রাঙ্গামাটি সংক্ষিপ্ত তথ্যাবলী ও দর্শনীয় স্থানসমূহ এবং কিভাবে যাবেন জেনে নিন

রাঙ্গামাটি জেলার দর্শনীয় স্থান

রাঙ্গামাটি জেলা বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের চট্টগ্রাম বিভাগের একটি প্রশাসনিক অঞ্চল । বেতবুনিয়া ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্র এখানে অবস্থিত । রাঙ্গামাটি মোট আয়তন ৬১১৬.৩ বর্গ কি.মি । এ জেলা উত্তরে ভারতের ত্রিপুরা, দক্ষিণে বান্দরবান জেলা পূর্বে ভারতের মিজোরাম প্রদেশ এবং মায়ানমারের চীন প্রদেশ ও পশ্চিমে খাগড়াছড়ি এবং চট্টগ্রাম জেলা দ্বারা পরিবেষ্ঠিত । রাঙ্গামাটি পৌরসভা ৯ টি ওয়ার্ড ও ৩৫ টি মহল্লা নিয়ে গঠিত । শহরের মোট আয়তন ৬৪.৭৫ বর্গ কি.মি । ১৯৮৩ সালে রাঙ্গামাটি একটি পূর্ণাঙ্গ জেলা হিসাবে ঘোষিত হয় । এ জেলায় ১০ টি উপজেলা, ৫০ টি ইউনিয়ন পরিয়দ, ১৬২ টি মৌযা ও ১৩৪৭ টি গ্রাম আছে । বিভাগের

রাঙ্গামাটি জেলার দর্শনীয় স্থান

  • পর্যটন মোটেল ও ঝুলন্ত সেতু, তবলছড়ী ডিয়ার পার্ক, তবলছড়ি, রাঙ্গামাটি ।
  • পেদা টিং টিং, কাপ্তিই হ্রদ
  • নৌ বাহিনীর পিকনিক স্পট, কাপ্তাই, রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা ।
  • বেতবুনিয়া ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্র, কাউখালী, রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা ।
  • আর্যপুর ধর্মোজ্জল বনবিহার, আর্যপুর, বাঘাইছড়ি, রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা ।
  • ন-কাবা ছড়া ঝর্ণা, ন-কাবা ছড়া, বিলাইছড়ি, রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা ।
  • পুলিশ স্পেশাল ট্রেনিং স্কুল, ১নং বেতবুনিয়া মডেল ইউনিয়ন পরিষদ, কাউখালী, রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা ।
  • উপজাতীয় যাদুঘর, রাঙ্গামাটি সদর
  • উপজাতীয় টেকমটাইল মার্কেট, তবলছড়ি, রাঙ্গামাটি সদর, রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা ।
  • ফুরমোন পাহাড়, রাঙ্গামাটি সদর, রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা ।
  • বনশ্রী পর্যটন কমপ্লেক্স, বড়ইছড়ি, কাপ্তাই, রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা ।
  • বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রউফ এর সমাধিস্থল, বুড়িঘাট, নানিয়ারচর, রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা ।
  • বীরশ্রেষ্ঠ ল্যান্সেনায়েক মুন্সী আব্দুর রউফ স্মৃতি ভাস্কর্য, সাপছড়ি, সদর, রাঙ্গামাটি ।
  • বুদ্ধদের প্যাগোডা,
  • যমচুক, বন্দুক ভাংগা ইউনিয়ন

 

  • ঐতিহ্যবাহী চাকমা রাজার রাজবাড়ি, রাঙ্গামাটি সদর, রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা ।
  • ওয়াগগা চা এস্টেট, ওয়াগগাছড়া, কাপ্তাই, রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা ।
  • রাঙ্গামাটি ফুড প্রোডাক্টস, ১নং বেতবুনিয়া মডেল ইউনিয়ন পরিষদের ৩নং ওয়ার্ড ডাকবাংলো, চট্টগ্রাম রাঙ্গামাটি মহাসড়কের পাশে ।
  • রাঙ্গামাটি ডিসি বাংলো, রাঙ্গামাটি সদর, রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা ।
  • রাঙ্গামাটি-কাপ্তাই সংযোগ সেতু, রাঙ্গামাটি সদর, রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা ।
  • রাজা হরিশ চন্দ্র রায়ের আবাসস্থলের ধ্বংসাবশেষ
  • রাঙ্গামাটি-কাপ্তাই সংযোগ সড়ক, রাঙ্গামাটি ও কাপ্তাই এর মাঝে ।
  • সুবলং ঝর্ণা, শুভলং, বরকল উপজেলা ।
  • রাইংখ্যং পুকুর, বড়থলি ৯নং ওয়ার্ড, ফারুয়া ইউপি, বিলাইছড়ি উপজেলা, রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা ।
  • রাজস্থলী ঝুলন্ত সেতু, নারামূখ মারমা পাড়া, রাজস্থলী, রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা ।
  • রাজবন বিহার, রাঙ্গামাটি সদর, রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা ।
  • শ্রদ্ধেয় বনভান্তের জন্ম স্থান মোরঘোনায় স্মৃতি স্তম্ভ ও স্মতি মন্দির (নির্মাণাধীণ) । রাঙ্গামাটি সদর উপজেলাধীন ২ নং মগবান ইউনিয়নের বড়াদম নামক জায়গায় অবস্থিত ।
  • রাজা জং বসাক খানের দীঘি ও মসজিদ
  • কাট্টলী বিল, কাট্টলী বিল, লংগদু, রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা ।
  • কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের স্পিলওয়ে, কাপ্তাই
  • কাপ্তাই জাতীয় উদ্যান, কাপ্তাই উপজেলা ।
  • কর্ণফুলী পেপার মিলস্ লিমিটেড, চন্দ্রঘোনা, কাপ্তাই, রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা ।
  • কর্ণফুলী হ্রদ, কাপ্তাই উপজেলা
  • টুকটুক ইকো ভিলেজ, জেলা সদরের বালুখালী ইউনিয়নের কিল্ল্যামুড়া এলাকা
  • কর্ণফুলি পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্র, চন্দ্রঘোনা, কাপ্তাই, রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা ।
  • সাজেক ভ্যালী, সাজেক, বাঘাইছড়ি, রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা ।
  • নির্বানপুর বন ভাবনা কেন্দ্র, কুতুকছড়ি, সদর, রাঙ্গামাটি ।
  • ডলুছড়ি জেতবন বিহার, জেতবন, লংগদু, রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা ।
  • চিৎমরম বৌদ্ধ বিহার, কাপ্তাই, রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা ।
  • তিনটিলা বনবিহার, লংগদু, রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা ।

কর্ণফুলী হ্রদ

১৯৬০ খ্রিস্টাব্দে জল বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের লক্ষ্যে কাপ্তাই বাঁধ নির্মাণের ফলে কর্ণফুলী হ্রদরে সৃষ্টি হয় । কৃত্রিম এই হ্রদের আয়তন ২৯২ বর্গমাইল (বর্গ কিলোমিটারে পরিণত করতে হবে) । এই হ্রদের সাথে কর্ণফুলী, কাচালং আর মাইনী নদীর রয়েছে নিবিড় সংযোগ । কাচালং নদীর উজানে লংগদুর মাইনীমুখে এসে হ্রদের বিস্তার দেখে যুগপৎ বিষ্মিত হতে হয় । এখানে হ্রদের বিস্তীর্ণ জলরাশি নির্দ্বিধায় আকাশের সাথে মিশে গেছে । রাঙ্গামাটি শহরে এলেই চোখে পড়ে হ্রদ-পাহাড়ের অকৃত্রিম সহাবস্থান যা দেশের আর কোথাও দেখা মেলেনা । এ হ্রদের স্বচ্ছ জলরাশি আর সবুজ পাহাড়ের অপরূপ সৌন্দর্য পর্যটকদের আপন মহিমায় । প্রকৃতি এখানে কতটা অকৃপণ হাতে তার রূপ-সুধা ঢেলে দিয়েছে তা দূর থেকে কখনই অনুধাবন করা সম্ভব না ।

যাতায়াত :

নৌ-ভ্র্রমণের জন্য রিজার্ভ বাজার, তবলছড়ি ও পর্যটন ঘাটে ভাড়ায় স্পীড বোট ও নৌযান পাওয়া যায় । যার ভাড়ার পরিমাণ ঘণ্ট প্রতি স্পীড বোট ঘন্টায় ১২০০-১৫০০/- এবং দেশীয় নৌযান ৪০০-৮০০/- টাকা ।

পর্যটন মোটেল ও ঝুলন্ত সেতু

রাঙ্গামাটি শহরের শেষপ্রান্তে কর্ণফুলী হ্রদের কোল ঘেঁষে ১৯৮৬ খ্রিস্টাব্দে গড়ে উঠেছে ‘পর্যটন হলিডে কমপ্লেক্স’ । এখানে রয়েছে মনোরম ‘পর্যটন মোটেল’ । পর্যটন মোটেল এলাকা ’ডিয়ার পার্ক’ নামেই সমাধিক পরিচিত । মোটেল এলাকা থেকে দৃশ্যমান হ্রদের বিস্তীর্ণ জলরাশি আর দূরের নীল উঁচু-নীচু পাহাড়ের সারি এখানে তৈরি করেছে এক নৈসর্গিক আবহ । এখানেই রয়েছে ৩৩৫ ফুট দীর্ঘ মনোহরা ঝুলন্ত সেতু – যা এই এলাকার গুরুত্ব ও আকর্ষণ বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে । এই সেতু ইতোমধ্যে ’সিম্বল অব রাঙ্গামাটি’ হিসেবে পরিচিত পেয়েছে । এছাড়া এখানে রয়েছে অডিটোরিয়াম, পার্ক, পিকনিক স্পট, স্পীড বোট ও দেশীয় নৌ-যান ।

যাতায়াত :

রাঙ্গামাটি শহরের তবলছড়ি হয়ে সড়ক পথে সরাসরি ‘পর্যটন কমপ্লেক্সে’ যাওয়া যায় । এখানে গাড়ি পার্কিংয়ের সুব্যবস্থা রয়েছে । যারা ঢাকা বা চট্টগ্রাম থেকে সার্ভিস বাসে করে আসবেন তাদের তবলছড়িতে নেমে অটোরিক্সাযোগে রিজার্ভ করে (ভাড়ার পরিমাণ আনুমানিক ৮০-১০০/-) যেতে হবে । দূরালাপনী : ০৩৫১-৬২১২৬, ৬১০৪৬

উপজাতীয় যাদুঘর

রাঙ্গামাটি শহরের প্রবেশ দ্বারে সহজেই দৃষ্টি কাড়ে যে স্থাপত্যটি সেটিই উপজাতীয় যাদুঘর । ১৯৭৮ খ্রিস্টাব্দে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ইনটিটিউট প্রতিষ্ঠালগ্নে এতদঞ্চলের বিভিন্ন জাতিসত্তার নৃতাত্ত্বিক নিদর্শন সামগ্রী নিয়ে সীমিত পরিসরে এ যাদুঘরের যাত্রা শুরু হয় । ২০০৩ খ্রিস্টাব্দে নতুন ভবন নির্মিত হলে তা আরো সমৃদ্ধ হয় । এ যাদুঘরের পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত জাতিসত্তাসমূহের ঐতিহ্যবাহী অলংকার, পোষাক-পরিচ্ছদ, বাদ্যযন্ত্র, ব্যবহার্য তৈজষপত্র, অস্ত্র-শস্ত্র, প্রাচীন ধর্মীয় গ্রন্থ, পুঁতিপত্র,  তৈলচিত্র ও উপজাতীয় জীবনধারার বিভিন্ন আলোকচিত্র রয়েছে । এসব সংগ্রহ দেখে জাতিসত্তাসমূহের জীবনাচার, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি সম্পর্কে ধারণা অর্জন করা যায় ।

যাতায়াত :

যাদুঘরটি সকলের জন্য উম্মুক্ত ।

কাপ্তাই জাতীয় উদ্যান

তের হাজার একর এলাকা নিয়ে কর্ণফুরী নদীর কোল ঘেঁষে কাপ্তাই উপজেলায় গড়ে উঠেছে ‘কাপ্তাই জাতীয় উদ্যান’ । সারি সারি পাহাড় আর প্রকৃতির অপর্ব সমন্বয় ঘটেছে এখানে । এ বনভুমি বিচিত্র বন্যপ্রাণী ও পাখ-পাখালির অবাধ বিচরণ ক্ষেত্র । বর্ষাকালে মেঘ পাহাড়ের মিতালি আর শীতে কুয়াশার লুকোচুরি – প্রকৃতির এমন কারুকাজ বেশ রোমাঞ্চকর বৈকি ।

বনের ভেতর সারি সারি সেগুন, জারুল, গামার আর কড়ই গাছের মাঝ বরাবর পায়ে হেটে চলা পর্যটকদের অফুরন্তু আনন্দের খোরাক । কাপ্তাই জাতীয় উদ্যানে রয়েছে বন বিভাগে দু’টি বিশ্রামাগার । বিশ্রামাগারের চারপাশে নদী, পাহাড় আর সবুজের সহাবস্থান অপূর্ব সৌন্দর্যের আবহ তৈরি করছে । মূলত জীববৈচিত্র ও প্রাকৃতিক পরিবেশের সংরক্ষণ ও ‍উন্নয়ন, শিক্ষা ও গবেষণার সুযোগ সম্প্রসারণ এবং ইকো-ট্যুরিজমের জন্য সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির লক্ষ্যে কাপ্তাই জাতীয় উদ্যান প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে । রাঙ্গামাটি জেলা সদর হতে এর দূরত্ব আনুমানিক ৩৫ কিলোমিটার ।

যাতায়াত :  

উদ্যানে যেতে হলে চট্টগ্রাম হতে সরাসরি কাপ্তাই যেতে হবে ।

সুবলং ঝর্ণা

রাঙ্গামাটির সুবলং-এর পাহাড়ি ঝর্ণা ইতোমধ্যে পর্যটকদের কাছে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেছে । এসব ঝর্ণার নিমর্ল জলধারা পর্যটকদের হৃদয়ে এক ভিন্ন অনুভূতির কাঁপন তোলে । বরকল উপজেলায় ছোট-বড় ৮টি ঝর্ণা রয়েছে । তার মধ্যে ভরা বর্ষা মৌসুমে মূল ঝর্ণার জলধারা প্রায় ৩০০ ফুট উচু থেকে নীচে আচড়ে পড়ে এবং অপূর্ব সুরের মুর্ছনায় পর্যটকদের সযতনে মুগ্ধ করে । এ অপরূপ দৃশ্য সচক্ষে না দেখলে কল্পনায় সে ছবি আঁকা কী সম্ভব? বর্তমানে এ এলাকায় উপজেলা প্রশাসন কর্তৃক কিছু স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে । রাঙ্গামাটি সদর হতে সুবলং এর দূরত্ব মাত্র ২৫ কিলোমিটার ।

যাতায়াত : রাঙ্গামাটির রিজার্ভ বাজার, পর্যটন ঘাট ও রাঙ্গামাটি বিভিন্ন স্থান থেকে স্পীড বোট ও নৌ-যানে করে সহজেই সুবলং যাওয়া যায় । যার ভাড়ার পরিমাণ স্পীড বোট ঘন্টায় ১২০০-১৫০০/- এবং দেশীয় নৌৗযান ৪০০-৮০০/- টাকা ।

জেলা প্রশাসক বাংলো

রাঙ্গামাটি শহরের জিরো পয়েন্টে কর্ণফুলী হ্রদের গা ঘেঁষে জেলা প্রশাসক বাংলো অবস্থিত । ‍শুধু সংযোগ সড়ক ছাড়া বাংলোর তিনদিকেই ঘিরে রেখেছে হ্রদের বিস্তীর্ণ জলরাশি । জেলা সদর দপ্তর চন্দ্রঘোনা থেকে রাঙ্গামাটিতে স্থানান্তরের পর এটি ১৮৬৮ খ্র্রিস্টাব্দে নিমার্ণ করা হয় । সম্প্রতি ব্যাপক আঙ্গিকে পরিবর্তন ও উন্নয়নের ফলে বাংলো এলাকাটি আরো আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে । বাংলো পাশে ছোট টিলার উপরে রয়েছে একটি বাতিঘর ও কোচপানা নামক ছাউনী – যা একটি সুদৃশ্য সেতু দ্বারা বাংলো এলাকার সাথে সংযুক্ত । সেতু এবং ছাউনী থেকে পর্যটকরা ও দর্শনার্থীরা অকাতরে হ্রদের রূপ-সুধা অবগাহণ করতে পারে ।

যাতায়াত :

 রাঙ্গামাটি শহরের যে কোন স্থান হতে অটোরিক্সা যোগে যাওয়া যায় । তবে বাংলো এলাকায় প্রবেশের জন্য অনুমতি নিতে হবে । ভাড়ার পরিমাণ ১০০-১৫০/- টাকা । দূরালাপনী :  ০৩৫১-৬২৩০৪ (এনডিসি) ।

রোদ-বৃষ্টিতে কাপ্তাই হ্রদে

রাঙ্গামাটির বুকজুড়ে শিরা-উপশিরার মতো বয়ে চলছে কাপ্তাই হ্রদ । স্থলপথে সব জায়গায় যাওয়া সম্ভব না হলেও, রাঙ্গামাটিতে হেন কোনো জায়গা নেই যেখানে জলপথে যাওয়া যায় না । শুভলং, বরকল আর কাপ্তাইজুড়ে ছড়িয়ে থাকা এই কৃত্রিম জলাধারে বছরের এই সময়ে পানি বেড়ে যায় । কর্ণফুলী থেকে শুরু করে পাহাড়ি প্রতিটি নদী আর ঝর্ণা যেন ফুলেফেঁপে ওঠে এ সময়টায় । ঝর্ণা কিংবা হ্রদ দেখতে চাইলে বর্ষা আর শরতকালই সবচেয়ে ভালো সময় ।

মেঘে-পাহাড়ে মাখামাখি

চট্টগ্রাম থেকে রাঙ্গামাটিতে যাওয়ার সময় পাহাড় কেটে তৈরি করা উঁচু-নিচু পথে ওঠার সময় চোখ চলে যায় রাস্তার কিনার ঘেঁষা গভীর খাদ আর পাশের উঁচু পাহাড়গুলোতে । যারা প্রথমবার রাঙ্গামাটি যাবেন- তাদের কাছে যা দেখবেন তা-ই ভাল লাগবে । হঠাৎ দেখবেন, পাহাড়ের গায়ে ধোঁয়া আর ধোঁয়া । মনে হলো যেন আগুন লেগেছে । অবশ্য একটু খেয়াল করে তাকাতেই বোঝা যাবে ওগুলো ধোঁয়া নয়, মেঘ । পেঁজা তুলার মতো সাদা সাদা মেঘ ছড়িয়ে আছে গাছের ফাঁকে ফাঁকে । একই রকম দৃশ্য চোখে পড়বে পরদিন সকালেও । যেমন আমরা তখন কাপ্তাই হ্রদের বুকে এমভি শামীমে । প্রায় ৮০ জন লোকের ধারণক্ষমতার সেই লঞ্চটিতে আমরা মাত্র সাতজন । হ্রদের দুই পাড়ে গাছগাছালিতে ভরা পাহাড় । গাছের সবুজের যে এত রকম থাকতে পারে তা না দেখলে বোঝার উপায় নেই । দূর থেকে কলা আর সেগুন গাছগুলোই কেবল চিনতে পারলাম । পাহাড়ের গা বেয়ে চাষ করা হচ্ছে জুম ।

পেদা টিং টিং

চাকমা ভাষার পেদা টিং টিং-এর অর্থ করলে দাঁড়ায়-বেশি বেশি খাওয়া । হ্রদের বুকে দ্বীপের মতো পেদা টিং টিং আসলেই খাবারের জায়গা, থাকারও । বেসরকারি এই ট্যুরিস্ট ভিলেজে রাত কাটানোর জন্য আছে সুব্যবস্থা । এ রকম আরও একটি ট্যুরিস্ট ভিলেজ টুকটুক-এ গিয়ে মনটাই খারাপ হয়ে গেল । কেন যে শহরে মোটেলে উঠেছি । এত সুন্দর থাকার ব্যবস্থা ! তাও বলতে গেলে জঙ্গলের ভেতরই । এ দুটো ছাড়া আরও বেশ কয়েকটি দ্বীপে আছে থাকা-খাওয়ার সুবিধা ।

রাঙামাটি যাতায়াত

ঢাকা থেকে সরাসরি রাঙামাটি যাওয়ার বাস আছে । এ ছাড়া ট্রেনে করে চট্টগ্রাম গিয়ে সেখান থেকে বাসে রাঙামাটি যেতে পারেন ।

ঢাকার শ্যামলী, কলাবাগান, ফকিরাপুলসহ কয়েকটি জায়গা থেকে সরাসরি রাঙামাটির বাস পাওয়া যাবে । ট্রেনে অথবা বাসে যাওয়া যায় চট্টগ্রাম পর্যন্ত । সেক্ষেত্রে চট্টগ্রাম থেকে আবার বাসে করে রাঙামাটি পৌঁছাতে হবে । থাকার জায়াগা অনেক । পর্যটন মোটেল থেকে শুরু করে শহরে আছে বেশকিছু বেসরকারে মোটেল । থাকতে পারেন ট্যুরিস্ট ভিলেজেও । লঞ্চে করে কাপ্তাই ঘুরতে চাইলে চলে যান রাঙামাাটি বাজারে । ঘাটেই পেয়ে যাবেন লঞ্চ ।

রাঙামাটির টিপস

  • যদি শরতকালে যান তাহলে এই বৃষ্টি এই রোদ । সঙ্গে ছাতা রাখুন । আবার রোদের জন্য সানস্কিন লোশন , রোদচশমা সঙ্গে নিতে পারেন ।
  • ঝর্ণায় ভেজার ইচ্ছে থাকলে নিয়ে যান একাধিক কাপড় । না হলে ভেজা কাপড়েই থাকতে হবে ঘন্টার পর ঘন্টা ।
  • সঙ্গে করে অবশ্যই খাবার পানি নিয়ে যাবেন ।
  • বৃষ্টি হলে পাহাড়ে না ওঠাই ভালো । পিছলে পড়ে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে ।
  • পাহাড়ে উঠলেও বেশি ভেতরে যাবেন না । পাহাড়ী ও সেনাবাহিনীর মধ্যে এখনো কোথাও কোথাও অস্থিরতা চলে ।

রাঙামাটিতে থাকার ব্যবস্থা

সার্কিট হাউজ

ভেদাভেদী, আমানতবাগ এলাকায় অবস্থিত । এটি জেলা প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণাধীন একটি প্রতিষ্ঠান । কক্ষ সংখ্যা : ০৬; শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত : ০৪টি, সাধারণ কক্ষ : ০২টি ।

ভাড়ার পরিমাণ:  সরকারী কর্মকর্তা : ১০০/- টাকা, বেসরকারী কর্মকর্তা : ৩০০/- টাকা (পরিবর্তন যোগ্য) ।

যোগাযোগ :  নেজারত ডেপুটি কালেক্টর, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা । ফোন  :    ০৩৫১-৬২৩০৪ (অফিস),   ৬২৩০৮  (বাসা),   মোবাইল :   ০১৮২০-৩০৮৮৬৯ ।

বন বিভাগ রেস্ট হাউজ

বনরূপায় এলাকায় অবস্থিত । এটি জুম নিয়ন্ত্রণ বন বিভাগ নিয়ন্ত্রণাধীন একটি প্রতিষ্ঠান ।

কক্ষ সংখ্যা :  ০৩;  শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত : ০১টি,  সাধারণ কক্ষ : ০২টি ।

ভাড়ার পরিমাণ :  সরকারী কর্মকর্তা : ১০০/-টাকা (পরিবর্তন যোগ্য) ।

যোগাযোগ : বিভাগীয় বন কর্মকর্তা, ঝুম নিয়ন্ত্রন বন বিভাগ, রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা । ফোন : ০৩৫১-৬৩৩৫১ (অফিস),  ৬৩৩৫২ (বাসা) ।

 

 

 

কক্সবাজার ভ্রমণের সংক্ষিপ্ত গাইড জেনে নিন

 

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *