সিলেট জেলার সংক্ষিপ্ত তথ্যাবলী ও দর্শনীয় স্থানসমূহ এবং কিভাবে যাবেন

সিলেট জেলা

সিলেট উত্তর পূর্ব বাংলাদেশের একটি প্রধান শহর, একই সাথে এই শহরটি সিলেট বিভাগের বিভাগীয় শহর । এটি সিলেট জেলার অন্তর্গত । সিলেট সিটি কর্পোরেশনের আওতাধীন এলাকাই মূলত সিলেট শহর হিসাবে পরিচিত । সিলেট ২০০৯ সালের মার্চ মাসে একটি মেট্রোপলিটন শহরের মর্যাদা লাভ করে । সুরমা নদীর তীরবর্তী এই শহরটি বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ ও গুরুত্বপূর্ণ শহর । প্রাকৃতিক সৌন্দর্য মন্ডিত এ শহরটি দেশের আধ্যাত্নিক রাজধানী হিসেবে খ্যাত । জৈন্তিয়া পাহাড়ের অপরূপ দৃশ্য, জাফলং এর মনোমুগ্ধকর সৌন্দর্য, ভোলাগঞ্জের সারি সারি পাথরের স্তুপ পর্যটকদের টেনে আনে বার বার । এ শহরের বিশাল সংখ্যক লোক পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বসবাস করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা প্রেরণ করে দেশের অর্থনীতিতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে আসছে । সিলেটের পাথর, বালুর গুণগতমান দেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠ । এখানকার প্রাকৃতিক গ্যাস সারা দেশের সিংহভাগ চাহিদা পূরণ করে থাকে । স্বাধীনতা যুদ্ধে এ জেলার ভূমিকা অপরিসীম । জেনারেল এম.এ.জি ওসমানী এ জেলারই কৃতী সন্তান । হযরত শাহজালাল (রাঃ) ও হযরত শাহ পরান (রাঃ) এর পবিত্র মাজার শরীফ এ জেলায় অবস্থিত । প্রতি বছর বিপুল সংখ্যক ধর্মপ্রাণ লোক মাজার জিয়ারতের উদ্দেশ্যে আগমন করে । আসে বিপুল সংখ্যক পর্যটক । সিলেট এর স্থানীয় ভাষা “নাগরী ভাষা”র একটি বিশেষত্ব রয়েছে যা অন্য অঞ্চল থেকে পৃথক । শীত মৌসুমে সিলেটের হাওর বাওর গুলো ভরে উঠে অতিথি পাখির কলরবে ।

ইতিহাসবিদেরা বলেন বহুযুগ ধরে সিলেট একটি বাণিজ্যিক শহর হিসেবে প্রচলিত আছে । ধারণা করা হয়ে থাকে যে ‘হরিকেলা রাজত্তের’ মূল ভুখন্ড ছিলো এই সিলেট । ১৪‘শ শতকের দিকে এই অঞ্চলে ইসলামী প্রভাব দেখা যায় সূফী দার্শনিকদের আগমনের মাধ্যমে । ১৩০৩ সালে কালৈতিহাসিক মুসলিম সাধু হযরত শাহজালাল (রাঃ) এর আবির্ভাব ঘটে এই সময়ে । তিনি মক্কা থেকে দিল্লি ও ঢাকা হয়ে এই এলাকায় আসেন । তার আধ্যাতিক ক্ষমতার প্রভাবে ও তার অনুসারী ৩৬০ জনের মাধ্যমে আরো অনেকেই ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে । পরবর্তীতে তা দেশের অন্যত্র ও ছড়িয়ে পড়ে । তার দরগাহ সিলেটের একটি অন্যতম দর্শনীয় স্থান হিসেবে বিবেচিত হয় । এছাড়া হযরত শাহ পরান ও শাহ কামাল কাহাফানের সান্নিধ্যে এসেও অনেকে বৌদ্ধ ও হিন্দু ধর্ম থেকে ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত হয়েছেল । ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কম্পানি এর শাসনামলে ইন্ডিয়ান লস্করেরা এই এলাকায় তাবেদারী শাসন চালাতো । ১৭৭৮ সালে রবার্ট লিন্ডসে কে সিলেটের দায়ভার দেয়া হয় । তবে তখনকার স্থানীয় সিলেটিরা তাকে ভালোভাবে নেয় নি । ১৭৮১ সালে এই এলাকায় একটি বড় ধরনের বন্যা হয়েছিলো । এতে অসংখ্য ফসল ও পাখি মারা যায় । স্থানীয়রা এজন্য ব্রিটিশ দের দায়ী করে । এই আন্দোলনে মুখ্য ভূমিকা পালন করেন সৈয়দ হাদী ও সৈয়দ মাহাদী (পীরজাদা নামে পরিচিত) । লিন্ডসের সাথে তখন তাদের যুদ্ধ সংঘটিত হয় যাতে প্রচুর ভারতীয় তস্কর অংশ নেয় । ফলশ্রুতিতে অনেকেই সিলেট ছেড়ে লন্ডনে চলে যায় ও বসতি গড়ে তোলে । ব্রিটিশ শাসনের সময় আসাম ও সিলেট একত্রিত হয়ে আসামের অংশ ছিল । পরবর্তীতে ভারত ও পাকিস্তান আলাদা দেশ গঠনের সময় আসাম ও সিলেট আলাদা হয়ে যায় । ১৯৭১-এর যুদ্ধে জয়লাভের পর এটি পূর্ব পাকিস্তান তথ্য বাংলাদেশ-এর ভূখন্ডে পড়ে ।

সিলেট বিভাগের মোট ৪টি জেলা রয়েছে । যেমন-

  • হবিগঞ্জ
  • মৌলভীবাজার
  • সুনামগঞ্জ
  • সিলেট।

পরবর্তীতে সিলেট বিভাগের জেলাওয়ারী দর্শনীয় স্থানগুলোর সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দেয়া হচ্ছে ।

সিলেট জেলার দর্শনীয় স্থানসমূহ

  • হযরত শাহজালাল (রাঃ) ও হযরত শাহ পরান (রাঃ) এর পবিত্র মাজার শরীফ এ জেলায় অবস্থিত । প্রতি বছর বিপুল সংখ্যক ধর্মপ্রাণ লোক মাজার জিয়ারতের উদ্দেশ্যে আগমন করে । আসে বিপুল সংখ্যক পর্যটক ।
  • শীত মৌসুমে সিলেটের হাওর-বাওরগুলো ভরে উঠে অতিথি পাখির কলরবে ।
  • আলী আমজাদের ঘড়িঘর
  • এডভেঞ্চার ওয়ার্ল্ড
  • এম.এ.জি. ওসমানী মেডিকেল কলেজ
  • ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর
  • ওসমানী শিশু পার্ক
  • ক্বীন ব্রীজ
  • কানাইঘাটের লোভো-মূলাগুল
  • গাজী বুরহান উদ্দীনের মাজার
  • জাকারিয়া ‍সিটি
  • জাফলং
  • জিতু মিয়ার বাড়ী
  • টাংগুয়ার হাওর
  • ড্রিমল্যান্ড পার্ক
  • তামাবিল
  • পর্যটন মোটেল
  • পরীকুন্ড ঝর্ণা
  • পাংতুমাই
  • বিছনা কান্দি গুয়াইনঘাট
  • ভোলাগঞ্জ
  • মনিপুরী মিউজিয়াম
  • মনিপুরী রাজবাড়ি
  • মহাপ্রভু শ্রী চৈত্যনো দেবের বাড়ী
  • মাধবকুন্ড জলপ্রপাত
  • মালনী ছড়া চা বাগান
  • রাতারগুল
  • রাতারগুল সোয়াম্প ফরেস্ট
  • লাক্কাতুরা চা বাগান
  • লালাখাল
  • লোভাছড়া
  • শাহ পরাণের মাজার
  • শাহজালাল বিঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
  • শাহী ঈদগাহ
  • সাতছড়ি উদ্যান
  • সিলেটী নাগরী লিপি
  • সৈয়দপুর গ্রাম
  • সৈয়দবাড়ী টুলটিকর
  • হাকালুকি হাওপ
  • হাছন রাজার মিউজিয়াম
  • হাম হাম জলপ্রপাত
  • হারং হুরং

   

সিলেট বেড়ানো সম্পকির্ত গুরুত্বপূর্ণ তথ্যাবলী

সিলেটের সবগুলো জায়গা মনের মতো করে দেখার জন্য আপনার কমপক্ষে ৭দিন সময় ব্যয় করতে হবে । নাগরিক ব্যস্ত জীবনে এতটা সময় দেয়া আমাদের অনেকের পক্ষেই সম্ভব হয়ে ওঠে না । আবার বেড়াতে গিয়ে এটা দেখা হলো না ওটা দেখা হলো না  এমন আফসোস নিয়ে ঘরে ফেরাও অস্বস্তিকর । বিশেষ করে পরিবারের ছোটরা বেড়াতে গেলে সবকিছু দেখতে চায় । এ কারণে সিলেটের বিভিন্ন অঞ্চল বেড়ানোর একটি ছোট মানের প্যাকেজ ট্যুর তৈরি করে দেয়া হলো আপনাদের জন্য । দেখুন পছন্দ হয় কিনা ।

  • কোন ছাইয়া পাবলিকদের দলে ভিড়াবেন না, মনে রাখবেন, একজন স্বার্থপর ট্যুর মেম্বার আপনার স্বাধের ট্যুরের ১২টা বাজায় ফেলতে পারে ।
  • ট্যুরে যাবেন তো হালকা ড্রেস পরার চেষ্টা করুন । ভারি ড্রেসে আপনি সহজে মুভ করতে পারবেন না ।
  • খুব কড়া মেকআপ নিবেন না, অনেক উষ্ণ আবহাওয়ার কারণে অতিরিক্ত মেকআপ আপনার চেহারাটারকে অপ্রীতির বানিয়ে তুলতে পারে ।
  • অনুমতি না নেওয়া থাকলে চা বাগানের বেশি ভিতরে ঢোকা উচিত না ।
  • সিলেটের স্থানীয় লোকজন অতিথিপরায়ণ কিন্তু তাদের সাথে কারণে বা অকারণে তর্কাতর্কি না করাটা উত্তম ।
  • উগ্র বা অশালীন ড্রেস পরা উচিত না সিলেটে, মনে রাখবেন আপনি যাচ্ছেন ‘বার আওলিয়ার মাজারের শহরে’ । তাই সবসময় ভদ্রতা বজায় রাখুন ।
  • মাজারে যাবেন কিন্তু লক্ষ রাখবেন আপনার সব ভক্তি যেন আল্লাহর প্রতিই থাকে । সব আল্লাহর ইচ্ছায় হয়, মাজারে গিয়ে মাথা ঠেকানো উচিত নয় ।
  • জাফলং দেখার আগে মাধবকুন্ড দেখা উচিত বলে আমি মনে করি । জাফলং দেখবেন শেষ দিন, যখন ফিরবেন তখন যেন চোখে জাফলং ভেসে থাকে ।
  • জাফলং যান আর মাধবকুন্ড যেখানেই যান, পানিতে নামার প্রস্তুতি নিয়ে যাবেন । কারণ, ওখানকার পরিবেশ আপনাকে হাতছানি দিয়ে ডাকবে পানিতে নামার জন্য । এছাড়াও ভিজে যাবার সম্ভাবনা আছে পানিতে । তাই কাপড় চোপড় সাথে রাখবেন ।
  • সীমান্ত এলাকার কাছাকাছি না যাওয়াই উত্তম । (তথ্যসূত্র : ইন্টারনেট) ।

 ঢাকা-সিলেট যাতায়াত

ঢাকা থেকে সিলেটের দূরত্ব ২৪৪কি.মি. ভাড়া এসি ৮০০, নন এসি ৪২০ টাকা । মনে রাখতে হবে, এই ভাড়া পরিবর্তনযোগ্য । প্রয়োজনে ফোন করে বর্তমানের ভাড়া সম্পর্কে জেনে নিন ।

ঢাকার সায়েদাবাদ, কমলাপুর, কল্যানপুর সহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে দিনে রাতে বিভিন্ন পরিবহনের অসংখ্য বাস এই রুটে চলাচল করে । এই রুটে এসি ও নন এসি দুই ধরনের বাসই রয়েছে । এসি বাসগুলোর মধ্যে রয়েয়ে গ্রীণ লাইন, আল মোবারাকা সোহাগ, সৌদিয়া ও এস.আলম । আর নন এসি বাসগুলোর মধ্যে রয়েছে শ্যামলী পরিবহন, হানিফ পরিবহন, মামুন, ইউনিক পরিবহন । বাংলাদেশ রেলওয়ের ইন্টারসিটি ট্রেন আছে ৮টি । কালানি এক্সপ্রেস (বিকেল ৩টা),  পারাবত এক্সপ্রেস (সকাল ৬টা ৪০মি),  উপবন এক্সপ্রেস (রাত ৯টা ৫০মি),  জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস (দুপুর ১২টা) । এর মধ্যে পারাবত মঙ্গলবার এবং উপবন বুধআর বন্ধ থাকে । অন্য দুইটি সপ্তাহে ৭দিনই চলে । এ ছাড়াও একটি মেইল ট্রেন আছে সুরমা মেইল নামের । তবে যাবার আগে অবশ্যই ট্রেনের সময়সূচী সম্পর্কে জেনে নিন রেলওয়ে এনকোয়ারি থেকে । কারণ, রেলের সময়সূচী মাঝে মাঝেই বদল করা হয়ে থাকে । ট্রেনে গেলে রাত ৯.৫০ এর উপবন এক্সপ্রেসে জাওয়াটাই সব থেকে ভালো কারণ আপনার যেতে সকাল হয়ে যাবে আর আপনি যদি রাতে ট্রেনে ঘুমিয়ে নিন তাহলে সকালে ট্রেন থেকে নেমেই আপনার ভ্রমণ শুরু করতে পারেন আর সময় লাগবে ৭-৮ ঘন্টা ।

ট্রেন এর টিকেট এর দাম (অবশ্যই পরিবর্তনযোগ্য) :

 এসি বার্থ্ ৬৯৮ টাকা,  এসি সিট ৪৬০ টাকা,  ফাস্ট ক্লাস বার্থ ৪২৫ টাকা,  ফাস্ট ক্লাস সিট ২৭০ টাকা,  ‍স্নিগ্ধা ৪৬০ টাকা,  শোভন চেয়ার ১৮০ টাকা,  শোভন ১৫০ টাকা,  সুলভ ৯৫ টাকা । এই ট্রেন ভাড়াও পরিবর্তন যোগ্য । বর্তমানের ভাড়া ফোন করে জেনে নিন ।

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *