হুমায়ন আহমেদ এর হিমুর দ্বিতীয় প্রহর খন্ড–১২

 আজ কী যেতে পাল্লবেন?

 হিমুর দ্বিতীয় প্রহর

বুঝতে পারছি নাআজ আমাদের অনেক কাজ। আমরা চিড়িয়াখানায় গেলাম। 

বাঁদরদের বাদাম খাওয়ালামতাদের লাফালাফি ঝাপাঝাপি দেখলাম তারপর হাতীর পিঠে চড়লামদশ টাকা করে টিকিটতারপর গেলাম শিম্পাঞ্জি দেখতেশিম্পাঞ্জী দেখে তেমন মজা পাওয়া গেল নাকারণ তার অবস্থাবাদলের মত। খুবই বিমর্ষ আমরা একটা কলা ছুঁড়ে দিলামসে ফিরেও তাকাল নাবাদর গােত্রীয় প্রাণী— অথচ কলার প্রতি আগ্রহ নেই এই প্রথমদেখলাম বাদলকে বললাম, চল জিরা দেখি। 

বাদল শুকনাে গলায় বলল, জিরাফ দেখে কি হবেজিরাফের লম্বা গলা দেখে যদি তাের মনটা ভাল হয়আমার মন ভাল হবে নাআমি এখন বাসায় চলে যাব‘ 

যা চলে যাআমি সন্ধ্যা পর্যন্ত থাকবসন্ধ্যাবেলা সব পশুপাখি একসঙ্গে ডাকাডাকি শুরু করে ইন্টারেস্টিং একটা ব্যাপার। 

কোন ইন্টারেস্টিং ব্যাপার আমি এখন আর আগ্রহ বােধ করছি নাতাহলে যা, বাড়িতে গিয়ে লম্বা ঘুম দে‘ 

তুমি আঁখিকে টেলিফোন করবে না?করবএখন কর চিড়িয়াখানায় কার্ড ফোন আছে। আমার কাছে কার্ড আছে” 

হিমুর দ্বিতীয় প্রহর খন্ড–১২

তুই কি ফোন কার্ড সঙ্গে নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছিস? পর্যন্ত বাড়িতে বার টেলিফোন করেছিস?” 

তাের সঙ্গে কথা বলেনি?” 

বাঁদর দেখার জন্যে চিড়িয়াখানায় যেতে হবেহাতীর পিঠে চড়তেজানি লই এলেফেন্ট টাইপ ব্যাপারআঁখি নামের একটা মেয়েকে খুঁজে বের করতে হবেএর সঙ্গে কথা বলতে হবে” 

বেশ, কাল আসুনসেমি পারি কী না‘ 

আপনি আমার বাবার অবস্থাটা বুঝতে পারছেন নাএকটা ভুল ধারণা তার মনে ঢুকে গেছেএটা বের করা উচিত।’ 

আমি হাসিমুখে বললাম, কোনটা ভুল ধারণা, কোনটা শুদ্ধ ধারণা সেটা চট করে বলাও কিন্তু মুশকিল এই পৃথিবীতে সবকিছুই আপেক্ষিক

আপনি নিশ্চয়ই প্রমাণ করার চেষ্টা করছেন না যে আপনি মানুষ না, অনন্যকিছু । 

সানি আবাল হাসলাম আমার সেই বিখ্যাত বিভ্রান্ত করা হাসিতাৰ বিংশ শতাব্দীর মেয়ে অনেক চালাক যত বিভ্রান্তির হাসিই কেউ হাসুক মেয়েরা Tাও হয় নাতা ছাড়া পরিবেশের একটা ব্যাপারও আছেবিভ্রান্ত হবার ” 

তাের সঙ্গেই কথা বলেনি আমার সঙ্গে কি আর বলবে?তােমার সঙ্গে বলবেকারণ তুমি হচ্ছ হিমু‘ 

টেলিফোন করে কি বলব?” 

বাদল চুপ করে রইলআমি হাসি মুখে বললাম, তুই নিশ্চয়ই চাস নাকেমন আছ, ভাল আছি টাইপ কথা বলে রিসিভার লেখে দিনমেয়েটাকে আমি কি বলব সেটা বলে দে। 

হিমুর দ্বিতীয় প্রহর খন্ড–১২

তােমার যা ইচ্ছা তাই বল। 

তি বয়ান অাঁখি শােন, মগবাজার কাজি অফিস চেন, কয়বিকল করে কাজি অফিসে চলে আসিআমি বাদলকে আছি তামি এলে তােমাদের বিয়ে দিয়ে দেবকোন সমস্যা নেই। 

বাদল মাথা নীচু করে ফেললমানে হচ্ছে সে খুবই তা হিস করে বলল, তুমি আসতে বললে আখি চলে আসবে। 

তাের তাই ধারণা?‘ 

সেফলল মানে হচ্ছে সে খুবই লজ্জা পাচ্ছে প্রায় কি 

তুই কিন্তু ভালই বােকাআমি বােকা হই যাই হই তুমি হচ্ছ হিমুতুমি যা বলবে তাই হয়আচ্ছা পরীক্ষা হয়ে যাক আমি আখিকে আসতে বলিবললবাল প্রায় অস্পষ্ট স্বরে বলল, বল । 

বেশ কয়েকবার টেলিফোন করা হলওপাশ থেকে কেউ ফোন ধরতে লাল শুকনাে মুখে দাড়িয়ে আছেবাদলকে দেখে খুবই মায়া লাগছেলাগালেও কিছু করার নেইপৃথিবীতে বেচে থাকতে হলে প্রতি পদে wr মায়াকে তুচ্ছ করতে হয়। 

বরহ কা । 

কােনাে ভদ্রলােকের যদি বিয়ের দুবছরের মাথায় সন্তান প্রসব জনিত জটিলতায় স্ত্রীবিয়ােগ হয়, তিনি যদি আর বিয়ে না করেন এবং বাকি জীবন কাটিয়ে দেন সন্তানকে বড় করার জটিল কাজে তখন তাঁর ভেতর নানান সমস্যাদেখা দেয়সমস্যার মূল কারণ অপরাধবােধস্ত্রীর মৃত্যুর জন্যে তিনি নিজেকে নামী করেনসন্তানের জন্ম না হলে স্ত্রী মারা যেত নাসন্তানের অনাের জন্যে তার ভূমিকা আছে এই তথ্য তার মাথায় ঢুকে যায়

হিমুর দ্বিতীয় প্রহর খন্ড–১২

মাতহারা সন্তানকে মাতস্নেহবঞ্চিত করার জন্যেও তিনি নিজেকে দায়ী করেনতাঁর নিজের নিঃসঙ্গতার জন্যেও তিনি নিজেকে দায়ী করেনতিনি সংসারে বেচে থাকেন অপরাধীর মতােযতই দিন যায় তার আচার, আচরণ জীবনযাপন পদ্ধতি ততই অসংলগ্ন হতে থাকেস্ত্রী জীবিত অবস্থায় তাকে যতটা ভালবাসতেন, মৃত্যুর পর তারচে অনেক বেশী ভালবাসতে শুরু করেনসেই ভালবাসাটা চলে যায় অসুস্থপর্যায় । 

আশরাফুজ্জামান সাহেবকে দেখে আমার তাই মনে হলমীরার বাবার নাম আশরাফুজ্জামানএকসময় কলেজের শিক্ষক ছিলেনস্ত্রীর মুত্যুর পর চাকরি ছেড়ে দেনএটাই স্বাভাবিক অস্থিরতায় আক্রান্ত একটা মানুষ স্থায়ীভাবে কিছু করতে পারে নাবাকি জীবনে তিনি অনেক কিছু করার চেষ্টা করেছেন ইনসিউরেন্স কোম্পানির কাজ, ট্র্যাভিলিং এজেন্সির চাকরি থেকে ইনডেনটিং ব্যবসা, টুকটাক ব্যবসা সবই করা হয়েছেএখন কিছু করছেন নাপৈত্রিক বাড়ি ভাড়া দিয়ে সেই টাকায় সংসার চালাচ্ছেনসংসারে দুটিমাত্র মানুষ থাকায় তেমন অসুবিধা হচ্ছে না

ভদ্রলােকের প্রচুর অবসর এই অবসরের সবটাই কাটাচ্ছেন মৃত মানুষের সঙ্গে যােগাযােগের পদ্ধতি উদ্ভাবনেভদ্রলােক্স খুব রােগাবড় বড় চোখচোখের দৃষ্টিতে ভরসাহারানাে ভাববয়স পঞ্চাশের কাছাকাছিএই বয়সে মাথায় কাঁচাপাকা চুল থাকার কথাতার মাথার সব ফুলইপাকাধবধবে শাদা চালে ভদ্রলােকের মধ্যে ঋষি ঋষি ভাব চলে এসেছেতার গলার স্বর খুব মিষ্টিকথা বলার সময় একটু কে কাছে আসেনতার হাতখুবই সরুমৃত মানুষের হাতের মতবিবর্ণ কথা বলার সময় গায়ে হাত দেয়ার অভ্যাসও তার আছেতিনি যতবারই গায়ে হাত দিয়েছেন, আমি ততাবই চমকে উঠেছি। 

আপনার নাম হিমু” 

হেসে উড়িয়ে দেয়াটা ঠিক হয় নিটানমতো সেই রাতেই রিত খুন আপনার চেহারী পেয়েছিলেনতাই না? মীরার মা সারাজীবন আমাকে জানানভাবে সাহায্য কাছেএল একেক রকম দেখা উন্নত শিল্পকর্ম মানুষের চেহারাও করছে‘ 

উনার নাম কী?

 

Read More

হুমায়ন আহমেদ এর হিমুর দ্বিতীয় প্রহর খন্ড-১৩

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *