হুমায়ূন আহমেদের লেখা মীরার গ্রামের বাড়ি খন্ড-১৮

দেলােয়ার পুকুর থেকে উঠে এল । সে শীতে হি হি করে কাপছে। সারা শরীর কাদায়-শ্যাওলায় মাখামাখি । মালকোঁচা মেরে লুঙ্গিপরা। পা ভর্তি লােম । দেখতে বিশ্রী লাগছে।

মীরার গ্রামের বাড়ি 

দেলােয়ার লুঙ্গি ছেড়ে দিল। তার মুখ হাসি-হাসি। তাকে দেখে মনে হচ্ছে পানিতে নামা খুব আনন্দের ব্যাপার এবং শীতে থরথর করে কাঁপাও আনন্দময় । 

শেফা বলল, দেলােয়ার ভাই, মাছের মন্ত্র কি সত্যি কাজ করে? “অবশ্যই কাজ করে। আজই প্রমাণ পাবে।’ 

মন্ত্র পড়ার সময় যদি কোনাে ভুল হয় তখন কী করব?’ তারকা । “তখন আবার পড়াবে।” 

মন্ত্রের ব্যাপারটা বড় আপাকে বলবেন না । বড় আপা শুনলে খুব হাসাহাসি 

“ঠিক আছে আপনাকে বলে ফেলি । আমার মোট টাকা হল ছয় হাজার সাত শ পচিশ ।” 

অনেক টাকা। 

কী গিফট আপনার পছন্দ আমাকে বলবেন— আমি ঢাকায় গিয়েই আপনাকে কিনে পাঠাব। আর মুখে বলতে যদি লজ্জা লাগে তাহলে কাগজে লিখে দেবেন।’ 

না কাউকে বলব না।’ “ছিপ ফেলবেন কখন? 

পরে ফেলব। পানিতে ‘লারা পড়েছে। পানি ঠাণ্ডা হােক। পানি ঠাণ্ডা হতে কতক্ষণ লাগবে?” “ঘণ্টা দুই লাগবে। তােমার কাজকর্ম থাকলে সেরে আস।’ 

“না আমার কোনো কাজ নেই, আমি এখানেই থাকব। ছিপ ফেলার পর থেকে আপনি কিন্তু আমার সঙ্গে থাকবেন। কীভাবে ছিপে হ্যাচকা টান দিতে হয় আমি জানি না।’ 

মীরার গ্রামের বাড়ি খন্ড-১৮

কোনাে চিন্তা নাই আমি থাকল । 

দেলােয়ার ভাই আমি আপনাকে একটা গিফট দিতে চাই, কী গিফট দেব বলুনতো। কী আপনার পছন্দ?” “আমার গিফট লাগবে না। 

লাগবে। অবশ্যই লাগবে। আপনার সবচে পছন্দের জিনিস কী আমাকে বলবেন। আমার নিজের অনেক লাে টাকা আছে। ঈদের সময় সালাম করে আমি যত টাকা পাই সব জমিয়ে রাখি।’ 

কত টাকা মেহে?” 

কত জমেছে সেটা বলব না। জমা টাকার পরিমাণ বললে জমা টাকা কমে যায়। ঢাকার ট্রর চোখ লাগেতাে এই জন্যে কমে যায়।” । তাহলে বলার দরকার নেই। এ ই “আপনিতাে দেখি শীতে কাঁপছেন। যান ঘরে গিয়ে কাপড় বদলান। আর শুনুন দেলোয়ার ভাই, আমার জন্যে যে আপনি এত কষ্ট করেছেন For that ITIany thanks, অনেক অনেক ধন্যবাদ। 

“আগে মাছ ধরা সড়ক তারপর বনবিদ লিও।’ 

মাছ ধরা না পড়লেও ধন্যবাদ।’ 

শেফা প্রবল উত্তেজনা অনুভব করছে। সে নিশ্চিত যে আজ মাছ ধরা পড়ালে। নে কুরপাড়ে বসে ব্রইল । তার হাতে মাখা কাগজ। হিল ফেলতে লার আছে-এর মধ্যে মন্ত্রটা মুখস্থ করে ফেলতে হবে। মাছ যখন টোপ খাবে তখন হৈচৈ এর মধ্যে কাগজ বের করে সে হয়তো মন্ত্র পড়তেই ভুলে যাবে। অনুগ্রহ করে রাখাই ভালো। 

মীরাকে আসতে দেখে শেফা মন্ত্রের কাগজ হাতে লুকিয়ে ফেলল। কামিজে পকেট থাকলে ভালাে হত। কাগজটা কামিজের পকেটে লুকিয়ে ফেলতে । এখন রাখতে হচ্ছে হাতে। মেয়েদের ড্রেসে পকেট থাকে না কেন ভেবে তার সামান্য মেজাজ খারাপ হচ্ছে। সবার কি ধারণা ছেলেদেরই শুধু পকেটে রাখার জিনিস থাকবে, মেয়েদের থাকবে না? মেয়েদের শাড়িতেও আসলে পকেটের সিস্টেম থাকা দরকার। 

মীরার গ্রামের বাড়ি খন্ড-১৮

মীরা এসে বেতের চেয়ারে বসতে বসতে বলল, এখনাে পুকুরপাড়ে। শেফা বলল, ই। 

শেফার একটু মন খারাপ লাগছে কারণ মীরাকে অত সুন্দর লাগছে। খয়েরি রঙের মতাে পচা রঙের একটা শাড়িতে মানুষকে এত সুন্দর লাগে? আপার প্রতি একটু ঈর্ষা ভাব হচ্ছে। এটা খারাপ। নিজের বােনকে ঈর্ষা করতে নেই। শেফার মনে হল তার মনটাই ছােট। বাংলাদেশে তার মতো ছােটমনের মেয়ে বােধ হয় কেউ নেই। যেভাবেই হােক মনটা বড় করতে হবে। 

‘আপা তােমাকে অপ্সরীর মতাে লাগছে।’ 

মীরা উঠে দাড়াল। শেফা মনে মনে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলল । আপা চলে গেলেই ভালাে। সে মন্ত্রটা মুখস্থ করে ফেলতে হবে— 

আয় জলি বায় লি । 

জলির নামে মন্ত্র বলি। জলিটা কী? জল জলের নামে মন্ত্র বলা হচ্ছে? আচ্ছা এই মন্ত্রে যে জায়গায় মাছের কথা বলা হয়েছে সেখানে সে যদি মাছ না বলে কচ্ছপ’ বলে। তাহলে কি মাছের বদলে কচ্ছপ বলা পড়লে সে যদি বলে, মীর পীরের দোহাই লাগে। 

মীরার গ্রামের বাড়ি খন্ড-১৮

সুতার আগায় কচ্ছপ লাগে । দেলােয়ার ভাইকে জিজ্ঞেস করতে হবে এবং একদিন কচ্ছপের নাম বলে মন্ত্রের জোরটা পরীক্ষা করতে হবে। 

“কিসের মতাে লাগছে? ‘অপ্সরীর মতাে ।” “ছিঃ অন্দরীর মতাে লাগবে কেন? অঙ্গারী কী তুই জানিস? 

না। অপ্সরী কী? “অক্সারী হচ্ছে স্বর্গের প্রসটিটিউট। প্রসটিটিউট শব্দের মানে জানিস তাে?’ 

শেফা লজ্জিত ভঙ্গিতে মাথা নাড়ল। প্রসটিটিউট শব্দের মানে সে জানে । বেশ্যা শব্দের মানে জানে। খানকি মাগী শব্দের মানে ও জানে। আসলে সে বোধ হয় একটা খারাপ মেয়ে । খারাপ মেয়ে বলেই খারাপ খারাপ শব্দের মানে

 

Read More.

হুমায়ূন আহমেদের লেখা মীরার গ্রামের বাড়ি খন্ড-১৯

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *