হুমায়ূন আহমেদের লেখা মীরার গ্রামের বাড়ি খন্ড-১৯

জানে। অকারী শব্দটা এত খারাপ জানলে সে এই শব্দ কখনােই বলত না। ক্লাসের কত সুন্দরী মেয়েকে সে অপ্সরী বলেছে। ভাগ্যিস ওরাও শব্দটার আসল মানে জানে না। অপ্সরী বলতে ওরা খুশিই হয়েছে।

মীরার গ্রামের বাড়ি 

মারা বলল, তুই কি লজ্জা পেয়ে গেলি নাকি 

শেফা না-সূচক মাথা নাড়ল। যদিও সে খুবই লজ্জা পেয়েছে। | ‘মাছ মারা কখন শুরু হবে? 

“কিছুক্ষণের মধ্যেই শুরু হবে। আজ আমার ছিপে বিশাল একটা মাছ ধরা পড়বে।’ 

সে বলছে, দেলোয়ার সাহেব। “কেউ বলেনি আমি জানি। 

এক হাজার টাকা বাজি তাের ছিপে কোনাে মাছ ধরা পড়বে না।’ কত টাকা বাজি?” এক হাজার এক টাকা। যা এক টাকা বাড়িয়ে দিলাম। “আচ্ছা যাও বাজি।” । 

বাজিতে হারলে ক্যাশ দিতে হবে। তাের সঙ্গে ক্যাশ আছে তাে? 

আজহার সাহেব তার প্রিয় জায়গায় বসে আছেন। জলপাই গাছের বাঁধানাে বেনীতে। একটু আগে কোকিল ডাকছিল। কোকিলের ডাক শুনে তার মনটা খারাপ হয়েছে এই ভেবে যে দই মেয়ের কেউ তার পাশে নেই। মেয়েরা থাকলে কোকিলের ডাক শুনিয়ে দিতেন। ঢাকা শহরে পাখির ডাক মানে তাে কাকের ডাক। কোকিলের ডাক এরা তাে বােধহয় শুনেইনি। | আজহার সাহেব দেখলেন মীরা তার দিকে আসছে। ইস মেয়েটা যদি আর দশ মিনিট আগে আসত। তবে কোকিলটা আশেপাশেই আছে, আবারাে নিশ্চয়ই ডাকবে। 

মীরার গ্রামের বাড়ি খন্ড-১৯

মীরা বাবার পাশে এসে দাঁড়াল। হাসিমুখে বলল, বাবা এই জায়গাটা কি তােমার খুব পছন্দের? 

আজহার সাহেব আনন্দিত গলায় বললেন, ‘হু। মা তুই দশ মিনিট আগে এলে ভালাে হত।’ আজহার সাহেব সাধারণত মেয়েদের তুমি বলেন। তার মন যন দ্রবীভূত থাকে এখনই শুধু তুই বলেন। 

“দশ মিনিট আগে এলে কী হত। 

কোকিলের ডাক শুনিয়ে দিতাম। ঢাকা শহরে এই জিনিস কোথায় পাবি?” এ কী বলছ তুমি বাবা। সব কোকিল তো ঢাকা শহরে। Tal 

তার মানে?” st ‘ঢাকা শহর ভর্তি কাক। কোকিলদের ডিম পাড়তে হয় কাকের বাসায়। কাজেই কোকিলদের ভালাে না লাগলে ওঁ তারা এমন ঢাকা শহরে বাস করে। 

‘ভেরি গুড, বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত টাইম। পাঁচটার মধ্যে মাছ ধরা না পড়লে তুই গুণে গুণে এক হাজার এক টাকা দিবি। 

“আচ্ছা। তােমাকে এত খুশি খুশি লাগছে কেন?”

আমাকে খুশি খুশি লাগছে?”

হ্যা লাগছে। সুন্দর লাগছে আবার খুশি খুশিও লাগছে।’ ‘আমি খুশি এইজন্যেই খুশি খুশি লাগছে। যে খুশি তার চেহারায় আলাদা সৌন্দর্য চলে আসে এইজন্যে সুন্দর লাগছে। 

আজহার সাহেব বিস্মিত হয়ে বললেন, তাের কথাতে মা ফেলে দিতে পারছি না। 

“ফেলে দিও না, তোমার ব্যাগে ভরে রেখে দাও। 

মারা বাবার পাশে বসল । তার মুখ হাসি-হাসি। আজহার সাহেব মেয়েকে এমন হাসিখুশি অবস্থায় কখনো দেখেন নি। তার খুবই ভালাে লাগল। মেয়েটা কোনাে একটা সমস্যার ভেতর দিয়ে যাচ্ছিল, এখন মনে হয় সমস্যাটা কেটে গেছে। প্রথম যৌবনের সমস্যা অবশ্যি দীর্ঘস্থায়ী হয় না। হুট করে সমস্যাগুলি আসে আবার হুট করে চলে যায়। 

মীরার গ্রামের বাড়ি খন্ড-১৯

মারা। 

“আজ মনে হয় তাের মনটা খুব ভালাে। “আমার মন সব দিনই ভালো থাকে । আমি ভাব করি যে মন খারাপ। 

আচ্ছা ধর আমিই তোমাকে বললাম । ]ম যে বাবা আমি ভয়ংকর একটা অন্যায় করেছি। তখন তুমি কী করবে? আমাকে ঘৃণা করবে? 

“ঘৃণা করব কেন? পাপকে ঘৃণা করতে হয়, পাপীকে না। 

এইসব হল বই এর বড় বড় কথা। বই এর কথা পড়তে ভালাে লাগে ।। বই এর বাইরে আর ভালাে লাগে না। আমি একটা খুন করে ফেললাম তারপরও তুমি আমাকে ঘৃণা করবে না?’ – আজহার সাহেব নড়েচড়ে বসলেন। দীর্ঘ বক্তৃতার প্রস্তুতি নিয়ে বললেন, সব কিছুই নির্ভর করছে অবস্থার উপর। খুন কেন করলি, কোন অবস্থায় করলি তার উপর। নিউ ইংল্যান্ডে একটা খুনের মামলা হয়েছিল। চাক্ষুষ সাক্ষী ছিল তারপরেও খুশি বেকসুর খালাস পেয়ে গেল। মামলাটা পুরােপুরি আমার মনে নেই । যতটুকু মনে আছে তােক বলি। ভেরি ইন্টারেস্টিং। 

“প্লিজ বাবা মামলার গল্প শুরু করবে না।’ | মামলার গল্প শুনতে ভালাে লাগে না?” ‘অসহ্য লাগে বাবা। বমি এসে যায়। 

“অসহ্য লাগবে কেন? মানুষের জীবনের বিচিত্র অংশটা ধরা পড়ে কোর্টে। মানুষের চিন্তাভাবনা, কর্মকাণ্ড যে কোন পর্যায় যেতে পারে তার 

আজহার সাহেব কথা শেষ করতে পারলেন না। কোকিল ডেকে উঠল । তিনি মেয়ের দিকে তাকিয়ে মুগ্ধ গলায় বললেন, কোকিলের ডাক শুনলি? 

গত কয়েকদিন তােকে দেখে আমি খুব দুশ্চিন্তায় ছিলাম । তাের মা’কে কয়েকবার জিজ্ঞেস করেছি মীরার কী হয়েছে। 

মা কী বলেছে? কা। সে জবাব দেয়নি। পাশ কাটিয়ে গেছে।’  মীরা হাসতে হাসতে বলল, পাশ কাটানাের ব্যাপারে মা খুব ওস্তাদ। 

আজহার সাহেব সিগারেট ধরালেন। সিগারেট তিনি ছেড়ে দিয়েছেন তবে একটা প্যাকেট সব সময় সঙ্গে রাখেন—হঠাৎ হঠাৎ খুব ইচ্ছা হলে সিগারেট ধরান। এখন খুব ইচ্ছা হচ্ছে। মীরা বলল, বাবা তুমি আমাকে কতটুকু পছন্দ 

” আজহার সাহেব বললেন, এটা আবার কেমন প্রশ্ন। পছু কি দাড়িপাল্লায়। মালা যায় যে মেপে বলে দিলাম এতটুকু ছিল। পছন্ন কোয়ালিফাই করা যায়

 

Read More

হুমায়ূন আহমেদের লেখা মীরার গ্রামের বাড়ি খন্ড-২০

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *