হোটেল গ্রেভার ইন

আরেকটি কথা, আমি কিন্তু মার্ক গর্ডনের সঙ্গে কাজ করতে রাজি হইনি। এই বিষয়টি নিয়ে আর কষ্ট করতে ইচ্ছা করছিল না, তাছাড়া আমার খানিকটা কুকর ভীতি আছে। মার্ক গর্ডনের ভালুকের মৃত কুকুরটিকে পাশে নিয়ে কাজ করার প্রশ্নই উঠে না।

বাংলাদেশ নাইট ভাের চারটার সময় টেলিফোন বেজে উঠল, অসময়ে টেলিফোন মানেই বিসিভার না নেয়া পর্যন্ত বুক ধড়ফর। নির্ঘাৎ বাংলাদেশের কল। একগাদা টাকা খরচ করে কেউ যখন বাংলাদেশ থেকে আমেরিকায় কল করে তখন ঘটনা খারাপ ধরেই নিতে হবে। নিশ্চয়ই কেউ মারাটার| গেছে।

তিনবার রিং হবার পর আমি বিলিভার তুলে ভয়ে ভয়ে বললাম, হ্যালাে।

ওপার থেকে ভারী গলা শােনা গেল, হুমায়ূন ভাই, খিচুড়ি কি করে রান্ন| করতে হয় জানেন?

হোটেল গ্রেভার ইন খন্ড-১০

আমি স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম। টেলিফোন করেছে মােরহেড স্টেট ইউনিভার্সিটির মিজানুল হক। সেখানকার একমাত্র বাঙালী ছাত্র। অ্যাকাউন্টিং-এ আণ্ডার গ্রাজুয়েট কোর্স করছে।

হ্যালাে হুমায়ূন ভাই, কথা বলছেন না কেন? খিচুড়ি কী করে রান্না করতে হয় জানেন?

না।তাহলে তো বিগ প্রবলেম হয়ে গেল!

আমি চুপ করে রইলাম। মিজানুল হক হড়বড় করে বলল, কাচ্চি বিরিয়ানির প্রিপারেশন জানা আছে ?

আমি শীতল গলায় বললাম, কটা বাজে জান? ৪ কস্টা? ও রাত চারটা। ৪ বলেন কি? এত বাত হয়ে গেছে? সর্বনাশ। ও করছিলে কি তুমি?

বাংলাদেশের ম্যাপ বানাচ্ছি। আপনি ঘুমিয়ে পড়ুন হুমায়ূন ভাই। সকালে টেলিফোন করব, বিরাট সমস্যায় পড়েছি।

মিজানুল হক খট করে টেলিফোন রেখে দিল। আমি বিছানা ছেড়ে উঠলাম। পার্কোলেটরে কফি বসিয়ে দিলাম। আমার ঘুমাবার চেষ্টা করা বৃথা। মিজানুলহকের মাথার ঠিক নেই, কিছুক্ষণের মধ্যেই আবার টেলিফোন করবে। অন্য কোন খাবারের রেসিপি জানতে চাইবে।

এ ব্যাপারটা গত তিন দিন ধরে চলছে। মোরহেড স্টেট ইউনিভার্সিটিতে আন্তর্জাতিক বর্ষ উদযাপন উপলক্ষে অন্যান্য দেশের সঙ্গে উদ্যাপিত হবে বাংলাদেশ নাইট। এই অঞ্চলে বাংলাদেশের একমাত্র ছাত্র হচ্ছে মিজান, আর আমি আছি নর্থ ডাকোটা স্টেট ইউনিভার্সিটিতে। মিজানের একমাত্র পরামর্শদাতা। আশপাশে সাতশ মাইলের মধ্যে দ্বিতীয় বাঙালী নেই।

কফির পেয়ালা হাতে নেবার সঙ্গে সঙ্গে মিজানের টেলিফোন ঃ হ্যালো হুমায়ূন ভাই ? হঁ্যা। ও প্ল্যান-প্রােগ্রাম নিয়ে আপনার সঙ্গে আরেকবার বসা দরকার। ও এখনো তাে দেরি আছে।

হোটেল গ্রেভার ইন খন্ড-১০

দেরি আপনি কোথায় দেখলেন? এক সপ্তাহ মাত্র। শালাদের একটা ভেলকি দেখিয়ে দেব। বাংলাদেশ বললে চিনতে পারে না, হা-করে তাকিয়ে থাকে। ইচ্ছা করে চড় মেরে মুখ বন্ধ করে দেই। এইবার শালারা বুঝবে বাংলাদেশ কি জিনিস। ঠিক না হুমায়ূন ভাই ?

হ্যা, ঠিকই বলেছ।শালাদের চোখ ট্যারা হয়ে যাবে দেখবেন। আমি আপনার এখানে চলে আসছি।

মিজান টেলিফোন নামিয়ে রাখলাে। আমি আরেকটি দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেললাম। এই ছেলেটিকে আমি খুবই পছন্দ করি। তার সমস্যা একটাই, সারাক্ষণ মুখে বাংলাদেশ বাংলাদেশ। বাংলাদেশ এসােসিয়েশন একটা খােলার চেষ্টা করেছিল। একজন ছাত্র থাকলে এসােসিয়েশন হয় না বলে সেই চেষ্টা সফল হয়নি। অন্য স্ট্রেট থেকে বাংলাদেশী ছাত্র আনার চেষ্টাও করেছে, লাভ হয়নি।

এই প্রচণ্ড শীতের দেশে কেউ আসতে চায় না। শীতের সময় এখানকার তাপমাত্রা শূন্যের ত্রিশ ডিগ্রী নিচে নেমে যায়, কে আসবে এই রকম ভয়াবহ ঠাণ্ডা একটা জায়গায় ? | মিজান এই ব্যাপারে বেশ মনমরা হয়েছিল। বাংলাদেশ নাইট-এর ব্যাপারটা এসে পড়ায় সেই দুঃখ খানিকটা কমেছে। এই বাংলাদেশ নাইট নিয়েও বিরাট কাণ্ড। মােরহেড স্টেট ইউনিভার্সিটির ফরেন স্টুডেন্ট অ্যাডভাইজার মিজানকে বলল,তুমি এক কাজ কর—তুমি বাংলাদেশ নাইট পাকিস্তানীদের সঙ্গে কর।

মিজান হুংকার দিয়ে বলল, কেন?

Read More

হুমায়ূন আহমেদের লেখা হোটেল গ্রেভার ইন খন্ড-১১

 

 

 

 

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *