আয়নাঘর-পর্ব-(৭)-হুমায়ূন আহমেদ

আয়নাঘর

লিলিয়ান চুপ করে রইলতাহেরের মনে হল এই মেয়ে আর কোন প্রশ্নের জবাব দেবে নামেয়েটিকে সহজ করার কোন পথও সে খুঁজে পাচ্ছে নাকি বললে সে সহজ হবে ?  লিলিয়ান তুমি কি পেট্রিফায়েড ফরেস্টটা দেখতে চাও? ঐদিন আমি যাই নি। 

আয়নাঘর

তুমি যেতে চাইলে আজ যেতে পারিসন্ধ্যায় সন্ধ্যায় চলে আসতে পারব। 

আমি আমার অ্যাপার্টমেন্টে ফিরে যাব। 

বেশ তাে ফিরে যাবেআমি তােমাকে পৌছে দেবআপনাকে পৌঁছে দিতে হবে না। 

তুমি লক্ষ্য কর নি বােধহয় বাইরে খুব ঠাণ্ডা পড়েছেএই ঠাণ্ডায় তুমি এমন পাতলা কাপড় পরে কি করে এসেছ সেও এক রহস্যতুমি আমার সঙ্গে যেতে না চাইলে একাই যাবে আমার একটা ওভারকোট আছে সেটা গায়ে চাপিয়ে চলে যেতে পারবেনাকি আমার ওভারকোটও গায়ে দেবে না? | লিলিয়ান বসলসে যে বসেছে তাতে সে নিজেও অবাক হয়েছেতার কাছে মনে হচ্ছে পুরাে ব্যাপারটা স্বপ্নে ঘটছেসে নিজের ইচ্ছেতে কিছু করছে নাযা তাকে করতে বলা হচ্ছে তাই সে করছেপুরাে ঘটনা অন্য কেউ ঘটাচ্ছেসে অন্য কেউটা কে

লিলিয়ানহুঁকফি খাবে?” 

শুনে খুশি হলামআমি কফি তৈরি করছিতুমি সহজ এবং স্বাভাবিক হতে চেষ্টা করতারপর তােমার কাছে কয়েকটা জিনিস জেনে নেবযা যা জানতে চাই তাও বলে নিচ্ছি, এক, হঠাৎ তুমি একগাদা ফুল নিয়ে আমার কাছে কেন এসেছ? দুই, আজ যে আমার জন্মদিন তাকি তুমি জান? যদি জান তাহলে কিভাবে জান

আয়নাঘর-পর্ব-(৭)-হুমায়ূন আহমেদ

লিলিয়ান বিস্মিত হয়ে বলল, আজ আপনার জন্মদিন

তাহের বলল, আমি দ্বিতীয় প্রশ্নটির জবাব পেয়ে গেছিআজ যে আমার জন্মদিন তা তুমি জান নাএখন বাকি রইল প্রথম প্রশ্নতুমি প্রশ্নটির জবাব নিয়ে ভাবতে থাকআমি একটু গ্রোসারি শপে যাবঘরে কফি, চিনি, ক্রীম কিছুই নেই। 

আমি কি আপনার এখান থেকে একটা টেলিফোন করতে পারি ? হ্যা পারএকটা লং ডিসটেন্স কল করব| একটা কেন দশটা করতুমি আমার এখানে আসায় আমি নিজে যে কী পরিমাণ খুশি হয়েছি তা কোনদিন তুমি বুঝবে নাপ্রথম দেখাতেই ভালবাসাএই জাতীয় কিছু কথা সাহিত্যে প্রচলিত আছেএই জাতীয় বায়বীয় কথা আমি কখনাে বিশ্বাস করতাম নাতােমাকে ওল্ড ফেইথফুল লেকের কাছে দেখে প্রথম মনে হল সাহিত্যের এই কথাটা মিথ্যা নামেয়েদের পেছনে ঘােরা আমার স্বভাব নয়

আয়নাঘর-পর্ব-(৭)-হুমায়ূন আহমেদ

তারপরেও আমি খুঁজে খুঁজে তােমার অ্যাপার্টমেন্ট বের করেছিঐদিন তােমার সঙ্গে ইউনিভার্সিটিতে দেখা হলতােমার বােধহয় ধারণা পুরাে ব্যাপারটা কাকতালীয়আসলে তা নাআমি প্রায়ই তােমাদের মেমােরিয়াল ইউনিয়নে বসে থাকতাম এই আশায় যে তােমার সঙ্গে দেখা হবেদেখা হলেই বলব, পাশ দিয়ে যাচ্ছিলাম ... কবে কোথায় কোন্ রুমে তােমার ক্লাস তাও আমি জানি প্রমাণ 

লিলিয়ান তাকিয়ে আছে, কিছু বলছে নাতাহের আগের মতই সহজ স্বাভাবিক ভঙ্গিতে বলল, আজ ছিল তােমার টার্ম পেপার জমা দেয়ার শেষ দিন। 

আমি কি ঠিক বলেছি ? লিলিয়ান অন্যদিকে তাকিয়ে হাসলতাহের বলল, আমি কফি নিয়ে আসতে যাচ্ছিআমার আসতে খানিকটা দেরি হবেআমার জন্মদিন উপলক্ষে একটা ভাল 

হােটেলে আমি তােমাকে নিয়ে খেতে যাবদুশ্চিন্তাগ্রস্ত হবার কোন কারণ নেইখাওয়ার শেষে আমি তােমাকে তােমার অ্যাপার্টমেন্টে পৌছে দেবতুমি যে এসেছ এতেই আমি খুশিএর বেশি আমি কিছু আশা করি নিযা হয়েছে তাই যথেষ্টযদিও জানি না ঘটনা এমন কেন ঘটলব্যাখ্যা নিশ্চয়ই আছেতােমার ইচ্ছা করলে তুমি ব্যাখ্যা করবেইচ্ছা না করলে করতে হবে না

আয়নাঘর-পর্ব-(৭)-হুমায়ূন আহমেদ

তাহের ঘর ছেড়ে চলে গেললিলিয়ান উঠে দরজা বন্ধ করলটেলিফোন করল তার মাকেলিলিয়ানের মা আতঙ্ক মেশানাে গলায় বললেন, আমি এর মধ্যে তিনবার তাের অ্যাপার্টমেন্টে টেলিফোন করেছিআমরা চিন্তায় চিন্তায় অস্থির। 

চিন্তার কিছু নেই মাতুই কি গিয়েছিলি কোন ডাক্তারের কাছে?” 

ডাক্তার কি বললেন ? ডাক্তার নতুন কিছু বলে নিআমি যা জানতাম তাই বলেছেনআমি তাের কথা কিছু বুঝতে পারছি নাতুই কি জানতি ? লিলিয়ান হাসলশব্দ করে হাসললিলিয়ানের মা বললেন, কি হল হাসছিস 

হাসি আসছে তাই হাসছি ? তুই এখন কোথায় ? কেন আমার অ্যাপার্টমেন্টেনা, তুই অন্য কোন জায়গায়কি করে বুঝলে ?আমি জানিআমার মন বলছেতুই কি ছেলেটির কাছে? হ্যাকেন ঐখানে কেন? কি হচ্ছে লিলিয়ান ?ভয়ের কিছু নেই মাঅবশ্যই ভয়ের কিছুতুই কেন ছেলের কাছে গেলি?” 

লিলিয়ান খানিকক্ষণ চুপ করে রইলওপাশ থেকে ভদ্রমহিলা বারবার বলতে লাগলেন হ্যালাে হ্যালো। 

মা শােন, আমি খুব সম্ভব এই ভদ্রলােককে বিয়ে করবকি বলছিস তুই ?। 

আমি এখনাে জানি নাভদ্রলােক এখানে নেইতিনি কফি কিনতে গিয়েছেনফিরে এলেই তাঁকে বলব। 

কি বলবি?” 

বলব যে আমি আপনাকে বিয়ে করতে চাইযদি রাজি থাকেন তবেই শুধু আপনার সঙ্গে কফি খাব, এবং রাতে ডিনার করতে যাব

আয়নাঘর-পর্ব-(৭)-হুমায়ূন আহমেদ

হা ঈশ্বর ! মা তুই কি বলছিস? তাের মাথা খারাপ হয়ে গেছে মাআমি নিশ্চিত তাের মাথা খারাপ হয়ে গেছে। 

‘অস্থির হয়াে না মাআমার মাথা খারাপ হয় নিমাথা ঠিক আছেআর এক্ষুণি তােমাদের চিন্তিত হতে হবে নাহয়ত বিয়েতে ভদ্রলােক রাজি হবেন নাহয়ত বলবেন তিনি বিবাহিত। 

লােকটা বিবাহিত কিনা তাও তুই জানিস না?” না।” হা ঈশ্বর ! এসব কি শুনছি! কথায় কথায় হা ঈশ্বর বলবে না মাশুনতে ভাল লাগছে নালিলিয়ান লক্ষ্মী মা তুই দেশে চলে আয়তােকে পড়াশােনা করতে হবে নাকাঁদছ কেন মা! আমি তাে ভয়ংকর কিছু করছি নাতুই তাের পজার চাচার সঙ্গে কথা বলআমি এখন কারো সঙ্গে কথা বলব নাতাের বাবার সঙ্গে কথা বল। বললাম তাে মা, আমি এখন কারো সঙ্গে কথা বলব নাহা ঈশ্বর ! আমি কি শুনছি

লিলিয়ান শান্ত স্বরে বলল, ঈশ্বরের প্রতি তােমার অবিচল ভক্তিকাজেই তুমিধরে নাও যা হচ্ছে ঈশ্বরের ইচ্ছার আগােচরে হচ্ছে না। 

লিলিয়ান মা লিলিয়ান ... টেলিফোন রাখছি মাতুমি ভাল থেকো। 

 

Read more

আয়নাঘর-পর্ব-(৮)-হুমায়ূন আহমেদ

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *