আজমল সাহেব চুপ করলেন। মিসির আলি গভীর মনোযোগে ছবি দেখছেন। আজমল সাহেবের কথাই সত্যি হয়েছে। খুনি-ভাই পুলিশ-ভাইযের হাতে মারা গিয়েছে। শেষ দৃশ্যে পুলিশ-ভাইয়ের সঙ্গে মেয়েটির বিবাহ। বিয়ের পর স্বামী-স্ত্রী খুনি-ভাইয়ের বিশাল একটা অয়েল পেইনটিংয়ের সামনে দাঁড়িয়েছে। দুজনের চোখেই পানি। বিস্ময়কর ব্যাপার হচ্ছে অয়েল পেইনটিংয়ের চোখেও অশ্রু টলমল করছে।
দর্শকদের মধ্যে রেবুর চোখেও পানি। শুধু আজমল সাহেবের মুখভর্তি হাসি। তিনি মিসির আলির দিকে ঝুঁকে এসে বললেন, বলেছিলাম না ফর্মুলা মতো কাহিনী শেষ হবে! মিসির আলি বললেন, তাই দেখলাম। আজ উঠি। ছাতা নিয়ে যান। বাইরে এখনো বৃষ্টি হচ্ছে।মিসির আলি ছাতা হাতে নিলেন। আজমল সাহেব বললেন, কাজের ছেলেটাকে পাঠাচ্ছি। তার হাতে ছাতাটা দিয়ে দেবেন।
আপনি যে মানুষ, দেখা যাবে ঘরের বাইরে ছাতা রেখে ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিলেন। ভালো কথা, আগামী বিষ্যুদবার রাতটা ফ্রি রাখবেন। আমার পীর ভাই আসবেন। হালকা-জিকির হবে। দেয়া করা হবে। পীর ভাই কোরানে হাফেজ। তাঁর ক্ষমতা মারাত্মক।কী ক্ষমতা? বাতেনি ক্ষমতা। এইসব আপনারা বুঝবেন না। সায়েন্স দিয়ে এই জিনিস বোঝা যায় না। পীর ভাইকে আমি আপনার সঙ্গে পরিচয় কবিয়ে দিব। ঠিক আছে?
মিসির আলি নিজের ঘরে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে তিনটা ঘটনা ঘটল। বৃষ্টি থেমে গেল, ইলেকট্রসিটি চলে এল এবং মিসির আলির ভয় করতে লাগল। তাঁর মনে হল, কেউ একজন বাড়িতে হাঁটাইটি করছে। এরকম মনে করার কোনোই কারণ নেই। যদি ঘর অন্ধকার থাকত তা হলে ভয় পাওয়ার ব্যাপারটার ব্যাখ্যা দাঁড় করানো যেত। ঘরে আলো আছে! মিসির আলি যে দুর্বল মনের মানুষ তাও না। অশরীরী কোনো কিছুতেই তাঁর বিশ্বাস নেই। তা হলে ভয়টা তিনি পাচ্ছেন কেন?
হরতন ইশকাপন পর্ব – ৪
রান্নাঘরে খুঁটিখাট খুঁটিখাট শব্দ হচ্ছে। কেউ কি আছে রান্নাঘরে? রান্নাঘরে বাতি জুলছে না। অশরীরী কেউ অন্ধকারে রান্নাবান্না করছে নাকি? মিসির আলি রান্নাঘরে ঢুকলেন। বাতি জ্বালালেন। কেউ নেই। তিনি বাতি জ্বালিয়ে রেখেই শোবার ঘরে ঢুকলেন। মনে হচ্ছে আজ রাতে ঘুম আসবে না। ঘুম যখন আসবেই না। শুধু শুধু বিছানায় গড়াগড়ি করার কোনো অর্থ হয় না। তার চেয়ে বিছানায় পা তুলে বসে জটিল কোনো বিষয় নিয়ে চিন্তা করা যায়।
চিন্তা করার মতো জটিল বিষয় এই মুহুর্তে তার কাছে আছে। একটু আগে যে ছবিটা দেখেছেন সেই ছবির একটা বিষয়ে বড় ধরনের খটকা তাঁর মনে তৈরি হয়েছে। ছবির গুণ্ডা-ভাইট যখন গুলি খেল তখন তিনি দেখেছেন গুণ্ডাটার হাওয়াই শার্টের তিন নম্বর বোতামটা নেই। অথচ গুণ্ডাটা যখন তার প্রেমিকার কোলে মাথা রেখে মারা যাচ্ছে তখন দেখা গেল।তিন নাম্বার বোতামটা ঠিকই আছে। এটা কী করে সম্ভব?
গুলি খাওয়া গুণ্ডাটার সেবা না করে প্রেমিকা মেয়েটি কি শার্টের বোতাম লাগিয়েছে? খুবই অবিশ্বাস্য ব্যাপার। তবে যদি এমন কোনো লোকজ বিশ্বাস থাকে যে মৃত্যুপথযাত্রীর শার্টের বোতাম না থাকা অলক্ষণ, তা হলে একটা ব্যাখ্যা দাঁড় করা যায়। মেয়েটা অলক্ষণের কথা বিবেচনা করে কোনো এক ফাঁকে শার্টে বোতাম লাগিয়েছে। মৃত্যুপথযাত্রীদের নিয়ে অনেক কুসংস্কার কাজ করে।
যেমন মৃত্যুপথযাত্রীর ঘরে কোনো পাখি ঢুকে পড়া বিরাট অলক্ষণ। গ্লাস থেকে পানি পড়ে যাওয়া অলক্ষণ। জুতা বা স্যান্ডেল উল্টে যাওযা গুপ্তফণ।শার্টের বোতাম না থাকাও হয়তো অলক্ষণ।মিসির আলি গভীর চিন্তায় মগ্ন হলেন।মেয়ের নাম আঁখিতারা।নেত্রকোনার অতি অজপাড়াগাঁর মেয়ের জন্য খুবই আধুনিক নাম।
বয়স দশ থেকে এগারো। শশকের মতো ভীত চোখ। মিসির আলি ছোট্ট করে নিশ্বাস ফেললেন। তার কাছে মনে হলো মেয়েটি রবীন্দ্ৰনাথের ‘পোস্টমাস্টার’-এর মেয়েটির চেয়েও অসহায়। ‘পোস্টমাস্টার’-এর মেয়ে ছিল নিজের গ্রামে। এই মেয়েটি হঠাৎ উঠে এসেছে অতি আধুনিক এক শহরে।
হরতন ইশকাপন পর্ব – ৪
আজমল সাহেব মিসির মেয়েটির ভয় কাটানো দরকার। এমন কি তাকে বলা দরকার যা শোনামাত্র তার ভয় কেটে যায়। এই ঘর তার নিজের ঘর বলে মনে হতে থাকে। মিসির আলি মেয়েটির দিকে তাকিয়ে বললেন, ভয় লাগছে গো মা? মেয়েটি সামান্য চমকাল।
মিসির আলি তার চোখ দেখেই বুঝলেন মেয়েটির প্ৰাথমিক ভয় কেটে গেছে। মিসির আলি বললেন, আঁখিতারা, শোনো, তোমার যখনই দেশের বাড়িতে চলে যেতে ইচ্ছা করবে। আমি তখনই তোমাকে পাঠিয়ে দেব। এখন কি তোমার বাবা-মার কাছে চলে যেতে ইচ্ছা করছে?
আঁখিতারা হ্যাঁ-সূচক মাথা নাড়ল।মিসির আলি বললেন, আচ্ছা, আজ সন্ধ্যার মধ্যে তোমাকে দেশে পাঠিয়ে দেব। আজমল সাহেবকে বলে এর মধ্যে একজন কাউকে জোগাড় করব যে তোমাকে দেশের বাড়িতে দিয়ে আসবে। কেউ মনে কষ্ট নিয়ে আমার সামনে হাঁটাহাঁটি করলে আমার ভালো লাগে না। আঁখিতারা, তুমি কি ডাল-ভাত এইসব রাধতে পারো?
পারি।আমার খুবই ক্ষিদে লেগেছে। গ্যাসের চুলা কীভাবে ধরায় তোমাকে দেখিয়ে দেই। তুমি আমাদের দু’জনের জন্য ডাল-ভাত রান্না করে ফেলো।আঁখিতারা হ্যাসূচক ভঙ্গিতে ঘাড় কাত করল।ডিম রান্না করতে পারে? পারি।একসেলেন্ট, ঘরে ডিম আছে। ডিমের ঝোল রান্না করো। আজ সকাল থেকে কেন জানি ডিমের ঝোল খেতে ইচ্ছা করছে।মেয়েটি তার ছোট্ট পুটলি এক পাশে রেখে রান্না শুরু করল।
মিসির আলি লক্ষ্য করলেন মেয়েটির চোখ চাপা আগ্রহে চকচক করছে। তার মুখ থেকে শঙ্কার ভাব অনেকটাই চলে গেছে। বেচারির বোধহয় খুব ক্ষিদে লেগেছে। রান্নার আগ্রহটা সেই কারণে।দুপুরে মিসির আলি তাকে নিয়ে খেতে বসলেন। বেগুন দিয়ে ডিমের ঝোল রান্না হয়েছে। তরকারির রঙ দেখে মনে হচ্ছে খেতে ভালো হয়েছে। আঁখিতারা একটা মাত্র ডিম রান্না করেছে। মিসির আলি বললেন, ডিম একটা কেন?
হরতন ইশকাপন পর্ব – ৪
আঁখিতারা ভয়ে ভয়ে বলল, আপনার জন্য রানছি।তুমি ডিম খাও না? আঁখিতারা নিচু গলায় বলল, খাই।মিসির আলি ডিমটা সমান করে দু’ভাগ করে একটি ভাগ মেয়েটির থালায় তুলে দিলেন। এবং গভীর বেদনায় লক্ষ করলেন মেয়েটির চোখে পানি এসে গেছে। বোধ হয় বেচারীকে কেউ কোনোদিন আদর করে পাতে কিছু তুলে দেয়নি।
আঁখিতারা, তোমার রান্না খুব ভালো হয়েছে। তুমি আরাম করে খাও। খেয়ে বিশ্রাম করো। সন্ধ্যাবেলা আমি তোমাকে তোমার দেশে পাঠিয়ে দেব। মেয়েটি হ্যাঁ-সূচক মাথা নাড়ল।দুপুরের খাবারের পর কিছুক্ষণ বিছানায় শুয়ে থাকা মিসির আলির অনেক দিনের অভ্যাস। আগে ঘুমাতেন না। ইদানীং ঘুম এসে যায়। ঘুম ভাঙার পর খুবই অস্বস্তি লাগে। কিছুদিন থেকে তিনি চেষ্টা করছেন দুপুরে না ঘুমাতে। এই সময় জটিল ধরনের কিছু বই নিয়ে বসেন।
বইয়ের জটিলতার ভেতর একবার ঢুকে পড়লে ঘুম কেটে যায়। ঘুম কাটানোর ওষুধ হিসেবে সায়েন্স অ্যান্ড প্যারাডক্স বইটা খুব কাজ করছে। আজও তাই করেছেন। তবে আজ সায়েন্স অ্যান্ড প্যারাডক্স বইটির সঙ্গে কুরিয়ার সার্ভিসে আসা মফস্বলের একটা পত্রিকাও আছে। প্রেরকের নাম–মনসুর। মেন্টাল ম্যাজিকের যুবক। মিসির আলি ঠিক করেছেন বিজ্ঞানের বই পড়ার পর ঘুম যখন পুরোপুরি কাটবে তখন পত্রিকা নেড়েচেড়ে দেখবেন।আপনার মাথায় তেল দিয়া দিব?
মিসির আলি ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালেন। আঁখিতারা সঙ্কুচির ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে আছে। তিনি বললেন, লাগবে না। আমি মাথায় তেল দেই না।আঁখিতারা বলল, আমি যাব না। আমি আপনার সাথে থাকব।আচ্ছা, ঠিক আছে।আমি কোন ঘরে থাকিব? মিসির আলি আঙুল দিয়ে ঘর দেখিয়ে দিলেন। আঁখিতারা বলল, আপনারে আমি কী ডাকব?
হরতন ইশকাপন পর্ব – ৪
তোমার যা ডাকতে ইচ্ছা করে ডাকবে। কোনো অসুবিধা নেই।বড় বাবা ডাকি? এত কিছু থাকতে বড় বাবা ডাকতে চাও কেন? মেয়েটা জবাব দিল না। পায়ের বুড়ো আঙুল দিয়ে মেঝেতে নকশা করতে লাগল। মিসির আলি বললেন, বড় বাবা ডাকটা খারাপ না; ডাকো, বড় বাবা ডাকো।আঁখিতারা সামনে থেকে চলে গেল। মিসির আলি কুরিয়ার সার্ভিসে আসা প্যাকেট খুললেন। মফস্বল পত্রিকা। পত্রিকার নাম সোনার বাংলা। প্রথম পৃষ্ঠাতেই লেখা অনিয়মিত পাক্ষিক।
পত্রিকার মালিকই যেখানে ঘোষণা করেন। অনিয়মিত তখন বোঝা যায়। এই পাক্ষিক হঠাৎ হঠাৎ বের হয়। ছয় পাতার পত্রিকার তিন পাতাই সাহিত্যে নিবেদন। কবিতা, গল্প, রম্যরচনা। এক পাতা সিনেমা সংক্রান্তহলিউড-বিচিত্রা, ঢালিউড-বিচিত্রা। পাতাটি সচিত্ৰ। নায়ক-নায়িকাদের ছবি আছে। কোনো ছবি দেখেই বোঝার উপায় নেই ছবিটা কার। পত্রিকার প্রথম পাড়ার লিড নিউজ–
স্বামী-পুত্ৰ হস্তারক স্ত্রী
নিজস্ব সংবাদদাতা জানাচ্ছেন, রাবেয়া খন্দকার ওরফে রেবু হিংসার বশবতী হয়ে স্বামী-পুত্ৰকে হত্যা করেছে। হিংসার কারণ রেবুর স্বামীর আপনি চাচীর সঙ্গে অবৈধ প্ৰেম। নিজস্ব সংবাদদাতা অবৈধ প্রেমের অংশটি যত্ন করে লিখেছেন। ভাতিজা নিশিরাতে চাচীর সঙ্গে কোথায় কোথায় মিলিত হতেন তার বিবরণ আছে। দীর্ঘ দুই কলামের সংবাদ। সংবাদের শেষে লেখা– ‘আগামী সংখ্যায়। চাচী-ভাতিজার অবৈধ প্ৰণয় বিষয়ে আরো বিস্তারিতভাবে লেখা হইবে।’
ছয় পাতার পুরো কাগজটা মিসির আলি আগ্রহ নিয়ে পড়লেন। সাহিত্য অংশও বাদ দিলেন না। চৌধুরী খালেকুজ্জামান মিয়ার লেখা ছোটগল্প পড়লেন। একটি রম্যরচনা পড়লেন। লেখক সেখানে ছদ্মনাম নিয়েছেন চৌখামি। এই চৌখামি যে চৌধুরী খালেকুজ্জামান সেটা বোঝা যাচ্ছে। ইনিই পত্রিকার সম্পাদক এবং মুদ্রাকর।সোনার বাংলা পত্রিকার সঙ্গে একটি হাতে লেখা চিঠিও আছে। চিঠিটি লিখেছে মনসুর।
হরতন ইশকাপন পর্ব – ৪
পরম শ্রদ্ধাভাজন
জনাব মিসির আলি। সোনার বাংলা পত্রিকাটা পাঠালাম। রেবুর খবরটা প্ৰথম পাতায় আছে। আপনি খোঁজ নিলেই জানতে পারবেন রাবেয়া খোন্দকারই রেবু।মেয়েটি অতি ভয়ানক। আপনার সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠতা আছে। আমি ভয় পাচ্ছি। সে আপনার কোনো ক্ষতি না করে ফেলে।আমি আপনাকে অত্যন্ত পছন্দ করি। মানুষকে বেশি পছন্দ করা ঠিক না। হয়তোবা বেশি পছন্দের কারণেই আপনার সঙ্গে কখনো আমার সম্পর্ক হবে না।
আপনাকে সাবধান করতে চাচ্ছি। সাবধান হোন।ঐদিন মেন্টাল ম্যাজিকের নাম করে আপনাকে বিভ্রান্ত করতে চেষ্টা করেছি।এই ক্ষমতা আমার সত্যি সত্যি আছে। বিশেষ বিশেষ সময়ে সেটা বোঝা যায়। যদি কখনো বিশেষ সময় এসে উপস্থিত হয় আপনাকে ক্ষমতার পরিচয় দিয়ে যাব। তখন হয়তোবা আপনি আমার আগের
অপরাধ ক্ষমা করবেন।
ইতি
মনসুর।
চিঠিতে তারিখ নেই। ঠিকানা নেই। কোনো বানান ভুল নেই। পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে এই চিঠি আগে একবার ড্রাফট করা হয়েছে, তারপর সেই ড্রাফট দেখে দেখে কপি করা হয়েছে। সরাসরি লেখা চিঠি এবং কপি করা চিঠি সহজেই বোঝা যায়। কপি করার সময় মূল চিঠি পড়তে হয়। একটি লাইন পড়ে শেষ করে লেখায় আসতে হয়। যে কারণেই ড্রাফট করা চিঠির প্রতি লাইনের শুরুর শব্দটা লেখা হয় সাবধানে।
মিসির আলি ভুরু কুঁচকালেন। মনসুর নামের ছেলেটা ড্রাফট করার পর তাকে চিঠি লিখছে নাকি সরাসরি লিখছে এটা কোনোই গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার না। তাকে নিয়ে গবেষণা করার মতো কিছু ঘটেনি। তবুও তার বিষয়ে জানা তথ্যগুলি মাথার ভিতরে সাজিয়ে রাখতে দোষ নেই।
হরতন ইশকাপন পর্ব – ৪
নাম : মনসুর (নকল নাম হওয়ার সম্ভাবনা!)
স্বভাব : ???
স্বভাব সম্পর্কে এখনো পরিষ্কার কোনো ধারণা তৈরি হয় নি। সময় লাগবে। অনেক সময় লাগবে। মিসির আলি চোখ বন্ধ করলেন। পাশের ঘর থেকে খুটাখুটি শব্দ হচ্ছে। আঁখিতারা নামের মেয়েটা হয়তো নিজের ঘর গুছাচ্ছে। ঝাড়ুর শব্দও পাওয়া গেল। মনসুর প্রসঙ্গ থাক। মেয়েটাকে নিয়ে কিছুক্ষণ ভাবা যাক। মেয়েটা কেমন, কোন ধরনের পরিবার থেকে এসেছে–এইসব।
পরে মিলিয়ে দেখা যাবে তাঁর অনুমান কতটুকু শুদ্ধ। এটা এক ধরনের খেলা। মানুষ দুটা সময়ে খেলতে পছন্দ করে। শৈশবে এবং বৃদ্ধ বয়সে। শৈশবে খেলার সঙ্গী জুটে যায়। বৃদ্ধ বয়সে কাউকে পাওয়া যায় না। তখন খেলতে হয় নিজের মনের সঙ্গে।আঁখিতারার বিষয়ে মিসির আলি অনুমান করতে শুরু করলেন—
১. মেয়েটা দুঃখী। (এই বিষয়টা অনুমান করতে চিন্তাশক্তির প্রয়োজন হয় না। যে মেয়ে গ্রাম থেকে শহরে কাজ করতে এসেছে সে দুঃখী হবেই।)
২. মেয়েটির বাবা নেই। (এই অনুমানও সহজ অনুমান। বাবা জীবিত অবস্থায় এমন ফুটফুটে একটা মেয়েকে শহরে কাজ করতে পাঠাবেন না।)
৩. মেয়েটি তার নিজের সংসারে বাস করে না। আশ্রিত। (একমাত্র আশ্রিতরাই সামান্য আদরে অভিভূত হয়। তিনি অর্ধেকটা ডিম তার পাতে তুলে দিয়েছেন। এতেই তার চোখে পানি এসে গেছে। যে মেয়ে নিজের সংসারে থাকে। সে আব্দর পেয়ে অভ্যস্ত।)
মিসির আলির চিন্তা বাধাগ্ৰস্ত হয়েছে। আঁখিতারা সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। সে ঠিক আগের মতো করেই বলল, মাথায় তেল দিয়া দেই?
Read more