আজ কী যেতে পাল্লবেন?
‘ বুঝতে পারছি না। আজ আমাদের অনেক কাজ। আমরা চিড়িয়াখানায় গেলাম।
বাঁদরদের বাদাম খাওয়ালাম। তাদের লাফালাফি ঝাপাঝাপি দেখলাম । তারপর হাতীর পিঠে চড়লাম। দশ টাকা করে টিকিট। তারপর গেলাম শিম্পাঞ্জি দেখতে। শিম্পাঞ্জী দেখে তেমন মজা পাওয়া গেল না। কারণ তার অবস্থা। বাদলের মত। খুবই বিমর্ষ । আমরা একটা কলা ছুঁড়ে দিলাম— সে ফিরেও তাকাল না। বাদর গােত্রীয় প্রাণী— অথচ কলার প্রতি আগ্রহ নেই – এই প্রথম। দেখলাম । বাদলকে বললাম, চল জিরা দেখি।
বাদল শুকনাে গলায় বলল, জিরাফ দেখে কি হবে। “জিরাফের লম্বা গলা দেখে যদি তাের মনটা ভাল হয়।‘ “আমার মন ভাল হবে না। আমি এখন বাসায় চলে যাব।‘
“যা চলে যা। আমি সন্ধ্যা পর্যন্ত থাকব। সন্ধ্যাবেলা সব পশুপাখি একসঙ্গে ডাকাডাকি শুরু করে – ইন্টারেস্টিং একটা ব্যাপার।
“কোন ইন্টারেস্টিং ব্যাপার আমি এখন আর আগ্রহ বােধ করছি না।‘ “তাহলে যা, বাড়িতে গিয়ে লম্বা ঘুম দে।‘‘
তুমি আঁখিকে টেলিফোন করবে না?” করব।‘ এখন কর । চিড়িয়াখানায় কার্ড ফোন আছে। আমার কাছে কার্ড আছে।”
হিমুর দ্বিতীয় প্রহর খন্ড–১২
তুই কি ফোন কার্ড সঙ্গে নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছিস? এ পর্যন্ত ঐ বাড়িতে ক’বার টেলিফোন করেছিস?”
“তাের সঙ্গে কথা বলেনি?”
বাঁদর দেখার জন্যে চিড়িয়াখানায় যেতে হবে। হাতীর পিঠে চড়তে। এ। জানি লই এলেফেন্ট টাইপ ব্যাপার। আঁখি নামের একটা মেয়েকে খুঁজে বের করতে হবে। এর সঙ্গে কথা বলতে হবে।”
“বেশ, কাল আসুন। ‘সেমি পারি কী না।‘
“আপনি আমার বাবার অবস্থাটা বুঝতে পারছেন না। একটা ভুল ধারণা তার মনে ঢুকে গেছে। এটা বের করা উচিত।’
“আমি হাসিমুখে বললাম, কোনটা ভুল ধারণা, কোনটা শুদ্ধ ধারণা সেটা চট করে বলাও কিন্তু মুশকিল । এই পৃথিবীতে সবকিছুই আপেক্ষিক।‘ |
আপনি নিশ্চয়ই প্রমাণ করার চেষ্টা করছেন না যে আপনি মানুষ না, অনন্য। কিছু ।
সানি আবাল ও হাসলাম । আমার সেই বিখ্যাত বিভ্রান্ত করা হাসি। তাৰ বিংশ শতাব্দীর মেয়ে অনেক চালাক যত বিভ্রান্তির হাসিই কেউ হাসুক মেয়েরা Tাও হয় না। তা ছাড়া পরিবেশের একটা ব্যাপারও আছে। বিভ্রান্ত হবার জ”
“তাের সঙ্গেই কথা বলেনি আমার সঙ্গে কি আর বলবে?” “তােমার সঙ্গে বলবে— কারণ তুমি হচ্ছ হিমু।‘
টেলিফোন করে কি বলব?”
বাদল চুপ করে রইল। আমি হাসি মুখে বললাম, তুই নিশ্চয়ই চাস না— কেমন আছ, ভাল আছি টাইপ কথা বলে রিসিভার লেখে দিন। মেয়েটাকে আমি । কি বলব সেটা বলে দে।
হিমুর দ্বিতীয় প্রহর খন্ড–১২
‘তােমার যা ইচ্ছা তাই বল।
তি বয়ান — অাঁখি শােন, মগবাজার কাজি অফিস চেন, কয়— বিকল করে কাজি অফিসে চলে আসি। আমি বাদলকে আছি । তামি এলে তােমাদের বিয়ে দিয়ে দেব। কোন সমস্যা নেই।
‘ বাদল মাথা নীচু করে ফেলল। মানে হচ্ছে সে খুবই তা হিস করে বলল, তুমি আসতে বললে আখি চলে আসবে।
তাের তাই ধারণা?‘
সেফলল । মানে হচ্ছে সে খুবই লজ্জা পাচ্ছে । প্রায় কি
তুই কিন্তু ভালই বােকা।‘ “আমি বােকা হই যাই হই তুমি হচ্ছ হিমু। তুমি যা বলবে তাই হয়। ‘আচ্ছা পরীক্ষা হয়ে যাক আমি আখিকে আসতে বলি। বলল। বাল প্রায় অস্পষ্ট স্বরে বলল, বল ।
বেশ কয়েকবার টেলিফোন করা হল। ওপাশ থেকে কেউ ফোন ধরতে লাল শুকনাে মুখে দাড়িয়ে আছে। বাদলকে দেখে খুবই মায়া লাগছে। লাগালেও কিছু করার নেই। পৃথিবীতে বেচে থাকতে হলে প্রতি পদে wr মায়াকে তুচ্ছ করতে হয়।।
বরহ কা ।
কােনাে ভদ্রলােকের যদি বিয়ের দু‘বছরের মাথায় সন্তান প্রসব জনিত জটিলতায় স্ত্রীবিয়ােগ হয়, তিনি যদি আর বিয়ে না করেন এবং বাকি জীবন কাটিয়ে দেন সন্তানকে বড় করার জটিল কাজে তখন তাঁর ভেতর নানান সমস্যা। দেখা দেয়। সমস্যার মূল কারণ অপরাধবােধ। স্ত্রীর মৃত্যুর জন্যে তিনি নিজেকে নামী করেন। সন্তানের জন্ম না হলে স্ত্রী মারা যেত না। সন্তানের অনাের জন্যে তার ভূমিকা আছে এই তথ্য তার মাথায় ঢুকে যায়।
হিমুর দ্বিতীয় প্রহর খন্ড–১২
মাতহারা সন্তানকে মাতস্নেহবঞ্চিত করার জন্যেও তিনি নিজেকে দায়ী করেন। তাঁর নিজের নিঃসঙ্গতার জন্যেও তিনি নিজেকে দায়ী করেন। তিনি সংসারে বেচে থাকেন অপরাধীর মতাে। যতই দিন যায় তার আচার, আচরণ জীবনযাপন পদ্ধতি ততই অসংলগ্ন হতে থাকে। স্ত্রী জীবিত অবস্থায় তাকে যতটা ভালবাসতেন, মৃত্যুর পর তারচে অনেক বেশী ভালবাসতে শুরু করেন। সেই ভালবাসাটা চলে যায় অসুস্থ। পর্যায় ।
আশরাফুজ্জামান সাহেবকে দেখে আমার তাই মনে হল। মীরার বাবার নাম আশরাফুজ্জামান। একসময় কলেজের শিক্ষক ছিলেন। স্ত্রীর মুত্যুর পর চাকরি ছেড়ে দেন। এটাই স্বাভাবিক । অস্থিরতায় আক্রান্ত একটা মানুষ স্থায়ীভাবে কিছু করতে পারে না। বাকি জীবনে তিনি অনেক কিছু করার চেষ্টা করেছেন – ইনসিউরেন্স কোম্পানির কাজ, ট্র্যাভিলিং এজেন্সির চাকরি থেকে ইনডেনটিং ব্যবসা, টুকটাক ব্যবসা সবই করা হয়েছে। এখন কিছু করছেন না। পৈত্রিক বাড়ি ভাড়া দিয়ে সেই টাকায় সংসার চালাচ্ছেন। সংসারে দুটিমাত্র মানুষ থাকায় তেমন অসুবিধা হচ্ছে না।
ভদ্রলােকের প্রচুর অবসর । এই অবসরের সবটাই কাটাচ্ছেন মৃত মানুষের সঙ্গে যােগাযােগের পদ্ধতি উদ্ভাবনে। ভদ্রলােক্স খুব রােগা। বড় বড় চোখ। চোখের দৃষ্টিতে ভরসা–হারানাে ভাব। বয়স পঞ্চাশের কাছাকাছি। এই বয়সে মাথায় কাঁচাপাকা চুল থাকার কথা। তার মাথার সব ফুলই। পাকা। ধবধবে শাদা চালে ভদ্রলােকের মধ্যে ঋষি ঋষি ভাব চলে এসেছে। তার গলার স্বর খুব মিষ্টি। কথা বলার সময় একটু কে কাছে আসেন। তার হাত। খুবই সরু। মৃত মানুষের হাতের মত– বিবর্ণ । কথা বলার সময় গায়ে হাত দেয়ার অভ্যাসও তার আছে। তিনি যতবারই গায়ে হাত দিয়েছেন, আমি ততাবই চমকে উঠেছি।
‘আপনার নাম হিমু”
হেসে উড়িয়ে দেয়াটা ঠিক হয় নি। টানমতো সেই রাতেই রিত খুন আপনার চেহারী পেয়েছিলেন। তাই না?‘ মীরার মা সারাজীবন আমাকে জানানভাবে সাহায্য কাছে। এল একেক রকম দেখা উন্নত শিল্পকর্ম মানুষের চেহারাও করছে।‘
“উনার নাম কী?
Read More